রোববারের আলাপন-190224
  2019-02-24 16:08:38  cri


আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন 'রোববারের আলাপন'। আপনাদের সঙ্গে আছি এনামুল হক টুটুল এবং শিয়েনান আকাশ।

টুটুল: ভাইয়া, বসন্ত উত্সব শেষ, জোস শেষ, মানে আনন্দ শেষ। জীবনে একটা লক্ষ্য থাকা উচিত, তা না হলে বোরিং লাগে ভাইয়া, 'টুটুল বিরিয়ানি রেস্টুরেন্ট' খুলতে চাই, হাহাহা, জীবনটা পরিবর্তন করতে চাই!

আকাশ: হাহা, সব হবে। জীবনে পরিশ্রম করতে হবে। তাহলে সব পূরণ করতে পারবে। আমি আজ তোমাকে এবং আমাদের ভাইবোনদেরকে একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্পের কথা বলবো, কেমন?

টুটুল: হাহা, খুবই ভালো, কি ভাই?

আকাশ: চীনের তাইওয়ানের চলচ্চিত্র 'সাতেক পালাই'র কথা মনে আছে?

টুটুল: হাহা, অবশ্যই। বন্ধুরা, আমি 'সাতেক পালাই' সম্পর্কিত কিছু তথ্য আপনাদের জানাতে চাই।...

আকাশ: বন্ধুরা, আজ আমরা 'সাতেক পালাই'র মতো অনুপ্রেরণামূলক তাইওয়ানের আরেকটি চলচ্চিত্র আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, কেমন?

টুটুল: দারুণ ভাইয়া

আকাশ:চলচ্চিত্রটির নাম হচ্ছে 'জাম্প! আসিন'। তাইওয়ানের একজন জিমনেস্টিক্স খেলোয়াড়ের জীবনের ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এ

চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়। ওই খেলোয়াড়ের নাম আসিন।

টুটুল: বন্ধুরা, চলচ্চিত্রের কাহিনী আসিনের ছোটবেলা থেকে শুরু হয়। আসিনের বাবা বেঁচে নেই, তার একজন ছোট ভাই আছে, তার পরিবার খুবই গরিব, তার মা ফল বিক্রি করে পরিবারের খরচ বহন করেন।আসিন ছোটবেলা থেকেই জিমনেস্টিক্স খুব পছন্দ করেন। মাঝে মাঝে চুপি চুপি জিমনেস্টিক্স রুমের বাইরে থেকে অন্য খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেখতেন। কোচ এটা দেখে তাকে প্রশিক্ষণে ফ্রি ভর্তি করেন। ভর্তি হওয়ার পর আসিন খুব কষ্ট করে মন দিয়ে জিমনেস্টিক্স শিখতে থাকেন।

তিনি সবসময় সেরা খেলোয়াড় সিও সু'র সাথে প্রশিক্ষণ নেন এবং প্রতিযোগিতা করেন। এভাবে দিন দিন প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন আসিন।

একদিন চীনের ই লান জেলায় জিমনেস্টিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজিত হয়। সেরা খেলোয়াড় সিও সু ইনজুরির কারণে খেলতে পারেন না। এজন্য কোচ আসিনকে সেখানে পাঠান। খেলার আগে কোচ তাকে বলেন, তুমি চর্চার মত করে খেলবে, জয়ের দরকার নেই, শুধু খুব খারাপভাবে না হারলেই চলবে। কিন্তু আসিন খুব ভালো পারফর্ম করেন এবং চ্যাম্পিয়ন হন। সব দর্শক তার জন্য উল্লাস প্রকাশ করেন। তাদের মধ্য আসিনের ছোট ভাইও উপস্থিত ছিলেন।

জিমনেস্টিক্সের প্রতি আসিনের আবেগ অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে। তিনি প্রতিদিন মন প্রাণ দিয়ে চর্চা করতে থাকেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তার এক পা লম্বা ও এক পা ছোট। এ কারণে প্রশিক্ষণে তিনি অনেক কষ্ট পান । আসিনের মা তাঁকে রক্ষা করতে চান। এজন্য আসিনের মা কোচকে আসিনের পায়ের সমস্যার কথা জানান এবং তাকে জিমনেস্টিক্স ছাড়তে কোচকে অনুরোধ করেন।

