প্রসঙ্গ: চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মুখে মাটি ও মানুষের গল্প
  2019-02-03 10:40:13  cri

 


লিয়াং চিয়া হ্য চীনের উত্তর-পশ্চিম মালভূমিতে অবস্থিত একটি ছোট্ট গ্রাম, যেটি শা'নসি প্রদেশের ইয়ান আন শহরের মধ্যে পড়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর ১৫ থেকে ২২ বছর বয়সে এই গ্রামে কাটিয়েছেন। তখন তিনি গ্রামীণ চীনকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেন।

২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ওয়াশিংটনে স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় একটি কমিউনিটির যৌথ উদ্যোগে তাঁর সম্মানে আয়োজন করা হয় একটি সংবর্ধনানুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মার্কিন বন্ধুদের সামনে একটি গল্প বলেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি বলেন-

"গত শতাব্দীর ষাটের দশকের শেষ দিকের কথা। আমার বয়স তখন ১৫ বছর। আমি বেইজিং থেকে চীনের শা'ন সি প্রদেশের ইয়ান আন শহরের লিয়াং চিয়া হ্য গ্রামে যাই কৃষকের কাজ করতে। সেখানে আমি ৭ বছর কাটিয়েছি। পরে আমি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র লিয়াং চিয়া হ্য গ্রামের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করি। তখন আমি আশা করতাম যে, গ্রামের মানুষ তিনবেলা খাবার পাবে এবং অন্তত একবার মাংস খাওয়ার সুযোগ পাবে।"

হ্যাঁ, ওই সময়টা ছিল চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের পরিণত হয়ে ওঠার। ১৯৬৯ সালে ১৫ বছর বয়সী সি চিন পিং তখনকার ১৭ কোটি তরুণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে শহর ত্যাগ করে গ্রামীণ জীবন শুরু করেন। ৭ বছরের কঠিন সংগ্রামের ফলে, একজন 'বেইজিং কিশোর' থেকে সি চিন পিং পরিণত হন একজন পেশীবহুল যুবকে। লিয়াং চিয়া হ্য গ্রামের ৬৩ বছর বয়সী শি ছুন ইয়াং এভাবেই স্মরণ করেন সে কথা-

"বাঁধ নির্মাণের জন্য, শীতকালের প্রচণ্ড ঠাণ্ডায়, সি চিন পিং কোনো কথা না-বলে, খালি পায়ে ঠাণ্ডা পানিতে দাঁড়িয়ে কাজ

করতেন। অসুখ-বিসুখের আশঙ্কা করতেন না তিনি।"

পরে পত্রিকায় সি ছুয়ান প্রদেশের একটি গ্রামে বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মাণের খবর পেয়ে সি চিন পিং নিজ খরচে সেখানে যান এবং বায়োগ্যাসের ওপর জ্ঞান অর্জন করেন। ফিরে এসে তিনি লিয়াং চিয়া হ্য গ্রামে শা'ন সি প্রদেশের প্রথম মিথেন গ্যাস আধার নির্মাণ করেন। এ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট সি বলেন-

"আধার নির্মাণের কাজটা সহজ ছিল না। শুরুতে দেখা গেল, মিথেন গ্যাসের আধারের দুই পাশের পানি বেড়ে গেছে, কিন্তু গ্যাসের খবর নেই। বার বার ব্যর্থ হয়েছি গ্যাস পেতে। এর মধ্যে আমার সারাশরীর মলমূত্রে একাকার। অবশেষে সফল হয়েছি এবং সাফল্যের আনন্দে হয়েছি আত্মহারা।"

লিয়া চিয়া হ্য গ্রামের পাহাড় ও পানি এবং গ্রামের প্রত্যেক পরিবার সি চিন পিংয়ের পরিচিত। ২০১৫ সালের বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে তিনি এই গ্রাম পরিদর্শনে যান। যাদের সঙ্গে তিনি কিশোর বয়সে বসবাস করেছেন, তাদের অনেককেই তিনি চিনতে পারলেন, তাদের নাম ধরে ডাকলেন।

এ সম্পর্কে ওয়াশিংটনের ওই অনুষ্ঠানে চীনা প্রেসিডেন্ট সি বলেন-

"লি চিয়াং হ্য তখন আর আগের মতো নেই। অনেক বদলে গেছে। রাস্তাগুলো পাকা হয়েছে; গ্রামবাসীরা টাইল দিয়ে তৈরি ঘরে বাস করছেন। এখন সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন; প্রবীণরা মৌলিক স্বাস্থ্যবীমার আওতায় এসেছেন; কৃষকরা এসেছেন চিকিত্সাবীমার আওতায়; শিশুরা শ্রেষ্ঠ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। আর হ্যাঁ, মাংস খাওয়া এখন গ্রামবাসীদের জন্য সাধারণ ব্যাপার। আমি তখন আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করলাম যে, 'চীনা স্বপ্ন' আসলে চীনা জনগণের স্বপ্ন। চীনাদের সুখী জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না-হলে, এই 'চীনা স্বপ্ন' পূরণ সম্ভব নয়।" (ওয়াং হাইমান/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040