সুরের ধারায়--মঙ্গোলীয় গান
  2019-03-07 15:10:32  cri



মঙ্গোলীয় জাতি চীনের ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে অন্যতম। এই জাতি তার যাযাবর সংস্কৃতি ও বৈশিষ্ট্যময় সংগীত ও নাচের জন্য বিখ্যাত। বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের চীনের মঙ্গোলীয় জাতির সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো এবং একসঙ্গে কিছু সুন্দর মঙ্গোলীয় গান শুনবো।

মঙ্গোলীয় জাতি পূর্ব এশিয়ার একটি ঐতিহ্যবাহী যাযাবর জাতি। চীনে তারা প্রধানত ইনারমঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বসবাস করেন। জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি। প্রাচীনকাল থেকে এই জাতি হুলুনপুলর তৃণভূমিতে জীবন কাটিয়ে আসছেন এবং নিজেরা বিশেষ যাযাবর শ্রেণীতে পরিণত হয়েছেন। বিশাল তৃণভূমিতে তাদের বাস এবং এটাই তাদের জীবনের উত্স। তারা তৃণভূমির সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত যে, তৃণভূমি ও তৃণভূমির সবকিছু তাদের রক্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে। তাই তাদের সংগীতে বার বার তৃণভূমির কথা শোনা যায়।

বন্ধুরা, এখন শুনুন একটি সুন্দর গান 'সুন্দর তৃণভূমি, আমার জন্মস্থান'।

তৃণভূমিতে মানুষ ও প্রাণীর সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ। অতীতে গরু ও মেষ খাদ্যের প্রধান উত্স আর ঘোড়া লোকদের যানবাহন। মঙ্গোলীয় লোকের জীবন এসব প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। মেষ চরানোর সময় তারা গান গায়। ঘোড়া চরানোর সময়ও তারা গান গায়। তারা ঘোড়া ও মেষ সম্পর্কিত অনেক গান জানে।

বন্ধুরা, এখন শুনুন মঙ্গোলীয় গায়ক আ ইয়ুন গা'র গাওয়া জনপ্রিয় একটি গান 'ঘোড়ার চলাফেরা'। গানে তৃণভূমিতে ঘোড়া চরানোর দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। প্রফুল্ল সুরে আপনি মঙ্গোলীয় জাতির লোকদের প্রাণশক্তি অনুভব করতে পারবেন।

মঙ্গোলীয় জাতি নাচ-গানে সমৃদ্ধ একটি জাতি। তাদের সংগীতের প্রতিভা যেন সহজাত। প্রায় প্রতিটি লোকই ভালো নাচ ও গান গাইতে পারে। চীনে মঙ্গোলীয় জাতি সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে। তৃণভূমিতে শিল্পী নেই, কারণ প্রতিটি পশুপালকই তো শিল্পী। তাদের গান সাধারণত খুব শক্তিশালী এবং আবেগপূর্ণ; আর তৃণভূমির বিশালতা ও প্রশান্তি, মঙ্গোলীয় মানুষের বিশেষ প্রাণঢালা আতিথেয়তার সঙ্গে জড়িত। বন্ধুরা, এখন মঙ্গোলীয় জাতির বিখ্যাত গায়ক পুরেনপা ইয়ারের একটি জনপ্রিয় গান 'আকাশের দিকে' শুনবো।

মঙ্গোলীয় জাতির গান গাওয়ার একটি অসাধারণ উপায় আছে, তা হলো হুমাই—গলায় একইসঙ্গে দুই বা তিনটি ভিন্ন শব্দ করা। এই বিশেষ গান গাওয়ার পদ্ধতি ১২ শতাব্দী থেকে মঙ্গোলীয় মালভূমিতে প্রচলিত আছে। প্রাকৃতিক শব্দই হলো এই শিল্পের উত্স। মঙ্গোলীয় লোক বিশ্বাস করে, হুমাই হচ্ছে প্রাণী ও প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগের উপায়। বর্তমান হুমাই এক বিশেষ শিল্পকলা হিসেবে বিশ্বের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারে পরিণত হয়েছে। বন্ধুরা, এখন মঙ্গোলীয় জাতির একটি সুন্দর হুমাই গান শুনবো।

মঙ্গোলীয় জাতির একটি বিশেষ বাদ্যযন্ত্র আছে। নাম মা থৌ ছিন। বাদ্যযন্ত্রের ওপরে একটি ঘোড়ার মাথা খোদাই করা হয়, মা থৌ ছিনের নাম সেখান থেকেই এসেছে। এটি এক ধরণের তন্ত্রী বাদ্যযন্ত্র, ঘোড়ার চুল ও কাঠ দিয়ে তৈরি বাদ্যযন্ত্রটি ধনু দিয়ে বাজানো হয়। মা থৌ ছিন মঙ্গোলীয় জাতির মধ্যে খুবই সাধারণ কিন্তু জনপ্রিয় একটি বাদ্যযন্ত্র। এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এটি ঘোড়া দৌড় ও ঘোড়ার ডাক সৃষ্টি করতে পারে। বন্ধুরা, এখন শুনবেন মা থৌ ছিন দিয়ে বাজানো গান 'মঙ্গোলীয় ঘোড়া'। এই গানে শুনতে পাবেন তৃণভূমিতে ঘোড়া দৌড়ের চমত্কার দৃশ্য।

তৃণভূমিতে লোকে নদী ও ঘাসের পরিবর্তন অনুসারে নিজের বাসা স্থানান্তর করে। বিপুল তৃণভূমিতে তারা হয়তো দীর্ঘদিন অন্যান্য লোক দেখতে পারে না। তাই কোনো অতিথি নিজের বাড়িতে আসলে তারা প্রাণঢালা আতিথেয়তা ও অনুরাগ প্রদর্শন করবে। মেষের দূত তৈরি চা ও মদ তো অতিথি অভ্যর্থনার সময়ে প্রয়োজনীয় পানীয়। খেলে তার সুগন্ধ ও মজা স্বাদ নিশ্চয়ই মনে গভীর ছাপ ফেলবে। বন্ধুরা, এখন গান 'মঙ্গোলীয় সুগন্ধ' শুনবো।

বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে আরও একটি সুন্দর মঙ্গোলীয় গান 'উলানবাটরের রাত' শুনবো। 'উলানবাটরের রাত কত শান্ত, কত প্রশান্ত! হাওয়ায় ভূমির ঘ্রাণ ও মানুষের হাসি ভাসছে। অন্ধকার আকাশে চকচকে তারা, ভবিষ্যতের সুখী জীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করছে......' বন্ধুরা, এখন গানটি শোনা যাক।

(তুহিনা/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040