0202jingji
|
১. গতবছর বিশ্বের জাহাজ নির্মাণশিল্পের শীর্ষ স্থানটি ধরে রেখেছিল চীন। ২০১৮ সালে চীনা কোম্পানিগুলো বিশ্বের মোট নতুন জাহাজের ৪৩.২ শতাংশ তৈরি করে, যা আগের বছরের চেয়ে ৪১.৯ শতাংশ বেশি। চায়না অ্যাসোসিয়েশান অব দা ন্যাশনাল শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বের এক নম্বর স্থানটি প্রথম দখল করেছিল চীন।
২. চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং সম্প্রতি বেইজিংয়ে বেশ কয়েকজন বিদেশি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে এক আলোচনাসভায় বলেন, চীন সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাবে এবং উন্মুক্তকরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। অন্য দেশের ভালো পণ্য ও প্রযুক্তির চীনের বাজারে প্রবেশকেও বেইজিং স্বাগত জানায়।
চীনের চান্দ্রপঞ্জিকার নতুন বছর উপলক্ষ্যে চীনা প্রধানমন্ত্রী দেশে কর্মরত বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ওই আলোচনাসভায় অংশ নেন। আলোচনাসভায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রিটেন, কিউবা ও সুউইডেনসহ বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় তাঁরা আলাদাভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নব্যতাপ্রবর্তন, পরিবেশ সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন।
৩. চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি সম্প্রতি 'বিদেশি বিনিয়োগ আইনের খসড়া' দ্বিতীয়বারের মতো পর্যালোচনা করেছে। এক মাস আগে প্রথম পর্যালোচনাটি হয়েছিল।
এদিকে, সিআরআই এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, এতে তাড়াতাড়ি এ আইন কার্যকর করার চীনা ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে। চীন উন্মুক্তকরণকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, চীন ইতোমধ্যেই তার বাজারকে বিদেশিদের জন্য আরও উন্মুক্ত করেছে। এতে চীনে বৈদেশিক বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়।
৪. ২০৩৭ সালে চীনের বেসামরিক বিমান কোম্পানিগুলোর যাত্রীসংখ্যা ১৬০ কোটিতে উন্নীত হবে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশান (আইএটিএ) সম্প্রতি এ পূর্বাভাস দিয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, ২০২৪-২০২৫ সময়কালে চীন বিশ্বের বৃহত্তম বেসামরিক বিমান চলাচল বাজারে পরিণত হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে চীনের বেসামরিক বিমান কোম্পানিগুলো ৬১ কোটি যাত্রী পরিবহন করেছে।
৫. চীনের ক্রেডিট রেটিং মার্কেটে ব্যবসা করার সুযোগ পেল যুক্তরাষ্ট্রের এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল ইন্টারন্যাশনাল। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক 'পিপলস ব্যাংক অব চায়না' কোম্পানিটিকে এ সংক্রান্ত অনুমোদন দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিবৃতিতে পিপলস ব্যাংক অব চায়না আরও জানিয়েছে, চীনের ক্রেডিট রেটিং শিল্পকে ধীরে ধীরে আরও উন্মুক্ত করা হবে। এতে আরও বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন বিদেশি কোম্পানি এ খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে।
৬. চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে'র বিরুদ্ধে মার্কিন আইন মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেং শুয়াং সম্প্রতি রাজধানীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে হুয়াওয়েসহ চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দমনমূলকনীতি বাদ দিতে হবে।
কেং শুয়াং বলেন, মার্কিন আইন মন্ত্রণালয় হুয়াওয়ে এবং এর ভাইস চেয়ারম্যান ও সিএফও মেং ওয়ানচৌ'র বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে, যার ওপর চীন সরকার কড়া নজর রেখেছে। চীন সরকার বরাবরই চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্য দেশের আইন মেনে চলতে এবং অন্যান্য দেশকে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সমআচরণ করতে আহ্বান জানিয়ে আসছে।
মুখপাত্র আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরে নির্দিষ্টভাবে কিছু চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত হেনে চলেছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধ কার্যক্রম দমনে সক্রিয় আছে। এর পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র কাজ করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
৭. শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার নতুন মহাসচিব ভ্লাদিমির নোরোভকে অভিনন্দন জানিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া ছুন ইং সম্প্রতি বেইজিংয়ে নিয়মিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান।
হুয়া ছুন ইং বলেন, ভ্লাদিমির নোরোভ উজবেকিস্তানের প্রবীণ কূটনীতিবিদ। গত জুন মাসে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার ছিংতাও শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে সংস্থাটির সদস্যদেশসমূহ তাঁকে মহাসচিব পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে তাঁর ওপর সদস্যদেশগুলোর আস্থা প্রতিফলিত হয়েছে।
চীনা মুখপাত্র আরও বলেন, বর্তমানে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সামনে নতুন নতুন সুযোগ আসছে। নতুন মহাসচিব তাঁর কার্যমেয়াদে এসব সুযোগ গ্রহণে সচেষ্ট থাকবেন বলে চীন আশা করে।
