আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন
  2019-02-23 16:40:21  cri
একুশে কথাটার তাৎপর্য অনেক। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গৃহীত হওয়ায় সেই চেতনার ব্যাপ্তি আরও বেড়েছে। দিবসটির গণতান্ত্রিক তাৎপর্য আরও স্পষ্ট হয়েছে। মহান একুশে মাতৃভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসাকে নবায়িত করে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো- যেমন চীন, জাপান, কোরিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি—সবাই মাতৃভাষাকে আঁকড়ে ধরেই এগিয়েছে। একুশের চেতনা মানে কেবল বাংলাকে ভালোবাসা নয়, প্রত্যেকের মাতৃভাষাকে সম্মান জানানো। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় শুনবনে একুশের চেতনা ও বাংলাদেশের পাশাপাশি পাকিস্তান এবং ভারতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত।

একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও সুপরিচিত। বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক,জব্বার,শফিউল,সালাম,বরকত সহ অনেকেই। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।

একুশের চেতনা মানে অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা। একুশে আঘাত করেছিল সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তানের মর্মমূলে। যে পাকিস্তান কেবল রাষ্ট্রই ছিল না, ছিল একটা ধারণাও। জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী গত বেশ কয়েক বছর ধরে সারা পৃথিবীতেই ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। কিন্তু ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে দেশটির কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করবার দাবীতে ফুঁসে উঠেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। করাচি, ইসলামাবাদ ও লাহোরের মত শহরে ঘটা করেই পালন করা হয় এই দিবসটি। কিছু সেমিনারও হয় সেখানে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু আলোচনাও হয়। কিন্তু কেন ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়, কী ঘটেছিল ১৯৫২ সালের সেই দিনটিতে, সে ব্যাপারে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের এবং স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের স্বচ্ছ ধারণা নেই বলে উল্লেখ করেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। তবে, ১৯৫২ সালে উর্দুর মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা এবং একটি ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে কিছু ধারনা রয়েছে তাদের।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলাদেশসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও বেশ কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

কলকাতাসহ পুরো পশ্চিমবঙ্গে বৃহস্পতিবার ভাষা দিবসে মাতৃভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। এদিন স্মরণ করা হয়েছে মাতৃভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের। দিনটিকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করে নানা অনুষ্ঠানের। ২১শে ফেব্রুয়ারি পার্ক সার্কাস এলাকায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশন গ্রন্থাগার থেকে বের হয় প্রভাতফেরি। উপহাইকমিশনের কর্মকর্তা, কর্মীসহ কলকাতার বিশিষ্টজনেরা প্রভাতফেরিতে অংশ নেন। পরে উপহাইকমিশনে নির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। বিকেলে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

কলকাতার ভাষা শহীদ স্মারক সমিতি কার্জন পার্কে অবস্থিত ভাষা উদ্যানের শহীদ স্মারকে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিনটির সূচনা করে। কলকাতার বিড়লা প্ল্যানেটারিয়াম চত্বরে নির্মিত ভাষা শহীদ উদ্যানের শহীদ মিনারে দুপুর ১২টায় পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ বের করে মশাল মিছিল।

কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী ও শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও দিনটি পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আলপনা আঁকেন সড়কে। যোগ দেন আলোচনা সভা, প্রভাতফেরি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। বিকেলে শান্তিনিকেতনের লিপিকা মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ, চীন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও ইরানের শিক্ষার্থীরা তাঁদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় সংগীত পরিবেশন করেন। এতে যোগ দেন কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কাউন্সিলর শাহনাজ আখতার রানু। এ বছরই প্রথম বাংলাদেশ ভবনে আয়োজন করা হয় একুশের অনুষ্ঠানের।

কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহর ও গ্রামের স্কুল-কলেজেও দিনটি পালিত হয় যথাযোগ্য মর্যাদায়। সীমান্তের বেনাপোল পেট্রাপোল ও দিনাজপুরের বালুরঘাটে দিনটি পালিত হয়।

ভাষা সৈনিক বরকতের বাড়ি মুর্শিদাবাদের বাবলা গ্রামে। সেখানেও দিনটি পালিত হয়। আয়োজন করা হয় প্রভাতফেরি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বরকতের তালিবপুর হাইস্কুলেও আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। এখন অবশ্য এখানে আর থাকেন না ভাষা শহীদ বরকতের পরিবার-পরিজন।

এ ছাড়া ত্রিপুরা, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওডিশা, ছত্রিশগড়সহ বিভিন্ন রাজ্যের বাংলাভাষী অঞ্চলে দিনটি পালিত হয়

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040