কোরীয় জাতি
  2019-03-13 09:00:05  cri

চীনে কোরীয় জাতির লোকসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। মূলত চীনের চিলিন, হেইলংছিয়াং ও লিয়াওনিংসহ উত্তর-পূর্ব প্রদেশে এদের বাস। তিন প্রদেশে কোরীয় জাতির মানুষের সংখ্যা যথাক্রমে ১১ লাখ ৪৫ হাজার, ৩ লাখ ৮৮ হাজার ও ২ লাখ ৪১ হাজার। তা ছাড়া, ১ লাখ ৪৮ হাজার কোরীয় চীনের বেইজিং, শানতুং, অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া, হ্যপেই ও থিয়ানচিনশসহ নানা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি চালু হবার পর, চীনের অর্থনীতির উন্নয়নের সাথে সাথে, আরও বেশি কোরীয় জাতির মানুষ উত্তর-পূর্ব চীন থেকে দক্ষিণ চীনে এবং উপকূলীয় উন্নত এলাকায় স্থানান্তরিত হয়।

চিলিন প্রদেশের ইয়ান পিয়ান কোরীয় জাতিঅধ্যুষিত এলাকা। এটা কোরীয় জাতির স্বায়ত্তশাসিত একটি বিভাগ। বিভাগটি চিলিন প্রদেশের পূর্ব দিকে এবং চীন-রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া সীমান্তে অবস্থিত। স্বায়ত্তশাসিত এই বিভাগের অধীনে ৬ শহর ও ২টি জেলা আছে। বিভাগের আয়তন ৪২.৭ বর্গকিলোমিটার, যা চিলিন প্রদেশের ৪ ভাগের এক ভাগ। চিলিন প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে, ছাং পাই পাহাড়ে অবস্থিত কোরীয় জাতির আরেকটি স্বায়ত্তশাসিত জেলা। ছাং পাই নামের এ জেলায় বসবাস করে ১৩ হাজার ৬ শত কোরীয়।

ছাং পাই পাহাড়ের উচ্চতা ২৭৪৪ মিটার এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সর্বোচ্চ পাহাড় এটি। পাহাড়ের উপরে থিয়ান ছি নামের একটি হ্রদ আছে। এর সুন্দর দৃশ্য দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

ইয়ান পিয়ান কোরীয় জাতির স্বায়ত্তশাসিত বিভাগে বনের আয়তন ৩২ লাখ হেক্টর এবং মোট আয়তনের শতকরা ৮০ ভাগই বনাঞ্চল। ছাং পাই জেলার বনের আয়তন ২৩০ হাজার হেক্টর এবং মোট আয়তনের শতকরা ৮৫ ভাগই বনাঞ্চল। বনে নানা ধরনের পাহাড়ি পণ্য, ওষুধ পাওয়া যায়। কোরীয় জাতিঅধ্যুষিত এলাকা উত্তর চীনে বিখ্যাত একটি ধান উত্পাদন কেন্দ্র। এখানে প্রতিবছর উত্পাদিত তামাকের পরিমাণ ১০ হাজার টনের বেশি।

কোরীয় জাতির নিজেস্ব ভাষা ও অক্ষর আছে। চীনে কোরীয় জাতির মানুষ কাছাকাছি কোরীয় উপদ্বীপ থেকে এসেছে এবং তারা উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। ১৯৮২ সালে যখন চীনে আদম-শুমারি শুরু হয় তখন দেখা যায় যে, ছিং রাজবংশ আমলের শুরু দিক থেকে কোরীয় জাতির পূর্বপুরুষরা চীনে এসে বসবাস শুরু করেন। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে আরও বেশি কোরীয় জাতির মানুষ কোরীয় উপদ্বীপ থেকে চীনে প্রবেশ করে এবং তারা চীনা কোরীয় জাতির মানুষের মূল উত্স।

কোরীয় জাতির মানুষ সাদা রঙের পোশাক পরতে পছন্দ করে। তাই তাদেরকে 'সাদা পোশাকের জাতি' বলে ডাকা হয়। তাদের ঐতিহাসিক খাবার ভাত ও সবজি। তারা ঝাল পছন্দ করে। তারা কাসুন্দি বেশ খায়। চালের গুড়া দিয়ে তৈরি নানা ধরনের রুটি তাদের পছন্দের খাবার। উত্সব বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এমন রুটি বেশ খাওয়া হয়।

কোরীয় জাতির মানুষ পারিবারিক শিষ্টাচারের ওপর বেশ গুরুত্ব দেয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি অনুষ্ঠান হল: শিশুর প্রথম জন্মদিন, বিয়ের অনুষ্ঠান, এবং প্রবীণদের ৬০তম জন্মদিন অনুষ্ঠান। প্রথম জন্মদিনে শিশুর জন্য 'জুয়া চৌ' নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। শিশুর সামনে রাখা হয় নানা ধরনের জিনিষ, যেমন: খাবার, কলম, টাকা, বই ইত্যাদি। শিশু যেজিনিষ প্রথম হাতে নেয়, সেটি একটি অর্থ বহন করে। যেমন, কমল বা বই ধরলে ধারণা করা হয় যে শিশু বড় হয়ে পন্ডিত হবে; যদি শিশুল টাকা ধরে, তবে বিশ্বাস করা হয় যে, সে বড় হয়ে ধনী হবে, ইত্যাদি।

৬০তম জন্মদিও বড় একটি অনুষ্ঠান। প্রতিবেশী, বন্ধু, ও স্বজনরা একসাথে মিলে প্রবীণকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। প্রবীণ টেবিলে সাজানো খাবার সবার মধ্যে বণ্টন করেন। কোরীয় জাতির মানুষ বিশ্বাস করে যে, প্রবীণদের হাতে খাবার খেলে দীর্ঘায়ু হওয়া যায়। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040