ই জাতির মানুষ মূলত দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের মালভূমি ও দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলবর্তী উপত্যকায় বাস করে। ই জাতিঅধ্যুষিত এলাকায় যেমন রয়েছে ৩০০০ মিটার উচু শীতল পাহাড়ি অঞ্চল, তেমন রয়েছে ১০০০ মিটার নীচু উপত্যকা, যা গরম ও সেখানে বৃষ্টি হয় না। ভিন্ন আবহাওয়ার কারণে তাদের কৃষিপণ্যও নানা ধরনের। ধান, ভুট্টা তাদের মূল ফসল এবং কোথাও কোথাও কলা, আম, লিচুসহ উপক্রান্তীয় ফল পাওয়া যায় এবং কোথাও কোথাও আপেল, ডালিম ও আখ চাষ করা হয়।
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে ই জাতিঅধ্যুষিত এলাকার বনজসম্পদ প্রচুর। যেমন, ইউননান প্রদেশের ছু সিং নামের ই জাতিঅধ্যুষিত এলাকার স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলে বনের আয়তন এক কোটি মু'র বেশি (প্রায় ৬৭ হেক্টর)। তা ছাড়া, ইউননানের হং হ্য, লিয়াং শান এবং কুই চৌর বি চিয়ে, ওয়ে নিংকে সবুজ ধনভান্ডার বলে ডাকা হয়।
ই জাতির মানুষের ভাষা মূলত উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্য—এই ৬টি অঞ্চলে ৬ ধরনের। এই ৬ ধরনের ভাষার মধ্যে আবার ২৫টি আঞ্চলিক ভাষা আছে। ই ভাষা ত্রয়োদশ শতাব্দিতে সৃষ্টি হয় এবং পুরাতন ই ভাষায় ১০ হাজার বেশি অক্ষর আছে। এর মধ্যে হাজারটির বেশ ব্যবহার করা হয়। ৬টি ই ভাষার মধ্যে পার্থক্য বেশি বলে ১৯৭৫ সালে সি ছুয়ান লিয়াং শান ই জাতির স্বায়িত্বশাসিত এলাকা সেং জা নামে একটি ভাষার ভিত্তিতে ৮১৯ অক্ষরের প্রমিত ই ভাষা তৈরি করে এবং ই ভাষার পিনইন তৈরি করে। ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রীয় পরিষদের অনুমোদন পেয়ে এ ভাষা সি ছুয়ান প্রদেশে চালু হয়।
ই জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। শিশুর জন্ম তাদের জন্য বড় একটি ঘটনা এবং নিয়ম অনুযায়ী বেশ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
মেয়ের প্রাপ্তবয়স্ক অনুষ্ঠান অন্য একটি বড় ঘটনা। ই জাতির মেয়েরা প্রাপ্তবয়স্ক অনুষ্ঠান মানে পোশাক পরিবর্তন অনুষ্ঠান। মানে, শিশুর পোশাক খুলে ফেলে বড় মানুষের পোশাক পড়ানো হয়। সাধারণত মেয়ে যখন ১৩, ১৫ বা ১৭ বছর বয়সী হয়, তখন এ অনুষ্ঠান হয়। কেবল নারীরা এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারে এবং কোনো পুরুষ এখানে থাকতে পারে না। গ্রামের প্রবীণ নারী এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
ই জাতির গুরুত্বপূর্ণ উত্সব দুটি: একটি হল ই জাতির নববর্ষ। ই ভাষায় বলা হয় 'খুশি', তবে বিভিন্ন জায়গায় নববর্ষের সময় ভিন্ন। সাধারণত চান্দ্র পঞ্জিকার দশম বা একাদশ মাসের একদিন নববর্ষ পালন করা হয়। অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্সব হল মশাল উত্সব। প্রতিবছরের চান্দ্র পঞ্জিকার ষষ্ঠ মাসের ২৪ তারিখ মশাল উত্সব এবং তিনদিনব্যাপী উত্পাদন অনুষ্ঠান শুরু হয়। উত্সবের সময় মানুষ সুন্দর পোশাক পড়ে নাচগান করে এবং ঘোড়দৌড়, বুল ফাইন্টিং, সুন্দরী প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
এ জাতির বেশিরভাগ প্রাচীন ধর্মে বিশ্বাস করে। তারা বিশ্বাস করে যে, বিশ্বের সবকিছুরই নিজস্ব আত্মা আছে এবং মানুষের মৃত্যু হলেও আত্মা বেঁচে থাকে। তারা আকাশ, মাটি, পানি, পাথর, আগুন, পাহাড়সহ প্রকৃতির নানা বস্তুর পূজা করে। (শিশির/আলিমা)