চীনের সহায়তায় নির্মিত 'আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলপথ' চালু হওয়ার পর বিগত এক বছরে স্থানীয় নাগরিকদের জীবনমানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। রেলপথটি স্থানীয় অঞ্চলের পরিবহন-ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। রেলপথটি চারটি দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে।
'আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলপথ'-টি মোট ৭৫২.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। রেলপথে ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে পারে। চীনা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিসিইসিসি) ও চীন রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি) যৌথভাবে রেলপথটি নির্মাণ করেছে। রেলওয়েইটি ইথিওপিয়া ও জিবুতির রাজধানীদ্বয়কে সংযুক্ত করেছে। এটি হল আফ্রিকার প্রথম আধুনিক বৈদ্যুতিক রেলওয়ে। রেলওয়েইটি ২০১৮ সালের পয়লা জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। রেলওয়েই চালু হওয়ার পর দু'দেশের মধ্যে স্থলপথে যাতায়াতের সময় এক সপ্তাহ থেকে দশ ঘন্টায় নেমে আসে। রেলওয়েইর টিকিটের দাম বিমানের চেয়ে অনেক কম। ট্রেনে চড়া বাসের চেয়ে আরামদায়ক। সেজন্য রেলওয়েইটি স্থানীয় নাগরিকদের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত 'আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলপথ' প্রায় ১.৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে। আদামু হলেন 'আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলপথ'-এর একজন নিয়মিত যাত্রী। তিনি বলেন, "'আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলপথ' একটি আধুনিক বৈদ্যুতিক রেলওয়ে। এটি ইথিওপিয়া, এমনকি সমগ্র আফ্রিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু যে ইথিওপিয়ার পরিবহন সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখছে, তা নয়; বরং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও কল্যাণকর প্রমাণিত হবে।"
'আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলপথ' ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা পরিকল্পনা কোম্পানির বাজার বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা লি শুয়াং ছং বলেন, আসলে রেলওয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার আগে, ২০১৬ সালে ইথিওপিয়া সরকারকে হাজার হাজার টন খাদ্যশস্য পরিবহন করতে হতো। রেলওয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার পর ইথিওপিয়ার জন্য খাদ্যশস্যের পাশাপাশি রাসায়নিক সার পরিবহনও সহজতর হয়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "ইথিওবিয়া একটি জনবহুল দেশ। কিন্তু খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। ইথিওপিয়া একটি ল্যান্ডলকড দেশ। তাই দেশটির ওপর পণ্য পরিবহনের চাপ খুবই বেশি। কিন্তু আমাদের নতুন রেলওয়েই দিয়ে অনেক মাল পরিবহন দ্রুত করা যায়। এটি খাদ্যশস্যের পরিবহন-সমস্যার সমাধান করেছে।"
ইথিওপিয়া হল আফ্রিকার দ্বিতীয় জনবহুল দেশ। অসুবিধাজনক পণ্য পরিবহনব্যবস্থা ছিল দেশটির অর্থনীতির উন্নয়নের পথে বড় বাধা। এদিকে ইথিওপিয়াকে জিবুতি'র বন্দর ব্যবহার করে পণ্য বাইরে পাঠাতে হয়। 'আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলপথ' চালু হওয়ার পর ৪৪,৫৮০টি কনটেইনারে ৫১,৫২৫ টন পণ্য পাঠানো সম্ভব হয়। এ সম্পর্কে সিসিইসিসি'র ইথিওপিয়া শাখার জেনারেল ম্যানেজার লি চি ইউয়ান বলেন, "অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এক রেলওয়েই নির্মিত হওয়ার মাধ্যমে একটি অর্থনৈতিক এলাকা গড়ে উঠেছে। এ পর্যন্ত এই পথের ধারে প্রায় ১০টি শিল্পক্ষেত্র নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় শিল্পের ওপর রেলওয়েই'র প্রভাব স্পষ্ট। বিশেষ করে রফতানিভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রেলপথের ভূমিকা অনস্বীকার্য।"
'আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলপথ' স্থানীয় নাগরিকদের জন্য অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ৩ শতাধিক স্থায়ী কর্মী রেলওয়েই প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। আব্রাহাম ফিন্যাত গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর 'আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলপথ' ব্যবস্থাপনা গ্রুপে যোগ দেন। একজন চীনা সংস্কৃতিপ্রেমী হিসেবে তিনি হান ভাষা শিখছেন। তিনি বলেন, "আমাদের দেশে অনেক শিক্ষার্থীর জন্য কাজ পাওয়া কঠিন। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর সময়মতো 'আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলপথ' নির্মাণে অংশ নেই। আমি খুবই ভাগ্যবান। আমি চীনা সংস্কৃতি আরও বেশি বেশি জানতে চাই এবং ইথিওপিয়া-চীন মৈত্রী জোরদার করার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে চাই।"
'আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলপথ' ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা পরিকল্পনা কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগের উপপরিচালক হ্যে চিয়ান বলেন, "আমাদের শ্রোগান হচ্ছে: নির্মাণ, চালু ও মুনাফা। আমরা রেলওয়ে ব্যবস্থাপনার পাশপাশি চীন-আফ্রিকা মৈত্রী জোরদার করার কাজ করে যাচ্ছি।"