তিনি বলেন, 'এখানকার নির্মাণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে এ শহরে ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য আমরা কেউ এ কাজে ঢিল দিতে পারি না।'
লিন ছিউ ফিং হলেন চীনা রাষ্ট্রীয় নির্মাণ প্রকৌশল কর্পোরেশনের (CHINA STATE CONSTRUCTION ENGINEERING CORPORATION) একজন কর্মী। এখন তিনি চিনচিয়াং শহরের দ্বিতীয় ক্রীড়াকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর দায়িত্ব হলো, ২০২০ সালের জন্য স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ করা।
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়; শেষ হবে ২০২০ সালের মার্চ মাসে। দু'বছরের মধ্যে চিনচিয়াং ক্রীড়াকেন্দ্র নির্মিত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে উপকূলবর্তী অঞ্চলে। এখানকার ভূ-প্রকৃতি জটিল। স্টেডিয়ামের ছাদের কার্ভ নকশা করা ছিল নির্মাণ-প্রক্রিয়ার একটি জটিল দিক। যখন ঘূর্ণিঝড় হয়, তখন নির্মাণকাজ এগিয়ে নেওয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়। লি ছিউ ফিং বলেন, চীনের অবকাঠামো নির্মাণের সামর্থ্য বেশি। প্রকল্পে বিআইএম কর্তৃক নির্মিত কাঠামো ও সবচেয়ে আধুনিক থ্রিডি প্রিন্ট প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব প্রযুক্তি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক কঠিন সমস্যার সমাধান দিচ্ছে।
২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর ইতালির সার্দিনিয়া দ্বিপে চিনচিয়াং শহর ২০২০ সালে অষ্টাদশ বিশ্ব মাধ্যমিক বিদ্যালয় গেমসের আয়োজক-শহর হবার গৌরব অর্জন করে। তখন আবেদনকারীরা চীনা জাতীয় পতাকা ধরে, জাতীয় সংগীত গেয়ে আনন্দ করেছিলেন। চিনচিয়াং চীনের একটি ছোট শহর। এটি এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক গেমস আয়োজনের সুযোগ পেলো। এর আগে বার্সেলোনা, শাংহাই, এথেন্স ও দোহায় এই গেমস্ আয়োজিত হয়েছে।
লিন ছিউ ফিং'র সহকর্মী ছাই ওয়েন সি বসন্ত উত্সবের ছুটির মধ্যেও কাজ করে গেছেন। চিনচিয়াং শহরের দ্বিতীয় ক্রীড়াকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগের বহুমুখী সমঝোতা গ্রুপের প্রধান হিসেবে ছাই ওয়েন সি মনে করেন, তাঁর প্রধান কাজ হলো সেবা ও সমঝোতা। স্থানীয় সরকার প্রকল্পের কাজে যথাসাধ্য সাহায্য করে যাচ্ছে।
ক্রীড়াকেন্দ্রে ৫ কিলোমিটারের ফিটনিস ট্রেইল এবং হ্রদ বরাবর এক মিটার প্রশস্ত রাস্তা নির্মিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে কেন্দ্রে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, গণশরীরচর্চা ও বিভিন্ন বিনোদন অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে। ছাই ওয়েন সি মনে করেন, বিশ্ব মাধ্যমিক বিদ্যালয় গেমস আয়োজনের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া গেছে। গেমস আয়োজনের ফলে চিনচিয়াং ও কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দাদের জীবন মান উন্নত হবে এবং ভবিষ্যতে শহরের অবকাঠামো আরও উন্নত হবে।
চিনচিয়াংয়ের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। শহরটি ফুচিয়ান প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। চিনচিয়াংয়ের ছুয়ানচৌ হচ্ছে সামুদ্রিক রেশমপথের আরম্ভবিন্দু। ৪০ বছর আগে চিনচিয়াংয়ে সম্পদের অভাব ছিল। কিন্তু চীনা সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়ার পর, চিনচিয়াং টানা ১৭ বছর ধরে সারা চীনো জিডিপির দিক দিয়ে পঞ্চম থেকে সপ্তম স্থানে থাকছে। এর মধ্যে বেসরকারি অর্থনীতি ও ক্রীড়াশিল্প হলো চিনচিয়াংয়ের বৈশিষ্ট্য। অর্থনীতির উন্নয়নের পাশাপাশি চিনচিয়াং গণজীবিকা, সংস্কৃতি ও শহরে অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে নজর দেয়।
উদিয়ান চিনচিয়াং শহরে অবস্থিত। বসন্ত উত্সবের চতুর্থ দিনে উদিয়ানের সংস্কৃতি-পর্যটন এলাকার ভাইস চেয়ারম্যান চৌ থিয়ান ছি অনেক ভোরে স্থানীয় পুলিশ কার্যালয়ে এসেছেন। তিনি ছুটিতেও পর্যটন-এলাকার নিরাপত্তা-ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। গত বছর লণ্ঠন উত্সবের সময় উদিয়ানে টানা কয়েকদিন পর্যটকের সংখ্যা লক্ষাধিক ছিল।
উদিয়ানে শতাধিক ফুচিয়ানের দক্ষিণাঞ্চলের বৈশিষ্ট্যময় স্থাপত্য রয়েছে। এটি 'দক্ষিণ ফুচিয়ানের প্রাচীন স্থাপত্য যাদুঘর' হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ২০১০ সালের আগে, স্থাপত্যগুলো রূপান্তর ও মেরামত করার আগে, স্থাপত্যগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছিল। কিন্ত স্থানীয় সরকার প্রাচীন স্থাপত্যগুলো রক্ষা করেছে। ২০১৫ সালের মে মাসে শতাধিক স্থাপত্য আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে একটি পর্যটকদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় একটি জায়গা।
৪৩ বছর বয়সী শি চিয়া খুও'র উদিয়ান শহরের বাজারে একটি ছোট খাবার দোকান আছে। তাঁর দোকানের খাবার উদিয়ানে খুবই বিখ্যাত। অনেক পর্যটকও তাঁর দোকানে আসেন।
উদিয়ানে শি চিয়া খুও'র দোকানের মতো পুরাতন বৈশিষ্ট্যময় দোকান অনেক। এ ছাড়া, এখানে ঐতিহ্যবাহী ভবন আছে; আছে ঐতিহ্যবাহী সংগীত। স্থানীয় সরকার সংস্কৃতির উন্নয়ন ও সুক্ষারের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। এখানে ২৪ ঘন্টার বই-দোকান ও পরিদর্শন-ঘর রয়েছে।
বসন্ত উত্সবের সময় উদিয়ানের রাস্তা রঙিন লণ্ঠন দিয়ে সাজানো হয়। হাজার বছর আগে অসংখ্য জাহাজ চীনের বিশ্ববিখ্যাত চা, চীনামাটি ও সিল্ক নিয়ে চিনচিয়াং থেকে সমুদ্রপথে বিদেশে যেত।
সবমিলিয়ে চিনচিয়াং একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে আরও বেশি উন্নত হচ্ছে।