১২৩টি দেশ ও অঞ্চল এবং ২৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থা চীনের সঙ্গে 'এক অঞ্চল, এক পথ' সহযোগিতাচুক্তি স্বাক্ষর করেছে (অর্থ-কড়ি; ১৬ মার্চ ২০১৯)
  2019-03-17 20:59:38  cri


১. বেইজিংয়ে চলছে চীনের ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশন। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন (সিপিপিসিসি)-র দ্বিতীয় অধিবেশন। দুই অধিবেশনে অংশগ্রহণকারীরা কীভাবে বেসরকারি খাতের সুষ্ঠু ও উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং করছেন। গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্যরা নিজেদের পরামর্শ দিয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে যে, ব্যক্তি-উদ্যোক্তাদের উত্সাহিত করতে নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানিগুলোর সাধারণত আর্থিক-সংকট থাকে। এটা বিশ্বের যে-কোনো অঞ্চলের জন্যই প্রযোজ্য। চীনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানিগুলোর বেশিভাগই বেসরকারি। চলতি বছরের সরকারি কর্মবিবরণীতে এই কোম্পানিগুলোর স্বার্থে একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, আর তা হচ্ছে: ২০১৯ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত বড় বাণিজ্যিক ব্যাকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানিগুলোকে ৩০ শতাংশ বেশি ঋণ দেবে। এ ব্যাপারে গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য, চায়না ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক কনস্ট্রাকশান অ্যাসোসিয়েশানের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, অর্থনীতিবিদ কু সেং জু বলেন, "আমাদের চলমান আর্থিক ব্যবস্থা কোম্পানিগুলোর কাঠামোর সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এবার সরকারি কর্মবিবরণীতে কমিউনিটি ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে; বলা হয়েছে, আরও বেসরকারি অর্থ দিয়ে কমিউনিটি ব্যাংক স্থাপন করা হবে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানিগুলোকে সমর্থন দেওয়া হবে।"

ব্যাংকগুলো বেসরকারি কোম্পানিকে ঋণ দিতে চায় না। এর মূল একটি কারণ হল, বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ঝুঁকি শেয়ারিংয়ের ব্যবস্থা নেই। এ প্রসঙ্গে, গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য, কুই ইয়াং শহরের উপ-মেয়র ওয়ে তিং হাই বলেন, কুই ইয়াং শহরে জামানতের অর্থের জন্য নিশ্চয়তা তহবিল চালু হবে। তিনি বলেন, "আমরা এখন বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে আরও বেশি সমর্থন দিচ্ছি এবং সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা করছি। কুই ইয়াং সরকার, বিশেষ করে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর পুঁজির সমস্যা সমাধান করে থাকে। এখন আমরা বিশেষ একটি তহবিল স্থাপন করছি এবং এ তহবিলের মাধ্যমে ব্যাংক বেসরকারি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানিগুলোকে ঋণ দিতে পারে। এতে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তাও নিশ্চিত হতে পারে। আমরা সরকার ও কোম্পানির সঙ্গে ঝুঁকি ভাগাভাগি করছি।"

২. চীন বরাবরই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং অভিন্ন কল্যাণের ভিত্তিতে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে আসছে। এতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষই উপকৃত হচ্ছে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত চীনের ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রসের দ্বিতীয় অধিবেশনের সাংবাদিক সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এসব কথা বলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ওয়াং ই বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাব উত্থাপিত হওয়ার ৬ বছর পর তা বিশ্বের বৃহত্তম সহযোগিতামঞ্চে পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ১২৩টি দেশ ও অঞ্চল এবং ২৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থা 'এক অঞ্চল, এক পথ' সহযোগিতাচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। 'এক অঞ্চল, এক পথ' কোনো 'ঋণফাঁদ' নয়, বরং এটা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণের কল্যাণে নিবেদিত; এটা কোনো রাজনৈতিক হাতিয়ার নয়, বরং অভিন্ন উন্নয়নের সুযোগ।

ওয়াং ই আরও বলেন, চীন 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে সকল দেশ ও অঞ্চলের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানায়। চীন বিশ্বাস করে, বিভিন্ন পক্ষের প্রচেষ্টায় 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রাচীনকালের রেশমপথের মতো সমৃদ্ধ হবে এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শক্তিশালী চালিকাশক্তি যোগাবে।

৩. চীনে গেল ফেব্রুয়ারিতে পণ্যের বৈদেশিক বাণিজ্য আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে ১৩.৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে পণ্যের বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৬৬৩৬ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে চীন রফতানি করেছে ১৩৫২৪ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য এবং আমদানি করেছে ১৩১১২ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য।

চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬২২৭২ কোটি মার্কিন ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩.৯ শতাংশ কম। রফতানি ও আমদানি দুটোই কমেছে।

উক্ত দুই মাসে ইইউ, আসিয়ান ও জাপানের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য বেড়েছে যথাক্রমে ৮.৯, ১.৯, ও ৪ শতাংশ। এসময় যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রফতানি কমেছে ৯.৯ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি কমেছে ৩২.২ শতাংশ।

