সিসিলি দ্বীপ ইতালির সর্বদক্ষিণে অবস্থিত এবং ভূমধ্যসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। সিসিলির কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি উচ্চতা এনা (Enna) নামের একটি ছোট পাহাড়ি নগর আছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এনায় 'ইনস্টিটিউট কনফুসিয়ো এনা কোরে' প্রতিষ্ঠিত হয়। সুন আও ইনস্টিটিউটের প্রথম প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দুই বছরে ধরে এখানে কাজ করছেন। এখানে প্রথমে আসার স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, "আসলে শুরুতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ কঠিন ছিল। কারণ, তাঁরা চীনকে তেমন করে জানাতো না। তাঁদের মনে চীন ছিল গত শতাব্দীর ৫০ ও ৬০-এর দশকের চীন। তবে তারা চীন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। এনায় আসার পর প্রথম দিকে তাঁরা জানতো না, আমরা কেন এখানে এসেছি।"
সুন আও ও তাঁর একমাত্র সহকর্মী দ্রুত তাদের কাজ দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মন জয় করেন। তারা তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। দু'জন মিলে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট গড়ে তোলেন। দ্বিতীয় বছরে ইনস্টিটিউটে চীনা ভাষার ক্লাস শুরু হয়। এ ছাড়া, তাঁরা সিসিলিতে ধারাবাহিকভাবে চীনা সংস্কৃতি প্রচারে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেন।
সকাল ১০টায় সুন আও এনা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে এক ছোট থানায় এসেছেন। তিনি স্থানীয় একটি হাই স্কুলে ইনস্টিটিউট উদ্বোধনের দিন অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এ অনুষ্ঠানে চীনা ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি প্রদর্শিত হয়। হাইস্কুলের শিক্ষার্থী আরিয়ানা প্রথমবারের মতো চীনা বুরুশ দিয়ে চীনা ভাষা লেখেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমি চীনা ভাষায় 'নি হাও' লিখেছি। আমি চীনা ভাষা শিখতে চাই। কারণ, চীনা ভাষা এখন বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়।"
২০১৮ সালে 'ইনস্টিটিউট কনফুসিয়ো এনা কোরে' সিসিলি শিক্ষা ব্যুরো ও ৭০টি স্থানীয় বিদ্যালয়ের সঙ্গে চীনা ভাষা শিক্ষা ফেডারেশন গড়ে তোলে। এর মধ্যে একটি হাইস্কুলে স্থায়ী কোর্স হিসেবে চীনা ভাষা কোর্স অন্তর্ভুক্ত হয়। সুন আও এ হাইস্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সামনে চীনা ভাষা কোর্সের পরিচয় তুলে ধরেন। মিষ্টার সালভাতোরের শিশুসন্তান বর্তমানে জুনিয়র তৃতীয় শ্রেণীতে আছে। সন্তানকে চীনা ভাষা শেখানোর আগ্রহ তাঁর। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,"আসলে আমি চীন সম্পর্কে বেশি জানি না।। কিন্তু আমি জানি যে, চীন একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশ। আমি আশা করি, বসন্ত উত্সবসহ চীনা সংস্কৃতি ছাড়াও আমার সন্তান চীনা ভাষা শিখতে পারবে এবং চীনকে আরো ভালো করে জানতে পারবে।"
এনা সিসিলি দ্বীপের কেন্দ্রে অবস্থিত। কিন্তু এনা একটি পাহাড়ি নগর। পরিবহনের অবস্থা ভাল না। তাই, সুন আও ও তাঁর সহকর্মী কাজ করার পাশাপাশি অনেক কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয়। এ সম্পর্কে সুন আও বলেন,"এনায় আসার প্রথম বছরে আমাকে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এখানে বাস খুবই কম। একটি বাসের জন্য এক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। আমাদের ইনস্টিটিউট থেকে বাড়ি যেতে বাসে লাগে দুই ঘন্টা। আরি যদি তুষারপাত হয়, তাহলে আরো বেশি সময় লাগবে।"
ইনস্টিটিউট কনফুসিয়ো এনা কোরে'র অফিসে ফিরে আসার পর সুন আও সহকর্মীদের সঙ্গে বসন্ত উত্সবের অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান, আরো তিন জন সহকর্মী এসেছেন। কিন্তু কর্মীর সংখ্যা যথেষ্ট না। সেজন্য তাঁদের অতিরিক্ত কাজ করতে হবেই। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরে বসন্ত উত্সবের ছুটি নিই না। সাধারণত বসন্ত উত্সবের সময়টা কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। আমরা বসন্ত উত্সবের মাধ্যমে চীনা সংস্কৃতি প্রচার করি। আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করি। সে সব অনুষ্ঠানে আমরা চীনা সংগীত এবং ড্রাগন ও সিংহ নাচ পরিবেশন করি।"
বিকাল চারটায় ক্লাস শুরু হয়। ২০১৭ সাল থেকে ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মানুষ এনায় চীনা ভাষার পরীক্ষা পাস করেছেন। সুন আও সিসিলিতে চীনা ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র, শিক্ষক প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও চীন-ইতালি সাংস্কৃতিক যোগাযোগকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। তিনি বলেন, কাজ করার প্রক্রিয়ায় তিনি গভীরভাবে ভাষা ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যমে মতভেদ দূর করার গুরুত্ব অনুভব করেছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,"আমি সিসিলিতে এক গ্রন্থাগারে এক বইতে পড়েছি যে, চীনা মানুষ কখনো মারা যাবে না। অনেক স্থানীয় বাসিন্দাও আমাকে এ প্রশ্ন করেছিলেন। কিন্তু এটি সত্য না। আমি তাঁদেরকে বিস্তারিত জবাব দিয়েছি। সেজন্য সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও সমঝোতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"
দুই বছরে সুন আও'র অর্জিত সাফল্য কম নয়। বর্তমানে সুন আও সিসিলিতে চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি প্রচারের দূতে পরিণত হয়েছেন। তিনি স্থানীয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বাসিন্দাদের সঙ্গে মৈত্রী গড়ে তুলেছেন। ইনস্টিটিউট কনফুসিয়ো এনা কোরে'র পরিচালক বোর্ডের চেয়ারম্যান কাতালদো সালেরনো চীনা কর্মীদের অনেক প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন,"সুন আও'র উদ্যমী মানুষ। তিনি পরিশ্রম করতে ভালোবাসেন। তিনি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ও সিসিলির বাসিন্দাদের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলেছেন। আমরা চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি শিক্ষার আনন্দন অনুভব করতে পারি।"