বহুপ্রতিক্ষীত ডাকসু নির্বাচন : সোনালী অতীত ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা
  2019-03-10 19:11:14  cri
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তীকালে যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জাতির যে কোনো দুর্দিনে আশার আলো দেখিয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। ঐতিহাসিকভাবে এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের অধিকারী ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়। এর উল্টো দিকও নিশ্চয় রয়েছে। ক্যাম্পাসে প্রভাব-প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগী ছাত্রসংগঠনগুলোর হানাহানি-রক্তারক্তির ইতিহাসও কম নয়। এ সব সত্ত্বেও দেশের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব তৈরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা উজ্জ্বল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর মাধ্যমে তৈরি হয়েছেন বহু ছাত্রনেতা যারা পরবর্তীতে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ ২৮ বছর বন্ধ ছিল ডাকসু নির্বাচন। ডাকসু নির্বাচনের জন্য গত প্রায় তিন দশকে বহু দেনদরবার হলেও নানা কারণে এতদিন পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি এ নির্বাচন। অবশেষে সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১১ মার্চ, সোমবার হতে যাচ্ছে বহুপ্রতীক্ষিত সেই নির্বাচন।

ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিগত কিছু দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ গোটা রাজনৈতিক অঙ্গনই ছিল সরগরম। বিভিন্ন প্যানেলে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা, ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের তর্জনি তোলা- মোট কথা নির্বাচনের সব রকম বিষয়-আশয়ই পরিলক্ষিত হয়েছে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।

সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে একযোগে। ডাকসুর ২৫টি পদের জন্য লড়ছেন ২২৯ জন প্রার্থী। ১৮টি আবাসিক হলে প্রার্থী ৫০৯ জন। প্রতিটি হল সংসদে নির্বাচন হবে ১৩টি পদে। আর ৪৩ হাজার ২৫৬ জন ভোটার প্রত্যেকে ভোট দেবেন ৩৮টি করে।

ডাকসুতে প্যানেল দিয়ে নির্বাচন করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাম সংগঠনগুলোর জোট, কোটা আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ বিসিএল, ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র মুক্তি জোট, জাতীয় ছাত্র সমাজ, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন ও স্বতন্ত্র জোট।

তবে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রলীগ ছাড়া আর কোনো সংগঠনই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পারেনি। ডাকসুর গঠনতন্ত্রে নির্বাচন করার বয়স ৩০-এ বেধে দেয়া এবং ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী ছাত্রসংগঠন অর্থাৎ ছাত্রলীগের দৌরাত্মে হলগুলোতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দেয়া সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেছে ছাত্রদল ও বামসংগঠনগুলো। এ জন্য ডাকসুর গঠনতন্ত্র পরিববর্তন এবং দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকতে অনুপস্থিতি ও কর্মসূচি পরিচালনা না করতে পারাকে দায়ী করেছে ছাত্রদল। বাম ছাত্রসংগঠন সরাসরি এ জন্য দায়ী করেছে ছাত্রলীগকে। এর আগে হলগুলোতে প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগও করেছিল তারা। তবে ছাত্রলীগ বরাবরই এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী এ ছাত্রসংগঠনটি বলছে, কর্মী সংকট এবং জনপ্রিয়তা না থাকার কারণেই হলগুলোতে অন্যরা পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পারেনি। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এর মধ্যে বেশ কিছু হলে কিছু কিছু পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন অনেকে।

ছাত্রদল ও বামছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে হলে ভোট না নেয়া এবং ভোটের সময় বাড়ানোরও দাবি ছিল। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সব দাবি গ্রাহ্য করা হয়নি। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে ছাত্রদল ও বাম ছাত্রসংগঠনগুলো।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ তারা নিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বহুকাঙ্খিত নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। প্রতিবছর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ছাত্রলীগ প্রশাসনকে সব ধরনের সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরদার করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত রয়েছেন। রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, রাজধানীবাসীসহ গোটা দেশের মানুষের প্রত্যাশা দীর্ঘদিন পর হতে যাওয়া ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। ফিরে আসবে ডাকসুর সোনালী অতীত।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040