'চীনের অর্থনীতি এখনও অনেক শক্তিশালী এবং এর উন্নয়নের সম্ভাবনাও বিশাল'(অর্থ-কড়ি; ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)
  2019-02-23 14:38:52  cri


১. গত বছর চীনের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ১৫৩৬ কোটি মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, একই বছর চীন বিভিন্ন দেশে সরাসরি বিনিয়োগ করেছে ১১২৯ কোটি মার্কিন ডলার। চীনের স্টেট এডমিনিস্ট্রেশান অব ফরেন এক্সচেঞ্জ সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে।

২. জানুয়ারিতে চীনের ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১.৭ শতাংশ বেশি। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এ তথ্য জানিয়েছে।

ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, জানুয়ারিতে দেশে খাদ্যমূল্য বাড়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১.৯ শতাংশ বেশি।

৩. যুক্তরাজ্যে চীনা রাষ্ট্রদূত লিউ শিয়াও মিং বলেছেন, চীনের অর্থনীতি এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী এবং এর উন্নয়নের সম্ভাবনাও বিশাল। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চীনের ভূমিকা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সম্প্রতি 'দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ'-এ প্রকাশিত প্রবন্ধে এ মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্রদূত প্রবন্ধে আরও লেখেন, বিশ্বে বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ ও একতরফাবাদের মতো নেতিবাচক প্রবণতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে অনেক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে কঠিন অবস্থায় পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার চীনা সিদ্ধান্ত কখনও বদলাবে না। চীন নিজের উন্নয়নের প্রতি নজর দেওয়ার পাশাপাশি, বৈশ্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

৪. চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনের স্মার্টফোন শিপমেন্ট হয়েছে ৩২.১৫ মিলিয়ন ইউনিট, যা আগের মাসের চেয়ে ১১.৪ শতাংশ কম। চায়না একাডেমি অব ইনফরমেশান অ্যান্ড কমিউনিকেশান্স টেকনোলজির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, জানুয়ারিতে চীন থেকে যত ফোনসেট শিপমেন্ট হয়েছে, তার ৯৪.৪ শতাংশই স্মার্টফোন। সে হিসেবে জানুয়ারিতে মোট ৩৪.০৫ মিলিয়ন ইউনিট মোবাইল ফোন শিপমেন্ট হয়েছে। এসব মোবাইলের মধ্যে ৯৪.২ শতাংশ চীনা ব্রান্ডের।

৫. ২০১৮ সালে চীনের চিয়াংসু প্রদেশের জিডিপি'র পরিমাণ ছিল ৯.২৬ ট্রিলিয়ান ইউয়ান, যা ২০১৭ সালের চেয়ে ৬.৭ শতাংশ বেশি।

প্রদেশের উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের উপ-পরিচালক ছি বিয়াও বলেন, প্রেসিডেন্ট সি'র নির্দেশনায় চিয়াংসুতে ওয়েবসাইট, ক্লাউড কম্পিউটিং ও বিগ ডেটা শিল্পে সমন্বয়সাধনের কাজ হয়েছে। প্রদেশটি ১৫,০০০ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করেছে ৬ শতাধিক শিল্প-প্রতিষ্ঠানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করার জন্য।

তিনি জানান, ২০১৩ সাল থেকে চিয়াংসু প্রদেশের কৌশলগত নতুন শিল্পের গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশেরও বেশি ছিল। উচ্চ ও নতুন প্রযুক্তি শিল্পে উত্পাদনের পরিমাণও অনেক বেড়েছে।

তিনি আরও জানান, চলতি বছর প্রদেশটির উত্তরাঞ্চলে ৬২০টি গ্রামের রূপান্তর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে এবং তিন বছরের মধ্যে ৩ লাখ গ্রামবাসীর জীবনমান উন্নত হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৮ মার্চ চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ে আয়োজিত দ্বাদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের সম্মেলন চলাকালে চিয়াংসু প্রদেশের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মান বাড়াতে শিল্পকাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে এবং আধুনিক শিল্প-উন্নয়নের নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তখন থেকেই, চিয়াংসুতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের নতুন নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে শুরু করে।

৬. প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নির্দেশনা অনুসারে, গ্রামীণ অর্থনীতিতে সংস্কার কার্যক্রম চালু করে সুফল পাচ্ছে আনহুই প্রদেশ; উপকৃত হচ্ছে গ্রামের মানুষ। সম্প্রতি আনহুই প্রদেশের ফং ইয়াং কাউন্টির সিয়াও কাং গ্রামের বাসিন্দাদের সবাই বোনাস পেয়েছেন। চার সহস্রাধিক গ্রামবাসীর সবাই মাথাপিছু বোনাস পেয়েছেন ৫২০ ইউয়ান করে। সংস্কারের কারণে গ্রামের কালেক্টিভ অর্থনীতিও উন্নত হচ্ছে।