আসিন কখনোই জিমনেস্টিক্স ছেড়ে দিতে চান না। কিন্তু কোচ তার নাম সরাসরি খেলোয়াড় তালিকা থেকে বাদ দেন। অবশেষে আসিনের মা মোটরবাইকে করে আসিনকে স্টেডিয়াম থেকে বাসায় নিয়ে যান। জিমনেস্টিকের চেয়ে ছেলের সুস্থতা মায়ের কাছে আরো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আসিন মাকে বুঝতে পারেন না। তিনি অনেক রাগ করেন। তিনি মনে করেন, তার মা খুব নিষ্ঠুর ,মা হয়তো ভাবছেন যে আসিন জিমনেস্টিক্স থেকে কোনো টাকা উপার্জন করতে পারছেন না। এজন্য মা তাকে জিমন্যাস্টিক্স ছেড়ে দিতে জোর করছেন এবং তার সঙ্গে ফল বিক্রি করতে বলছেন। আসিন ভাবছেন তার মা তার স্বপ্ন বন্ধ করছেন। এজন্য মায়ের সাথে আসিনের একটি দীর্ঘস্থায়ী ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু হয়।

আকাশ: আসলে যখন আমাদের বয়স কম থাকে, তখন আমরা অনেক ক্ষেত্রে মা-বাবাকে বুঝতে পারি না। আসিন তখন তার মাকে বুঝতে পারেন না। তিনি মনে মনে ভাবেন তার মা শুধু টাকার কথা চিন্তা করেন, এজন্য তাকে জিমনেস্টিক্স বন্ধ করে তার সাথে ফল বিক্রি করতে বলছেন।

তিনি মনে করেন তার মা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছেন। আসলে এটি একদম ঠিক না। জিমনেস্টিক্সের চেয়ে আসিনের সুস্থতা মায়ের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মা আসলে তাকে রক্ষা করতে চান। মা ভাবছেন পরিবারের সবার সুস্থ শরীর এবং শান্তিতে একসাথে জীবন কাটানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এ ব্যাপারে তোমার মতামত কি ভাই?

টুটুল:...

আকাশ: আরেকটি কথা আমি বলতে চাই, আসিন আসলে খুবই সৌভাগ্যবান। তার কোচ তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি তিনি আসিনকে ফ্রি ভর্তি না করতেন, যদি কোচের সাথে আসিনের সাক্ষাত না হতো, তাহলে আসিন তার জীবনের সবচেয়ে পছন্দের জিমনেস্টিক্স চর্চা করার কোনো সুযোগ হয়তো পেতেন না।

আমরা আমাদের জীবনে এরকম লোক কম পাই, যারা বিপদের সময় আমাদেরকে সঠিকভাবে গাইড করেন, নির্দেশনা দেন, তাইনা? কিছু লোক আছেন, যারা বিপদের সময় সত্যিই আন্তরিকভাবে আমাদের গাইড করেন, সাহায্য করেন। আমরা বলতে পারি, তারা আমাদের জীবনটা পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু আমি মনে করি, শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিই সত্যিকারভাবে আমাদেরকে রক্ষা করতে পারে, আর সেই ব্যক্তি হলাম আমরা নিজে।

যখন আমরা ব্যর্থতার সময় বিভ্রান্ত হই, কষ্টে থাকি তখন আমাদেরকে শান্ত থাকতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে, চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের স্বপ্ন কখনোই ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, কখনোই নয়, কখনোই নয়।তাইনা?

