২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বরে বেইজিংয়ে আয়োজিত চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়ার ৪০তম বার্ষিকীর সম্মেলনে মার্কিন কুন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও চীনবিশেষজ্ঞ রবার্ট লরেন্স কুন চীনের সংস্কার মৈত্রীপদক অর্জন করেন। মোট দশ জন বিদেশি বন্ধু এ পদক লাভ করেছেন। এ সম্পর্কে রবার্ট লরেন্স বলেন, এটি শুধু যে তাঁর নিজের মর্যাদা তা নয়, তাঁর পদকপ্রাপ্তি থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, আন্তর্জাতিক বিনিময়ের ওপর চীন গুরুত্বারোপ করে। তিনি বলেন, "এ পদক বিরাট মর্যাদার, যা আমাকে বিস্মিত করেছে। চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণনীতি কার্যকর হওয়ার ৪০তম বির্ষিকী উপলক্ষে এ পদক লাভ করে আমি গর্বিত। বর্তমানে চীন আন্তর্জাতিক বিনিময়ের ওপর অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। চীন ইতিবাচকভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে অংশগ্রহণ করছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। চীন বিশ্বের সামনে উন্নয়নের নিজস্ব ধারণা তুলে ধরছে।"
রবার্ট লরেন্স বলেন, কয়েক দশক ধরে তিনি চীনের অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের সাক্ষী। এ জন্য তিনি অনেক গর্ব করেন। সম্প্রতি চীনা সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়ার ৪০তম বার্ষিকীর সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভাষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, "প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ৪০তম বার্ষিকী হল একটি মাইলস্টোন, বরং একটি ভিত্তি। এতে অর্জন ও চ্যালেঞ্জ—দুটোই রয়েছে। তাঁর এবারের ভাষণ ভবিষ্যতে চীনে আরেক ধাপ সংস্কার জোরদার ও উন্মুক্তকরণ বাড়ানোর জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছে। তাঁর ভাষণে আগের অর্জনকে তুলে ধরা হয়েছে এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন-পরিকল্পনা পেশ করেছে।"
১৯৮৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিখ্যাত মার্কিন স্নায়ুবিজ্ঞানী ও বিনিয়োগ ব্যাংকার রবার্ট লরেন্স চীনের আমন্ত্রণে চীনে আসেন। তিনি বলেন, তখন তিনি চীন সম্পর্কে খুব কম জানতেন। তখন চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি মাত্র কার্যকর হওয়া শুরু হয়। বিভিন্ন মহলের চীনা মানুষ নিজেদের জীবনমান উন্নয়নে তখন প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। চীনা মানুষ তখন বিশ্বের সঙ্গে মিলিত হতে মরিয়া। তিনি মনে করেন, চীনের উন্নয়ন অবশ্যই সামগ্রীকভাবে বিশ্বেরআ ওপর গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং ফেলবে।
এরপর বিগত ৩০ বছরে রবার্ট লরেন্স বহুবার চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আসা-যাওয়া করেছেন। তিনি আধুনিক চীনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের সাক্ষী। তিনি চীনা নীতি ও নিয়ম শেখার চেষ্টা করেছেন এবং শিখেছেন। তিনি চীনা নেতা, বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, পন্ডিত, শ্রমিক, কৃষক ও শিক্ষার্র্থীসহ বিভিন্ন মহলের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার মাধ্যমে চীনের উন্নয়ন-ধারাকে আরও গভীরভাবে জেনেছেন।
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে রবার্ট লরেন্স বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য দেশগুলোর গণমাধ্যমগুলোর খবরে আসল চীন উঠে আসছে না। তিনি নিজের চেষ্টায় বিশ্বের সামনে আসল চীনকে তুলে ধরার কাজ শুরু করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমি আসল গল্প পড়ে শোনাতে থাকি। আসলে সত্যি গল্প পড়া আরও কঠিন ও জটিল। আসল চীনাকে তুলে ধরতে গিয়ে আমাকে নানান সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কিন্তু আমি আমার বক্তব্য স্পষ্টভাবে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা অব্যাহত রাখি। অনেকে মনে করতেন, আমি চীনের পক্ষের লোক। আসলে আমার লক্ষ্য ছিল, আসল গল্প বলা, বিশ্বের সামনে সত্যিকারের চীনকে তুলে ধরা।"
রবার্ট লরেন্স সিএনএন, বিবিসি ও ব্লুমবার্গ নিউজ'র ভাষ্যকার ছিলেন। তিনি 'চীনা নেতারা কিভাবে চিন্তা করেন?' ও 'চীনের ৩০ বছর: মানবজাতির মহান পরিবর্তন'সহ ধারাবাহিক বই এবং 'চীনের সামনে চ্যালেঞ্জ' ও 'চীনের কাছে যাবো' নামের ধারাবাহিক ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেন। তাঁর ডকুমেন্টারি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে অনেক জনপ্রিয় এবং চীনা তথ্য পুরস্কার ও মার্কিন এমি পুরস্কার লাভ করেছে।
রবার্ট লরেন্স বলেন, তিনি বর্তমানে চীনের 'দারিদ্র্যবিমোচন' নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করছেন। এতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে চীনের মহান সাফল্য বর্ণনা করা হবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমার দৃষ্টিতে চীনের দারিদ্র্যবিমোচন-প্রক্রিয়ার গল্প একটি আকর্ষণীয় গল্প। কিন্তু বর্তমানে পাশ্চাত্য দেশগুলো এর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে না।"
তিনি আরও বলেন, আগে তাঁর চীনা গল্প বলার লক্ষ্য ছিল বিশ্বের সামনে আসল চীনকে তুলে ধরা। ভবিষ্যতেও তিনি আসল চীনের গল্প বলে যাবেন। তিনি বিশ্বাস করেন, চীন কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অব্যাহতভাবে উন্নত থেকে উন্নততর হবে।