সিয়াও কাং গ্রামের পার্টি-সম্পাদক লি চিন চু জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের চিন্তাধারা অনুসারে, সিয়াও কাং গ্রামে সংস্কারের মাধ্যমে কালেক্টিভ অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটানো হয়। এতে গ্রামবাসী উপকৃত হচ্ছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ দ্বাদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের তৃতীয় সম্মেলন চলাকালে চীনের প্রেসিটেন্ট সি চিন পিং আনহুই প্রদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছিলেন, বিভিন্ন স্তরের পার্টি-নেতৃবৃন্দকে সুশৃঙ্খল ও কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। তিনি গ্রামীণ অর্থনীতির সংস্কারের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

৭. পাকিস্তানের সঙ্গে ২০০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর করেছে সৌদি আরব। সম্প্রতি সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানের ইসলামাবাদ সফরের সময় চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতি অনুযায়ী, সৌদি আরব পাকিস্তানের পর্যটন, খনি, তেল ও কৃষি খাতে এই ২০০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এ চুক্তি কার্যকর করার লক্ষ্যে দু'দেশ একটি যৌথ কমিটি গঠন করেছে। দু'দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের তত্ত্বাবধানে এ কমিটি কাজ করে যাবে।

৮. যুক্তরাজ্যে গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। গত বছর দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১.৪ শতাংশ, যা ২০১২ সালের পর সবচেয়ে কম। ২০১৭ সালে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১.৮ শতাংশ। সম্প্রতি দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর এ তথ্য জানায়।

পরিসংখ্যান বলছে, কারখানার উৎপাদন ও গাড়ির উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণেই অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে অস্থিতিশীলতা ও দুর্বল বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য আগামী বছর প্রবৃদ্ধি আরও কমার আশঙ্কা আছে।

৯. এদিকে, সম্প্রতি ব্রিটেন ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে একটি বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির আওতায় ব্রেক্সিটের পরের দু'বছর দু'পক্ষ পরস্পরকে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সুবিধা দিয়ে যাবে।

এই চুক্তির নাম 'ব্রিটেন-সুইজারল্যান্ড বাণিজ্য ধারাবাহিকতা চুক্তি'। চুক্তিটি ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে 'ব্রেক্সিট' চুক্তির নির্ধারিত অন্তবর্তীকালীন সময়শেষে কার্যকর হবে।

এদিকে, ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্স বলেছেন, দু'দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যই এই চুক্তি তাত্পর্যপূর্ণ।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে দু'দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের মূল্য ছিল ৩২০০ কোটি পাউন্ডের বেশি।

১০. বাংলাদেশ সরকার রাশিয়া থেকে ৫০ হাজার টন গম কিনবে। প্রতিটনের দাম পড়বে ২৯৪.৯৫ ডলার। এতে বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ১২৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সিঙ্গাপুরভিত্তিক অ্যাগ্রো ক্রপ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মাধ্যমে এই গম কেনা হবে। সম্প্রতি ঢাকার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ক একটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

গম কেনাসহ ১ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা ব্যয়ের মোট আটটি প্রস্তাব ক্রয় কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে ৫০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাবও রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ২৫ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনতে ব্যয় হবে ৭০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রতিটনের দাম পড়বে ৩৩৬.২১ মার্কিন ডলার। বাকি ২৫ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে মোংলা বন্দর দিয়ে। প্রতিটন ৩৩৭ দশমিক ২১ ডলার হিসেবে এতে ব্যয় হবে ৭০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সার আমদানির কাজ পেয়েছে পোটন ট্রেডার্স।

১১. বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিদ্যুৎ খাতে চারটি সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরিত হয় আবু ধাবির সেন্ট রেগিজ হোটেলে।

আমিরাতের অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রী সুলতান আল মনসুরির নেতৃত্বে সেদেশের ১৫ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর তাঁর উপস্থিতিতে এই স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়।

সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে—গভর্নমেন্ট অব দুবাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) চুক্তি; বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এমিরেটস ন্যাশনাল ওয়েল কোম্পানির চুক্তি; আমিরাতের রাজপরিবারের সদস্য ও বিনিয়োগকারী শেখ আহমেদ ডালমুখ আল মাখতুম এবং পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি; মাতারবাড়িতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে চুক্তি, যেটাতে সই করেছেন শেখ আহমেদ ডালমুখ আল মাখতুম ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান।

১২. বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের গত দুই মেয়াদে তথা ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে মোট ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৫১৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা রেমিটেন্স এসেছে। সম্প্রতি সংসদকে এ তথ্য জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ।

প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ১৬৮টি দেশে কর্মী পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া, বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিটি উপজেলা থেকে প্রতিবছর গড়ে এক হাজার কর্মী পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫৯ লাখ ৯২ হাজার ১৩২ জন বাংলাদেশি কর্মী গেছেন।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040