এ প্রসঙ্গে ছেন পিং বলেন, 'বিদেশে লোকশিল্প ও সংস্কৃতি জনপ্রিয় করে তোলা এবং একে সংরক্ষণ করার কাজে সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা হিসেবে আমি আশা করি, চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরো উজ্জ্বল হবে। আরো নির্দিষ্ট বিষয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চীনা সংস্কৃতির আসল মূল্য প্রদর্শিত হবে বলে আমি আশা প্রকাশ করি।'
কিভাবে ভালোভাবে চীনা সাংস্কৃতিক গল্প বলা যায়, তা নিয়ে ছেন পিং বহু বছর ধরে চিন্তা ও গবেষণা করে আসছেন। তিনি মনে করেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' নির্মাণের প্রেক্ষাপটে বিশ্বে চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি তুলে ধরতে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চালাতে চাইলে আধুনিক প্রকাশের পদ্ধতির সঙ্গে উচ্চ ও নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তিনি বলেন, 'অনেক বিদেশির চীনের 'কুংফু পান্ডা' নামের চলচ্চিত্র দেখার পর চীনের ঐতিহ্যবাহী উশু নিয়ে তাদের বাস্তব জানাশোনা সৃষ্টি হয়। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এসব বিদেশি দর্শক জানতে পারেন চীনের ঐতিহ্যবাহী কুংফু বা উশু কি রকম। চীনের সংস্কৃতি হিসেবে কুংফু বা উশু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয়। চীনের বিশাল ভূখণ্ড, সুদীর্ঘকালীন ইতিহাস এবং অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক গল্প ও কিংবদন্তি আছে। চীনের প্রবাদ, উপকথা ও প্রবচন চীনাদের চেতনার বিষয় প্রতিনিধিত্ব করে। এসব বিষয় 'কুংফু পান্ডা'র সঙ্গে মিলিয়ে নির্দিষ্ট বিষয় দিয়ে পণ্যদ্রব্যের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা যায়, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।'
ছেন পিং আরো বলেন, অনেক বিদেশির কাছে চীনের কথা উল্লেখ করলে বেইজিং অপেরা, কুংফু, উশু, পান্ডা ও রাজপ্রাসাদ যাদুঘরসহ বিভিন্ন প্রতীকসম্পন্ন বিষয় তাদের মনে পড়ে যায়। তবে আরো নির্দিষ্ট খুঁটিনাটি সংক্রান্ত বিষয় তাদের কাছে অপরিচিত। তিনি বলেন, 'বিশ্বে আমাদের সাংস্কৃতিক শিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলার সুযোগ আরো অনেক। সাংস্কৃতিক প্রতীক এবং চেতনা সুনির্দিষ্ট বিষয়ে রূপান্তর করে জনগণের জীবনে মেশানো যাবে, এটা আমাদের প্রচেষ্টা চালানোর উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, 'অনেক দ্রব্য নীরবে নিভৃতে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা উচিত্। তাই আমি ভাবছি, ভবিষ্যতে চীনা সংস্কৃতির বিষয় 'মেইড ইন চায়না' দ্রব্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা উচিত্। আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সম্পদ থেকে বাস্তব পুঁজিতে প্রতিফলন ঘটাতে চাই আমি। ব্যাপক লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে এক ধরনের দ্রব্য হিসেবে রপ্তানি করা উচিত্।'
বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ে ছেন পিং দেখেন, চীনা সংস্কৃতি ধীরে ধীরে সাংস্কৃতিক শিল্পে উন্নয়ন হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সাংস্কৃতিক দ্রব্যের খনন ও উদ্ভাবনে ব্যবহার করা হয়, ফলে আরো কাছ থেকে চীনা সংস্কৃতির সঙ্গে সুপরিচিত হতে পারে সারা বিশ্ব। তিনি বলেন, 'যেমন হান সান নামের এক দ্রব্য। এর অর্থ হলো হান রাজবংশের ছাতা। ২০১৮ সালে আমাদের চীনা একটি কোম্পানি এই দ্রব্য আবিষ্কার করে। আফ্রিকাকে সাহায্য করার সময় তারা এমন ধরনের কাগজের ছাতা আবিষ্কার করে। আফ্রিকায় স্থানীয় শিশুরা সূর্যের আলো এড়িয়ে লেখাপড়ার জায়গা পেতে এ ছাতা ব্যবহার করে। তাই এমন ধরনের ছাতা অনেক জনপ্রিয় হয় স্থানীয় শিশুদের মধ্যে।'
এমন ধরনের দ্রব্য সরবরাহের মাধ্যমে আফ্রিকান জনগণ চীনের হান সান সংস্কৃতি জানতে পারেন। অন্যদিকে ছেন পিং মনে করেন, চলচ্চিত্র বা টিভি নাটক তৈরি ও সম্প্রচার হলো চমত্কার ও উষ্ণ সাংস্কৃতিক বিনিময়। তিনি 'দ্যা ওয়ান্ডারিং আর্থ' নামে চলচ্চিত্র থেকে চীনের দর্শন এবং চীনা সংস্কৃতিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার দেখতে পান।
তিনি বলেন, 'আগে চীনের হান রাজবংশের কূটনীতিক চাং ছিয়ান মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া সফরের সময় কিছু উচ্চ মানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দ্রব্য নিয়ে যান। যেমন চীনের দ্রব্য ও রেশম দ্রব্য প্রভৃতি। চীনের উত্পাদিত এসব জিনিস মানবজাতির উন্নয়নে অনেক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমাদের সাংস্কৃতিক শক্তি আমাদের সাংস্কৃতিক দ্রব্যের মাধ্যমে রপ্তানি করা উচিত্ বলে আমি মনে করি।' (লিলি/টুটুল)