প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় ২৮ বছর বয়সী চীনা স্বেচ্ছাসেবক-শিক্ষক কুও ই চুন তাঁর চীনা ভাষা ক্লাস শুরু করেন। তিনি মিয়ানমারের শিক্ষার্থীদের চীনা ভাষা শেখান। যদিও তিনি খুবই কঠোর, তবুও শিক্ষার্থীরা তাঁকে খুবই পছন্দ করে।
সাংবাদিক: তিনি কি ভাল শিক্ষা দিচ্ছেন?
শিখার্থীরা: খুবই ভাল। আমরা চীনা ভাষা শিখতে চাই। আমরা তাঁর ক্লাসে যেতে পছন্দ করি। আমরা এইচএসকে'র ষষ্ঠ পর্যায় পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি।
কুও ই চুন ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর বিদেশে চীনা ভাষা শিক্ষা দিতে থাকেন। প্রথমে তিনি থাইল্যান্ডে ছিলেন, এখন মিয়ানমারে আছেন। তিনি সেদেশের রাজধানীতে যাননি, দরিদ্র ও প্রতিকূল পরিবেশের শহর পাথেইনে এসেছেন। বোশেং ভাষা ও কম্পিউটার বিদ্যালয় পাথেইন শহরের কেন্দ্রীয় স্থানে, চীনের ফুচিয়ান প্রবাসী সমিতির তিন তলা ভবনে অবস্থিত। কুও ই চুন'র ক্লাস ও বাসস্থান দ্বিতীয় তলায়। তাঁর বাসকক্ষটি মাত্র ১০ বর্গমিটার আয়তনের এবং অবস্থাও ভাল না। প্রায়শই বিদ্যুৎ থাকে না। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমার বাসকক্ষটির অবস্থা খারাপ। কিন্তু আমার জন্য এটি সমস্যা না। এখানে টেপের পানির সাপ্লাই নেই এবং সবসময় বিদ্যুতের সমস্যা লেগেই থাকে। এসব সমস্যা আমি মেনে নিয়েছি।"
তাঁর ছোট বাসকক্ষের সবচেয়ে পরিস্কার হচ্ছে একটি ছোট টেবিল। টেবিলে তাঁর আইপ্যাড, পিসি, কিন্ডাল ইত্যাদি রাখা আছে। তিনি বলেন, এ ছোট টেবিল হলো তাঁর ছোট বিশ্ব। তিনি বলেন, "আমার ছোট ঘরটিতে অনেক মশা আছে। আমি সবসময় মশারির ভিতরে থাকি। এ টেবিল হল আমার ছোট বিশ্ব।"
এখানকার অবস্থা থাইল্যান্ড ও ইয়াংগুনের চেয়ে খারাপ। অবশ্যই চীনের চেয়ে আরো বেশি খারাপ। কিন্তু কুও ই চুন এখানে তিন বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি জানালেন, এখন পর্যন্ত আনন্দের সাথেই কাজ করছেন। তিনি একজন পুরাতন প্রফেসর দ্বারা প্রভাবিত। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আসলে একজন চীনা প্রবাসী আমাকে নিয়ে ইয়াংগুন থেকে পাথেইনে আসেন। পাথেইনে আসার আগে আমি ওই প্রফেসরের সঙ্গে কথা বলেছি। তখন আমার মনে হলো, তিনি এত বয়স্ক হয়েও শিক্ষকতার জন্য ইয়াংগুন ও পাথেইনের মধ্যে যাওয়া-আসা করছেন। আমি তাঁকে অনেক সম্মান করি। তিনি প্রতিমাসে চীনা ভাষা শেখানোর কাজে অর্থ যোগান দিয়ে থাকেন। আমার মনে হয়, চীনা সংস্কৃতি প্রচারের ক্ষেত্রে তাঁর কাজের ইতিবাচক তাত্পর্য রয়েছে।"
কুও ই চুন'র বয়স্ক প্রফেসর হলেন সু ফু শুন। তাঁর বয়স ৭৫ বছর। যদিও সু ফু শুন'র বয়স বেশি, তবুও তিনি কুও ই চুন'র সঙ্গে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। তিনি বলেন, "আমার নাম সু ফু শুন। আমার বর্তমান বয়স ৭৫ বছর। আমার পূর্বপুরুষের বাড়ি চীনের ফুচিয়ান প্রদেশে। আমার বাবা ফুচিয়ান থেকে মিয়ানমারে এসেছিলেন। আমি মিয়ানমারে জন্মগ্রহণ করি। ২০১০ সালে পাথেইনে চীনা প্রবাসী নেতা চীনা ভাষার ক্লাস খোলার উদ্যোগ নেন। ফুসিং কনফুসিয়াস ক্লাসরুম আমাদেরকে সহায়তা করে। তিন জন চীনা শিক্ষক ইয়াগুন থেকে আমাদের বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। আমরা নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করি।"
সু ফু শুন'র প্রতিষ্ঠিত বোশেং চীনা ভাষা ও কম্পিউটার বিদ্যালয়ে মোট চার জন চীনা শিক্ষক আছেন। কিন্তু আসলে বিদ্যালয়ের মুনাফা প্রায় শূন্য। কোন কোন সময় সু ফু গুন নিজে খরচ দেন। কিন্তু সু ফু শুন বলেন, আরো বেশি মানুষ চীনা ভাষা শিখবে, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চীনের দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অধিক থেকে অধিকরত বিদেশি মানুষ চীনা ভাষা শিখতে শুরু করেছে। সু ফু শুন বলেন, "চীনা অর্থনীতির উন্নয়ন ও মিয়ানমারের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করার পাশাপাশি, চীনা ভাষা ব্যবহারের সুযোগও বাড়ছে। আগে আমাদের মাত্র ৩০ জন শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু বর্তমানে আমাদের শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।"
এ সম্পর্কে কুও ই চুন বলেন, "বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উদ্যোগে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ চালু হবার পর থেকে বিদেশে চীনা ভাষা শিখতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বর্তমানে চীনা অর্থনীতি দ্রুত উন্নত হচ্ছে। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে বিনিয়োগকারী চীনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বাড়ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমার মাতৃভূমির শক্তিশালী অবস্থান অনুভব করা যায়।"
রাত ৯টায় কুও ই চুন'র ক্লাস শেষ হয়। তিনি তখনই পরের দিনের ক্লাশের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তিনি চীনা ভাষা শেখানোর পাশাপাশি মিয়ানমারের শিক্ষার্থীদের চীনা রীতিনীতি ও সংস্কৃতিও শিক্ষা দিচ্ছেন। এ বছরের বসন্ত উত্সব হল কুও ই চুন'র পাথেইনে কাটানো তৃতীয় বসন্ত উত্সব। তিনি আমাদের বেতারের মাধ্যমে তাঁর দাদি, বাবা ও মাকে বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানাতে চান। তিনি বলেন, "আমি ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর চীনে আর বসন্ত উত্সব কাটানোর সুযোগ পাইনি। আমি থাইল্যান্ডে দু'বার বসন্ত উত্সব কাটিয়েছি এবং এখনে তৃতীয় বসন্ত উত্সব কাটাচ্ছি। বিদেশে পাঁচটি বসন্ত উত্সব কেটেছে আমার। আমিও বাড়িতে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু আমার কাজ আছে, আমি যেতে পারি না। আমি দাদি, বাবা ও মায়ের যত্ন নিতে চাই। আমি আমার পরিবারের সদস্যদেরকে বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানাই।"