৪. ২০১৯ সালে চীনা অর্থনীতি উন্নয়নের ধারা বজায় রাখবে এবং বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য আরো ভালো বাণিজ্যিক পরিবেশ সৃষ্টি করবে চীনা সরকার। সম্প্রতি চীনের ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনের এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন চীনা জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিটির পরিচালক হ্য লি ফেং।

হ্য লি ফেং বলেন, ২০১৮ সালে চীনের প্রধান অর্থনৈতিক সূচকগুলো ছিল স্বাভাবিক ও যুক্তিসঙ্গত। জিডিপির মোট পরিমাণ ছিল ৯০.০৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ৬.৬ শতাংশ বেশি। জিডিপি প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে চীন গেল বছর বিশ্বের বৃহত্তম পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে প্রথম স্থানে ছিল।

চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৬.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে উন্নত হচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

২০১৮ সালে চীনে বিদেশি বিনিয়োগের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হওয়া এবং বিনিয়োগের পরিমাণ ১৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চীন বিদেশিদের জন্য নিজের অর্থনীতিকে আরও উন্মুক্ত করবে, বিদেশি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ সহজতর করতে উদ্যোগ নেবে।

৫. চলতি বছর চীন বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের জন্য নিজেকে আরও উন্মুক্ত করবে এবং বিদেশিদের জন্য ব্যবসা পরিবেশ আরও উন্নত করতে সচেষ্টা থাকবে। সম্প্রতি চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের উপ-প্রধান নিং চি চে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনের ‌এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, চলতি বছর কৃষি, খনিশিল্প, যন্ত্রনির্মাণ শিল্প ও সেবা শিল্পকে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের জন্য আরও উন্মুক্ত করা হবে। তা ছাড়া, আরও কয়েকটি খাততে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। চলতি বছর চীন 'বিদেশি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে উত্সাহ দেওয়া শিল্পের তালিকা' প্রকাশ করবে বলেও তিনি জানান।

৬. গেল ফেব্রুয়ারিতে চীনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের সরকারি ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ অ্যাসেট বেড়েছে। হংকং মুদ্রা কর্তৃপক্ষ (এইচকেএমএ) সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।

এইচকেএমএ জানায়, ফেব্রুয়ারির শেষে হংকংয়ের সরকারি ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ অ্যাসেট দাঁড়ায় ৪৩৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারে। জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ৪৩২১০ কোটি মার্কিন ডলার।

৭. চলতি ও আগামী বছর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যথাক্রমে ৩.৩ ও ৩.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। সম্প্রতি প্যারিসে প্রকাশিত 'গ্লোবাল ইকোনমিক মিডিয়াম-টার্ম আউটলুক রিপোর্টে' এ পূর্বাভাস দিয়েছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি)। গত বছরের নভেম্বর মাসে এক্ষেত্রে সংস্থার পূর্বাভাস ছিল যথাক্রমে ৩.৫ ও ৩.৫।

রিপোর্টে বলা হয়, বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ এবং ইউরোপের অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে। এ ছাড়া, বিশ্বের আর্থিক বাজার দুর্বল। এসব নেতিবাচক উপাদানের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর নিম্নমুখী চাপ বেড়ে যাচ্ছে।

'ব্রেক্সিট' প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ব্রিটেন পুরোপুরিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইউরোপের একক বাজার থেকে বেরিয়ে গেলে শুধু ব্রিটেনের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, ইউরোপের অন্যান্য দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

৮. বর্তমানে বিশ্বের ৮০ কোটিরও বেশি ডিভাইসে মাইক্রোসফ্টের উইনডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। মাইক্রোসফ্টের লক্ষ্য এই সংখ্যা ১০০ কোটিতে উন্নীত করা। সম্প্রতি মাইক্রোসফ্টের কর্মকর্তা ইউসুফ মেহেদি এক টুইটার-বার্তায় এ তথ্য জানান।

ইউন্ডোজ ১০ রিলিজ হয় ২০১৫ সালের জুলাই মাসে। মাইক্রোসফ্টের লক্ষ্য ছিল তিন বছরে এই অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার ১০০ কোটিতে নিয়ে যাওয়া। তবে, কোম্পানিটি এই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়।

৯. গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের রফতানি-বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গেল ফেব্রুয়ারি মাসেও রফতানি বেড়েছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশের উপরে। দেশটির রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-র হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে তথা জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে সার্বিকভাবে রফতানি বেড়েছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২.৯৮ শতাংশ।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য-রফতানি ছিল ৩৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ ডলারের; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল পূর্বের অর্থবছরের চেয়ে ৫.৮১ শতাংশ।

এদিকে, চলতি অর্থবছর প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৩৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। ইপিবির হিসাব অনুযায়ী, ইতোমধ্যে গত আট মাসে রফতানি হয়েছে ২৭৫৬ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশের রফতানিআয়ের সিংহভাগই আসে তৈরি পোশাক শিল্প খাত থেকে। গত আট মাসে মোট রফতানি-আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশই এসেছে এ খাত থেকে। আলোচ্য সময়ে গার্মেন্টস রফতানি বেড়েছে ১৪ শতাংশেরও বেশি। এই সময়ে গার্মেন্টস পণ্য রফতানি হয়েছে ২৩১৩ কোটি ডলারের।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040