নিমতলী থেকে চকবাজার : পুরান ঢাকায় আগুন বিপর্যয়ের প্রতিকার চায় মানুষ
  2019-03-03 19:20:54  cri

২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে একটি বাড়িতে ফোম তৈরির কারখানায় রাসায়নিক থেকে সৃষ্ট ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন ১২৮ জন মানুষ। সেই আগুনে দগ্ধ হয়ে আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। নিমতলীর সেই ট্রাজেডি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় সেখানকার স্বজন হারানো, আহত মানুষজনকে।

নিমতলী ট্রাজেডির প্রায় ৯ বছরের মাথায় আরেকটি মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষি হলো ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ। এবার দুর্ঘটনাস্থল পুরান ঢাকার চকবাজার। ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চুড়িহাট্টায় ওই অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৭১ জন। মারাত্মক দগ্ধ হয়ে এখনো বেশ কজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এবার আগুনের সূত্রপাত নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। কেউ বলছেন গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লেগেছে, আবার কেউ বলছেন হোটেলের রান্না ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত।

আগুন লাগার কারণ যাই হোক এর ভয়াবহ বিধ্বংসী রূপ ধারন করবার কারণ ওই এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়িক ভবন এমনকি বাসাবাড়িতে পর্যন্ত বিভিন্ন রাসায়নিকের আড়ত ও প্লাস্টিক সামগ্রীর মজুদ। একে তো দাহ্য পদার্থ অন্যদিকে সরু রাস্তাঘাটের জন্য আগুন নেভাতে অসুবিধা- সব মিলিয়ে আরেকটি ভয়াবহ স্মৃতি রেখে গেল দেশাবাসীর মনে।

নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের পর সেখান থেকে রাসায়নিকের গোডাউনসহ দাহ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর দোকানপাট সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন নিমতলীর আগুনের পর সেখান থেকে রাসায়নিকের গোডাউন না সরাতে পারাটা দুর্ভাগ্যজনক- যার মাশুল দিতে হলো এতগুলো প্রাণের বিনিময়ে।

এবার চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের পর সরকার আবার তৎপর হয়েছে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের কারখানা সরিয়ে নিতে। ২৭ ফেব্রুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবদুল হালিম জানান, পুরান ঢাকার সব রাসায়নিকের গুদাম কদমতলী ও টঙ্গীর দুটি জায়গায় সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয় হবে বলে জানান শিল্পসচিব।

এরই মধ্যে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকায় ২১টি কারখানা সিলগালা করে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি টাস্কফোর্স। কারখানাগুলো আবাসিক এলাকার কাছে হওয়ায় এবং বিপুল পরিমান রাসায়নিক মজুদ থাকায় ওগুলো সিলগালা করা হয়।

৩ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আবারো জানিয়েছেন পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদামগুলো অবশ্য সরানো হবে। এ দিন সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদে এ কথা জানান তিনি। রাসায়নিকের কারখানা সরাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন এ ক্ষেত্রে কোনো বাধাই মানা হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রাসায়নিক কারখানা সরাতে একটি নীতিমালা করা হচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী এসব কারখানা সরানো হবে।

তবে এরই মধ্যে গণমাধ্যমে খবর এসেছে রাসায়নিক কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে এবারো ব্যাবসায়ীদের বাধার মুখে পড়েছেন অভিযান পরিচালনাকারীরা। এমনকি তাদের অভিযান বন্ধ করে ফিরে আসতে হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে পুনরায় নিমতলী পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে কিনা চকবাজারের ঘটনাটিও।

সেবারও ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে রাসায়নিকের কারখানা সরাতে পারেনি সরকার। এবার যদিও সরকারের বিভিন্ন মহল বারবার বলা হচ্ছে আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম যে কোনো মূল্যে সরানো হবে- কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হবে কিনা তাই দেখার বিষয়।

চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারকে অর্থসহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে সরকার। এ জন্য অবশ্য সরকার ধন্যবাদ পাবে। নিহতদের স্মরণে পালিত হয়েছে শোক দিবস। কিন্তু জনগণের প্রত্যাশা আর কোনো নিমতলী কিংবা চকবাজার ট্রাজেডির পুনরাবৃত্তি ঘটবে না; অকালে ঝরে যাবে না এতগুলো অমূল্য প্রাণ। পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকার রাসায়নিকে গুদাম ও প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবসা সরাতে সরকার কঠোর হবে –এটা জনগণের প্রত্যাশা।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040