৮. গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে চীন সার্বিকভাবে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। দেশটি ইতোমধ্যেই এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যাতে এর উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া অদূর ভবিষ্যতে নতুন এক পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে। সম্প্রতি চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই)-এর এক সম্পাদকীয়তে এ মন্তব্য করা হয়।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি গ্রহণের পর বিগত ৪০ বছরে চীনের শ্রমবাজারসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আন্তর্জাতিক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলে দেশটিতে দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ন বাস্তবায়িত হয়। তা ছাড়া, ইতোমধ্যেই চীন উচ্চগতির প্রবৃদ্ধি অর্জনের পুরাতন ধারণা থেকে সরে এসে, উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে শুরু করেছে। উন্মুক্তকরণের প্রক্রিয়াকে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করতে এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং খাতে সংকট দেখা দেওয়ার পর থেকেই চীন নিজস্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারপ্রক্রিয়া উন্নত করার দিকে মনোযোগ দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বিদেশ থেকে সেবা ও পণ্য আমদানির প্রক্রিয়া সহজতর করা।
৯. এদিকে, বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের ২০১৯ সালের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন গত ২৫ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে শেষ হয়। বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোর্গে ব্রেন্ড সমাপনী অনুষ্ঠানে বলেন, চলতি বছরের সম্মেলনে বড় সফলতা অর্জিত হয়েছে, নানান ক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে, এবং বিশ্বের পরিস্থিতির উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে—এমন একটি বিশ্ব কাঠামো তৈরি করা খুবই জরুরি। সকল পক্ষ মিলেই কেবল এমন একটা কাঠামো তৈরি করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, এবার সম্মেলনে শান্তিপূর্ণ, সহনশীল ও টেকসই উন্নয়নের নতুন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩ সহস্রাধিক অতিথি এতে অংশগ্রহণ করেন।
১০. ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ অধিকাংশ দেশ ও অঞ্চলের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমবে। এক্ষেত্রে, প্রবৃদ্ধি ৩.০ শতাংশ ছাড়াবে, যা গত দু'বছরের ৩.২ শতাংশের তুলনায় কম। যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাক্স সম্প্রতি এ পূর্বাভাস দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ওয়াং শেংজু সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ উন্নত অর্থনৈতিক সত্ত্বার অর্থনীতিতে প্রত্যাশার চেয়ে অধিক হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ২.৫ শতাংশ, যা ২০১৮ সালের ২.৯ শতাংশের তুলনায় কম; ইউরো অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি হবে ১.৫ শতাংশ, যা গত বছরের ১.৯ শতাংশের তুলনায় কম; জাপানের প্রবৃদ্ধি হবে ১.১ শতাংশ, যা গত বছরের ০.৯ শতাংশের তুলনায় বেশি। তা ছাড়া, ২০১৯ সালে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৬.২ শতাংশ।
১১. ই-কমার্স নিয়ে আলোচনায় বসবে চীনসহ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ৭৬টি সদস্যদেশ। গত ২৫ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত ই-কমার্সবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেং শুয়াং বলেন, এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অধিকাংশ সদস্যদেশ বহুপক্ষবাদ সমর্থন করে। চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে, সকল সদস্যদেশের সঙ্গে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাঠামোতে, ই-কমার্স নিয়ে আলোচনা করবে।
১২. মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পার্লামেন্টের দুটি পার্টির নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি দেশটির ফেডারেল সরকারের অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে একমত হন। মতৈক্য অনুসারে, ফেডারেল সরকারের অচলাবস্থা অন্তত আগামী ৩ সপ্তাহর জন্য কাটবে।
গত ২৫ জানুয়ারি ছিল ফেডারেল সরকারের অচলাবস্থার ৩৫তম দিন। এ দিন হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে তিনি অস্থায়ী অর্থ বরাদ্দ আইনে সই করবেন এবং ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এ সময়কালে পার্লামেন্টের সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের দু'পার্টির সংসদরা কমিটি গঠন করে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক অর্থ বরাদ্দ নিয়ে পরামর্শ করবেন।
ট্রাম্প হুমকি দেন যে, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পার্লামেন্টের সঙ্গে উপযুক্ত চুক্তিতে পৌছাতে না-পারলে ফেডারেল সরকার আবারও অচল হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
১৩. মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি তিনটি রুশ কোম্পানির ওপর আরোপিত অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
যে তিনটি কোম্পানির ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া হলো সেগুলো হচ্ছে: ইউনাইটেড কোম্পানি রাসাল, ইএন প্লাস গ্রুপ, ও জেএসসি ইউরোসিবএনারগো। তবে, আরেকটি কোম্পানি 'দেরিপাসকা'র ওপর অবরোধ অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের এপ্রিলে, মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও অন্যান্য অপতত্পরতার অভিযোগে, এই চারটি রুশ কোম্পানির ওপর অবরোধ আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
(আলিমুল হক)