২০১৮ সালের জুন মাসে কেনিয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। কেনিয়া অংশের প্রকল্পব্যয় ধরা হয় ৮৪.২৭ লাখ মার্কিন ডলার। বেইজিং স্টারটাইম সফ্টওয়ার প্রযুক্তি কোম্পানি কেনিয়ার ৪৭টি জেলার ৮শটি গ্রামে টেলিভিশন সরবরাহ করে। কেনিয়ার তথ্য, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তিমন্ত্রী জো মুচেরু প্রকল্পটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন,"আমি চীনা সরকারকে 'আফ্রিকার ১০ হাজার গ্রামে স্যাটেলাইট টিভি প্রকল্প' গ্রহণ করায় ধন্যবাদ জানাই। আমরা চীনের সঙ্গে যৌথভাবে ৮শটি গ্রামকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষ্য ঠিক করেছি। চীনের উদ্যোগে নেওয়া এই প্রকল্প কেনিয়া সরকারকে ৮শটি গ্রামকে স্যাটেলাইট টিভির আওতায় আনতে সহায়তা করবে।"
দু'দেশের প্রায় ৬ মাসের যৌথ প্রচেষ্টায় মন্ত্রী জো মুচেরু'র এ প্রত্যাশ্যা ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে মোটামুটি পূরণ হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি গ্রামে বিনামূল্যে টেলিভিশন সেট, ডিশের লাইন, বিনামূল্যে অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা করা হয়।
উথিরু (Uthiru) গ্রামের বাসিন্দা মাইকেল নং' আং' আ (Michael Ng'ang'a) টেলিভিশন খুলে সোফায় বসে তাঁর দিনের সবচেয়ে উপভোগ্য সময় কাটান। তাঁর আয়ের উত্স পারিবারিক ব্যবসা জুতা মেরামত। স্যাটেলাইট টিভি দেখার সামর্থ্য তার পরিবারের ছিল না। এতোদিন কাজের ফাঁকে জানালা দিয়ে আসা পাখির ডাক শোনাই ছিল পরিবারের সদস্যদের একমাত্র বিনোদন। কিন্তু 'আফ্রিকার ১০ হাজার গ্রামে স্যাটেলাইট টিভি প্রকল্প' বাস্তবায়িত হবার পর তার মতো স্থানীয় বাসিন্দারা বিনামূল্যে ডিজিটাল টেলিভিশন সংকেত গ্রহণ করতে পারছেন। এ সম্পর্কে মাইকেল বলেন,"আগে আমরা টিভি দেখতে পারতাম না। পরিবারের শিশুরা প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে টিভি দেখতো। এখন আমরা স্থানীয় অনুষ্ঠান ছাড়াও, চীনা অনুষ্ঠান দেখতে পারি। আমরা চীনা অনুষ্ঠান দেখতে পছন্দ করি। আমার সন্তানরা চীনা কংফু ও কার্টুন পছন্দ করে। আমরা চীনা কোম্পানিকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।"
গ্রামের বিদ্যালয়, গ্রাম কমিটির কার্যালয় ও চিকিত্সাকেন্দ্রগুলোও এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে। চীনা কোম্পানি ইথিরু'র দু'টি বিদ্যালয়কে টেলিভিশন সেট উপহার হিসেবে প্রদান করেছে। শিক্ষক স্টিভেন বলেন, এর মাধ্যমে শিক্ষার উপায় সমৃদ্ধ হয়েছে। যে শিক্ষার্থীর বাড়িতে টেলিভিশন নাই, সে বিদ্যালয়ে টেলিভিশন দেখতে পারে। তিনি আরও বলেন,"আমি সোহিলি ভাষা ও বিজ্ঞান ক্লাসে সবসময় টেলিভিশন ব্যবহার করে থাকি। আমি এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে বাইরের বিশ্ব দেখাই। শিক্ষার্থীরা টেলিভিশন দেখার মধ্য দিয়ে ক্লাসের অনেক বিষয়ও বুঝতে পারে।"
প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে চীন ও কেনিয়ার মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বেড়েছে। অধিক থেকে অধিকরত স্থানীয় বাসিন্দা টেলিভিশনের মাধ্যমে চীনকে আরো বেশি করে জেনেছেন। পেশাদার প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিলি বলেন, তিনি একজন চীনা কংফুপ্রেমী। তিনি চীনা চলচ্চিত্র দেখতে পছন্দ করেন। তিনি বলেন,"ক্লাসের বিরতির সময় আমরা কংফু চলচ্চিত্র দেখি। ব্রুস লি ও জ্যাকি চান হলেন আমার প্রিয় কংফু স্টার। এ ছাড়াও, আমি চীনা টিভি সিরিজ 'পশ্চিম যাত্রা' দেখতে পছন্দ করি। চীনা চলচ্চিত্রে দেখা যায়, চীন একটি নব্যতাপ্রবর্তন দেশা।"
পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, কেনিয়ার ১৬ হাজার পরিবার ও ২৪০০টি গণসংস্থা এ প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়েছে। এ ছাড়াও, স্টারটাইম কোম্পানি ভবিষ্যতে সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিগ্রামে দু'জন রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ পর্যন্ত কোম্পানিটি মোট ১৬০০ জন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পিটার হলেন তাদের একজন। বর্তমানে তিনি উথিরু গ্রামে টেলিভিশন সংকেত নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি চীনা কোম্পানিকে তাঁর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করায় ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন,"চীনা কোম্পানি সরঞ্জাম মেরামত ও সুরক্ষার প্রযুক্তি আমাকে শিখিয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য কাজ করার পর আমি এখানে বিখ্যাত হয়ে গেছি। আমার চাকরি পাওয়ার সামর্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।"
'আফ্রিকার ১০ হাজার গ্রামে স্যাটেলাইট টিভি প্রকল্প'-এর কেনিয়া অংশের ব্যবস্থাপক লি ওয়েন বো বলেন, চীনা কর্মীরা টেলিভিশন সংকেত কেনিয়ার গরীব ও সাধারণ বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পেরে আনন্দিত। বর্তমান প্রকল্পের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁরা কেনিয়া সরকারকে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে থাকবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,"আমরা আশি করি, স্থানীয় বাসিন্দারা চীন সরকার ও চীনা প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন এবং এতে তাঁদের জীবনমান উন্নত হবে।"