সংবাদ পর্যালোচনা: চীনের বসন্ত উৎসব
  2019-02-15 10:06:24  cri

প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সবাইকে চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা- সিন নিয়েন খোয়ইল্য। চীনা জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব এই ছুন চিয়ে বা বসন্ত উৎসব। এ মুহূর্তে গোটা চীনে চলছে সরকারি ছুটি। গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বসন্ত উত্সবের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই ছুটি শুধুই কর্মক্ষেত্রে- ব্যক্তি জীবনে নয়। আর তাইতো নানা রকম ঐতিহ্যিক অনুষ্ঠান এবং পারিবারিক কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন চীনের শতকোটি মানুষ। প্রিয় শ্রোতা, বসন্ত উত্সব নিয়ে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় থাকছে বিস্তারিত।

চীনের ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুযায়ী চীনের বসন্ত উৎসব চীনের চান্দ্রবর্ষের শেষ মাসের ২৩তম দিন থেকে নতুন বছরের প্রথম মাসের ১৫তম দিন পর্যন্ত চলে। সেই হিসাব অনুযায়ী এটি চলতি বছর ৪ঠা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৫ দিন পর্যন্ত। অবশেষে ১৫তম দিনে অনুষ্ঠিত হবে লন্ঠন উৎসব। সব মিলিয়ে বসন্ত উৎসব উদযাপিত হয় প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে। এই সময়ের মধ্যে উৎসবের আগের দিন অর্থাৎ পুরনো বছরের শেষ দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন বা উৎসবের প্রথম দিন হচ্ছে বসন্ত উৎসবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিন।

চীনা চান্দ্রবর্ষের শেষ মাসের শেষ দিনের সন্ধ্যাকে 'ছুসি' বলা হয়। তাই ছুসি'র অর্থ বছরের শেষ রাতকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো। বছরের শেষ খাওয়া বা 'নিয়ান ইয়ে ফান' সম্পন্ন করা ছুসি'র কার্যক্রম শেষ করা হয়। হাজার বছরের ঐতিহ্য অনুযায়ী এ বছরও চীনার ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ছুসি উদযাপন করেছেন।

বসন্ত উৎসবকে সামনে রেখে চীনের শহর ও পল্লী অঞ্চলের অধিবাসীরা নানা ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ করেন। চীনের গ্রামাঞ্চলে প্রস্তুতির কাজ বছরের শেষ মাসের প্রথম দিকেই শুরু হয়ে যায়। কৃষকরা বাড়িঘর পরিষ্কার করেন, লেপ-তোশক-কাঁথা-বালিশ ধুয়ে দেন, নিজেদের খাওয়া ও মেহমানদারির জন্য বাজার থেকে বসন্ত উৎসবের খাবার সংগ্রহ করেন। এসব খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিষ্টিজাতীয় খাবার, কেক, ফলমূল, মাছ-মাংস ইত্যাদি। বড় বড় শহরগুলোতে উৎসবের অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। সাংস্কৃতিক বিভাগ ও শিল্পীরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে টেলিভিশন কেন্দ্রে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চীনাদের বসন্ত উৎসব উদযাপনের পদ্ধতির অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। এখন উৎসবের ছুটিতে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বসন্ত উৎসবের সময় চীনারা গোটা বছরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কেনাকাটা করেন।

বসন্ত উত্সবের অসংখ্য রীতিনীতি ও অনুষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিবারের সঙ্গে মিলন। চীনের একটি প্রবাদে বলা হয়, "টাকা-পয়সা থাকুক বা না-থাকুক বসন্ত উত্সবের সময়ে বাড়ি ফিরতেই হবে"। আর কর্মস্থল থেকে চীনাদের বাড়ি ফেরার সময়টিতে বিশ্বের বৃহত্তম মানুষের মাইগ্রেশন বা স্থানান্তর ঘটে থাকে। এসময় বাস, ট্রেন, বিমানের সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। তাই সড়কপথে মোটরসাইকেলে চেপে বাড়ির পানে ছুটতে দেখা যায় অসংখ্য চীনা মানুষকে। লাখ লাখ মোটরসাইকেলে করে 'নাড়ির টানে বাড়ি' ছুটে যায় অসংখ্য মানুষ।

উৎসবের সময় পরস্পরকে উপহার দেওয়া হয়। তবে সাধারণ উপহারের পাশাপাশি বসন্ত উৎসবে চীনারা লাল খামে ভরে শিশু, তরুণ ও বন্ধুদের টাকা দেয়। চীনারা লাল খামকে বলে 'হোং পাও।' চীনা সংস্কৃতিতে লাল রং সৌভাগ্যের প্রতীক। লোকেরা হোং পাও দেওয়ার মাধ্যমে শিশুদের ওপর থেকে অকল্যাণ দূর করা এবং নতুন বছর সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কামনা করে। বর্তমানে চীনাদের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডিজিটাল হোং পাও দেওয়ার রীতি চালু হয়েছে। তবে ডিজিটাল হোক বা প্রকৃত লাল খাম হোক, হোং পাওতে দেওয়া টাকাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়; গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের শুভকামনা!

এ বছর চীনসহ বিশ্বের যেসব স্থানে চীনা মানুষ রয়েছেন তারা সবাই সাধ্যমত বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছেন এবং সবার প্রতি শুভকামনা জানিয়েছেন। নতুন বছর চীনা জাতির কল্যাণের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের সবার কল্যাণ হোক- সে কামনা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি এখানেই। সঙ্গে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040