সংবাদ পর্যালোচনা: চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ পরিস্থিতি
  2019-02-02 10:55:07  cri

ফেব্রুয়ারি ২: ২০১৮ সালের পুরোটা জুড়ে বিশ্ব বাণিজ্যে আলোচনার উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছিলো চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ বা ট্রেড ওয়ার। এরপর নতুন বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের জন্য সাময়িক 'যুদ্ধ বিরতি' বাস্তবায়ন করে দুই পক্ষ। বিরতি সময় কোনোরকম শুল্ক আরোপ করা হবে না বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। নিজেদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বৈঠকে বসেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যেই দু'দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক সংঘাত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে। এর মধ্যেই ধারাবাহিক 'শান্তি বৈঠক' শুরু হয়।

প্রিয় শ্রোতা আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় শুনুন চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য।

গোড়ার দিকে মেধাসম্পদ চুরিকে কেন্দ্র করে মূলত দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। সেই দ্বন্দ্বই রূপ নেয় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যযুদ্ধে। গেল বছরের জানুয়ারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সোলার প্যানেল আমদানিতে শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর সরাসরি খড়্‌গ নামে চীনের ওপরও। পহেলা মার্চে চীনের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্য আমদানিতে শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। বছরজুড়ে চীনের অন্তত ২৫ হাজার কোটি ডলার রফতানি পণ্যে শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্র!

যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী এ পদক্ষেপের পাল্টা জবাব দেয় বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের ১১ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে শুল্ক বসায় চীন। এরপর আরও ২৬ হাজার ৭শ' কোটি ডলারের চীনা পণ্যে শুল্কারোপের কথা থাকলেও আলোচনার ভিত্তিতে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমঝোতায় না আসলে পূর্বে উল্লেখিত শুল্ক ব্যবস্থা কার্যকর হবে ২০১৯ সালেও।

নিজেদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে জানুয়ারিতে বৈঠকে বসেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। দু'দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক সংঘাত বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। এ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে অনেক দেশে। তবে আশার বিষয় হলো, এর মধ্যেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দু'দেশ।

চীনের সরকারি উপদেষ্টা জানান, "উপমন্ত্রী পর্যায়ের এই বৈঠকে সব সমস্যা সমাধান হবে না। তবে দুইপক্ষই তাদের দাবিগুলো উত্থাপন করতে পারবে।"

হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাণিজ্যিক ভারসাম্য রক্ষায় সব পক্ষই এখন সমাধান খুঁজছে।

বৈঠককে সামনে রেখে চীন কিছু নমনীয় পদক্ষেপ নেয়। চীন মার্কিন গাড়ি আমদানিতে শুল্ক বাতিল করেছে এবং সে দেশ থেকে ফের সয়াবিন আমদানি শুরু করেছে। এ ছাড়া নতুন প্রস্তাবে প্রযুক্তিখাতেও শুল্ক বাতিলের পরামর্শ দিয়েছে তারা।

আগামী ১ মার্চ এর সমাধান বাস্তবায়ন করতে একমত হয়েছে দুই পক্ষই। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ষষ্ঠবারের মতো অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সমাধান বেরিয়ে আসবে। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ জুলিয়ান ইভানস প্রিচার্ড বলেন, দু'পক্ষের মধ্যে কী পরিমাণ দূরত্ব রয়েছে তা নিয়ে অবশ্য উদ্বেগ রয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিল্পনীতি এবং মেধা সম্পত্তির অধিকার অর্জন।

চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'সাময়িক বাণিজ্যিক যুদ্ধ বিরতি' চলছে। বাণিজ্যযুদ্ধ চীনের অর্থনীতিকে হয়ত মন্দার দিকে নিয়ে নিয়ে যাবে না, কিন্তু এটা অবশ্যই বিপুল বেগে সামনে অগ্রসরমান পরিস্থিতির জন্য বাধার কারণ হবে। উন্নয়নের গতি ধীর হয়ে যাবে। 'গ্রোথ ডাটা' গত সপ্তাহে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে দেখা যায়- ১৯৯০ সালের পর এটাই চীনে সবচেয়ে কম গ্রোথ রেট।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাপের মধ্যে রয়েছে একটা চুক্তি করার জন্য। চীনে যেসব মার্কিন কোম্পানি রয়েছে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্কের কুপ্রভাব নিয়ে অভিযোগ করেছে। কারণ, অ্যাপল, ফোর্ডের মতো অসংখ্য মার্কিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির কারখানা চীনে অবস্থিত। তাই চীন থেকে রপ্তানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বসালে মূলত মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকেই বাড়তি শুল্ক দিতে হয়! তাই সেসব কোম্পানি চাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন একটা ভালো চুক্তি করে।

বাস্তবতা হলো, বিশ্বের পরাশক্তিগুলো যতক্ষণ একে অপরের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করবে, বৈশ্বিক ভোক্তাদের তত বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে। এতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর শুল্ক বিভাগ লাভবান হলেও কম লাভ করবে উৎপাদক কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর তার নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমে যাবে।

মোহাম্মদ তৌহিদ

চীন আন্তর্জাতিক বেতার।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040