ব্রেক্সিট চুক্তি: ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার সময় পেছানোর অনুমোদন
  2019-03-16 14:42:59  cri

ব্রিটেন সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার সময় পেছানোর অনুমোদন দিয়েছে ব্রিটিশ সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমনস। কিন্তু বিষয়টি কার্যকর হবে কি না—তা নির্ভর করছে ইইউ'র সদস্য দেশগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর। 'ব্রেক্সিট'-এর সময় ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোসংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের ওপর বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর আগে পার্লামেন্টে 'নো ডিল ব্রেক্সিট' প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। নিয়মানুসারে, আগামী ২৯ মার্চ ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাবার কথা। প্রিয় শ্রোতা, বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

যদি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমনসে ২০ তারিখের আগে একটি ব্রেক্সিট চুক্তি গৃহীত হয়, তাহলে ব্রিটিশ সরকার ইইউ'র সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় নিয়ে আলোচনা করবে। তা জুন মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু এটি আসলে হবে কি না—বিষয়টি ইইউ'র সদস্য দেশগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এর আগে হুঁশিয়ার দিয়েছিলেন যে, যদি চুক্তি গৃহীত না হয় তাহলে তিন মাস সময় পিছিয়ে দিলেও তা যথেষ্ট হবে না। একই দিন বিকেলে ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া নিয়ে দ্বিতীয় বার গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ব্রিটিশ সংসদ। ইইউ কমিটি এর আগে জানিয়েছে, সময়সূচি পেছানো হতে পারে কিন্তু তার লক্ষ্য ও অর্থ স্পষ্টভাবে বুঝাতে হবে।

এদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরিসা মে পার্লামেন্ট ও ইইউ-র প্রতি তাঁকে 'আরেকটু সময়' দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আগামী ২০ মার্চ 'ব্রেক্সিট চুক্তি' আবারও পার্লামেন্টে পেশ করার কথাও বলেছেন। চুক্তিটি ইতোমধ্যে দুই-দুইবার পার্লামেন্টে নাকচ হয়েছে। আর নতুন করে প্রধানমন্ত্রী মে ইইউর কাছ থেকে কী ছাড় আদায় করতে পারবেন, বলা মুশকিল। ইইউ'র প্রধান আলোচক মিশেল বার্নিয়ার ইতোমধ্যেই বলেছেন যে, ব্রিটেনের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়েছে; ইইউ আর কোনো ছাড় দেবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে খোদ 'ব্রেক্সিট' হুমকির মুখে পড়েছে। ব্রিটিশ জনগণ ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে। কিন্তু দৃশ্যত ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা সকল কূল রক্ষা করে সে রায় বাস্তবায়ন করতে বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটেন এবং ইইউ—উভয়েই এখন সমস্যার মধ্যে পড়েছে। এ থেকে উত্তরণে শেষ পর্যন্ত উভয়পক্ষের রাজনীতিবিদরা কী করতে পারেন, তা এখন দেখার বিষয়।

গত মঙ্গলবার ইইউ'র সঙ্গে বিচ্ছেদ কার্যকর করতে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে'র চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ৩৯১ জন আইনপ্রণেতা চুক্তিটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। আর পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২৪২ জন। চুক্তিটি পাস না হওয়ার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে চলা সমঝোতার মাধ্যমে বিচ্ছেদ কার্যকরের সব চেষ্টাই আপাত ব্যর্থ হলো। আরও দীর্ঘায়িত হলো ব্রেক্সিট নিয়ে অনিশ্চয়তা।

তবে চুক্তি হোক বা না হোক, আগামী ২৯ মার্চ ইইউ'র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সংসদের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি অন্য দলগুলোর পক্ষ থেকে বিচ্ছেদের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার জোরালো দাবি উঠেছে। এসব দল মে'র ব্রেক্সিট চুক্তি সমর্থন করেনি। ক্ষমতাসীনদের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী অংশটি সম্পাদিত চুক্তির পরিবর্তে চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদ কার্যকরের তোড়জোড় চালাচ্ছে। আগামী ২৯ মার্চ বিচ্ছেদ চান তাঁরা।

এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের সংসদে ২৩০ ভোটের ব্যবধানে ব্রেক্সিট চুক্তি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের আপত্তি ও ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার কারণে যুক্তরাজ্য অনির্দিষ্টকালের জন্য ইইউ আইনের অধীনে আটকা পড়বে। যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ড এবং স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার কৌশলকে বলা হচ্ছে ব্যাকস্টপ।

বিরোধীদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী অংশ সমালোচনা করে বলেন যে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ব্যাকস্টপ বিষয়ে সংশোধনী আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040