টুটুল: .... । বন্ধুরা, মায়ের কারণে জিমনেস্টিক্স ছেড়ে দেবার পর আসিন প্রতিদিন ফলের দোকানে ফল বিক্রি করেন। কিন্তু এই জীবন তিনি একদম পছন্দ করেন না।

তিনি এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাই ফু রাস্তায় প্রতিদিন মাফিয়ার মতো অন্যান্য তরুণদের সাথে মারামরি করেন; সন্ধ্যার সময় তারা মদ খান, ধূমপান করেন। জিমনেস্টিক্সের অভিজ্ঞতা থাকার কারণে মারামারির সময় আসিন সবসময় জয়লাভ করেন। এজন্য তার অঞ্চলে মাফিয়াদের মধ্যে আসিন নতুন স্টার হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আসিনের মনে কোনো সুখ নেই।

একদিন সন্ধ্যায় এক মাফিয়া নেতার ছেলে কয়েকজন বাজে লোককে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে উল্টাপাল্টা কাজ করেন। আসিন এবং তার বন্ধু ছাই ফু সাধারণ মানুষদের রক্ষা করার জন্য তাদেরকে থামাতে যান। এরপর তাদের সাথে মারামারি সময় আসিনকে রক্ষা করার জন্য ছাই ফু মদের বোতল দিয়ে মাফিয়া নেতার ছেলের মাথায় আঘাত করেন। আঘাতের কারণে তার মাথা থেকে অনেক রক্ত বের হয় ও সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আসিন এবং ছাই ফু ভাবেন মাফিয়া নেতার ছেলে মারা গেছেন। তারা প্রতিশোধ নেওয়ার ভয়ে ওই রাতে তাদের জন্মস্থান থেকে পালিয়ে যান। বাড়ি ত্যাগ করার সময় আসিন তার ছোট ভাইকে বলেন, ভালোভাবে মায়ের যত্ন নেবে।

আসিন এবং তার বন্ধু ছাই ফু একসাথে তাইওয়ানের তাইপেইতে পৌঁছান। সেখানে তারা বড় মাফিয়া হয়ে ওঠেন। তারা প্রতিদিন মারামারি করতে থাকেন।এটা হলো আসিনের জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার সময়।

আকাশ: বন্ধুরা, আসলে ভুল এবং সঠিক, ভাল এবং মন্দ, স্বর্গ এবং নরক, সব জিনিসেরই দুটো দিক আছে, অর্থাত্ দুটো অবস্থান আছে। জীবন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ওঠা-নামা করে। তাইনা?

একজন সেরা খেলোয়াড় থেকে তাইপেই'র একজন বড় মাফিয়া হয়ে ওঠেন আসিন। তার মনে সবসময় অনেক কষ্ট থাকে। আমরা তো মানুষ, ভুল তো মানুষই করে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের নিজেদেরকেই আমাদের সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে, নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে, ভুল সংশোধন করার চেষ্টা কতে হবে, উন্নতি করার চেষ্টা করতে হবে, নিজেদের জয় করার চেষ্টা করতে হবে। এটি কখনও কখনও খুব কঠিন। আসলে আমাদের জীবনের একমাত্র শত্রু আমরা নিজেরাই। আবার কেবলমাত্র আমরা নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারি। তাইনা?

টুটুল: ...। এভাবে তাইপেই'র মাফিয়া হিসেবে দিন কাটাতে থাকেন আসিন ও তার বন্ধু। তারা সবসময় উচ্চ ভবনের ছাদে বসে ধূমপান ও মদ পান করেন। তাদের মনে ভীষণ কষ্ট। একদিন, ছাই ফু এক মাফিয়া নেতাকে গোপনে হত্যা করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন।

মাফিয়া নেতার নির্দেশে তার লোক ছাই ফুকে গুলি করে হত্যা করে। আসিন ছাই ফুকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেন না। বৃষ্টিতে আসিন ছাই ফুর লাশ ধরে কাঁদতে থাকেন। এরপর তিনি এ ধরনের জীবন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আবার জিমনেস্টিক্সে ফিরে যেতে চান।

আসিন জন্মস্থানে ফিরে যান। তিনি ক্ষমা চাওয়ার জন্য সরাসরি মাফিয়া নেতার পাশে যান। সেখানে তিনি জানতে পারেন যে, মাফিয়া নেতার ছেলে মারা যান নি। তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আরো সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো যে, ওই মাফিয়া নেতাও তরুণ সময়ে একজন জিমনেস্টিক্স খেলোয়াড় ছিলেন। এজন্য তিনি আসিনকে ক্ষমা করেন এবং তাকে আবার জিমনেস্টিক্সে ফিরে যেতে সমর্থন করেন।

আসিন অবশেষে কোচের কাছে ফিরে যান। তিনি ওই দিন থেকে মন প্রাণ দিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। ওই মাফিয়া নেতা এবং তার ছেলেও একসাথে একাডেমিতে গিয়ে আসিনকে সমর্থন করেন, উত্সাহিত করেন। অনেক কঠোর প্রশিক্ষণের পর আসিন অবশেষে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন।

আকাশ: ভাই, তুমি জানো এখন আসিন কি করছেন?

টুটুল: কি ভাই?

আকাশ: তিনি এখন চীনের তাইওয়ানের তাইপেই জিমনেস্টিক্স দলের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। আসিনের আসল নাম হচ্ছে লিন ইউ শিন। তার জীবনের ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তার ছোট ভাই এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন।

আসিনের গল্প তোমার কেমন লেগেছে ভাই?

টুটুল:...

আকাশ: বন্ধুরা, আমি আশা করি আসিনের গল্প আপনাদের ভালো লেগেছে। এই গল্প আমাদের জীবনে অনেক শক্তি, অনেক উত্সাহ বয়ে আনতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।

টুটুল: প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এখন আমরা একটি গান উপহার হিসেবে আপনাদেরকে শোনাতে চাই। তাইওয়ানের 'মেডে ব্যান্ডদল' গানটি গেয়েছে। গানের নাম 'পিপল লাইফ, ওসান ওয়াল্ড'।

গানটির কথা প্রায় এমন,

একদিন আমি ভাবি, আমি আসলে কি

নাকি আমি বলবো আমি কিছুই না।

প্রতিটি দিন সত্যিই উদ্দেশ্যহীন, কিন্তু এখনও আমি সত্য প্রমাণ করতে চাই

অন্যান্য লোক প্রতিদিন কাজ করে,কিন্তু আমি প্রতিদিন বিপ্লব করতে চাই

এই পৃথিবী আমাকে পরিত্যাগ করলেও আমার সুখ, আনন্দ আমি নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি

তাই আমি বলি, সব যেতে দাও

আমি জানি সমুদ্রের জোয়ার নিচে নামার পর আবার উঠে আসবে, হতাশ হবার দরকার নেই।

আমি প্রায়ই দেখি, আমি সবসময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও, আমার কাজ সবসময় ব্যর্থতার সাথে শেষ হয়।

কিন্তু আমি আমার জ্বলন্ত হৃদয় খনন করতে ভয় পাইনা।

আমার হাতে একটি কয়েন আছে, টস করলে এটি দেখায় যে, আমার ছেড়ে দেওয়া উচিত্

কিন্তু আমার হৃদয় গভীর থেকে বলে, আমার একদম ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।

আমি প্রায়ই চোখ বন্ধ করে সমুদ্রের শব্দ শুনি

মৃদু নীল তরঙ্গ আমাকে বলে,এটা তুমি, কোনো চিন্তা করোনা

এই পৃথিবী আমাকে পরিত্যাগ করলেও আমার সুখ, আনন্দ আমি নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি

তাই আমি বলি, সব যেতে দাও

আমি জানি সমুদ্রের জোয়ার নিচে নামার পর আবার উঠে আসবে, হতাশ হবার দরকার নেই।

আগামীকাল আমি কোথায় যাবো, সেটা কোনো ব্যাপার নয়,

আমি অন্তত আমার সুখ, আনন্দ আমি নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি

তাই আমি বলি, সব যেতে দাও

আমি জানি সমুদ্রের জোয়ার নিচে নামার পর আবার উঠে আসবে, হতাশ হবার দরকার নেই।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040