'চীন চলতি বছরেও বৈদেশিক বাণিজ্যে মানসম্পন্ন প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে' (অর্থ-কড়ি; ২৬ জানুয়ারি ২০১৯)
  2019-01-26 18:41:05  cri


১. চীনে পর্যটন ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট শিল্পে মূল্যসংযোজন প্রবৃদ্ধির গতি ২০১৭ সালে আগের বছরের চেয়ে ১২.৮ শতাংশ বেশি ছিল। দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরো সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে।

ব্যুরোর তথ্যানুসারে, ২০১৭ সালে চীনের পর্যটন ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট শিল্পে মোট মূল্যসংযোজন (ভ্যালু অ্যাডেড) হয়েছে ৩.৭২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ৫৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৭ সালে দেশের জিডিপি'তে এই খাতের অবদান ছিল ৪.৫৩ শতাংশ, যা আগের বছরের চেয়ে ০.০৮ শতাংশ বেশি।

পর্যটন খাতগুলোর মধ্যে বিনোদন-সেবা খাতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, ১৭.২ শতাংশ।

২. বহির্বেশ্বের বিভিন্ন অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও, চীন চলতি বছর বৈদেশিক বাণিজ্যে মানসম্পন্ন প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে এবং এক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ব্যাপারে দেশটি আস্থাশীল। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ কথা বলেছে।

মন্ত্রণালয়ের মু্খপাত্র কাও ফেং বেইজিংয়ে এক নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়ন শক্তিশালী ও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপরই থাকবে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৃহত্তর সমর্থন দিয়ে যাবে বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে চীনের মোট আমদানি-রফতানির পরিমাণ ছিল রেকর্ড ৩০.৫১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (৪.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা আগের বছরের চেয়ে ৯.৭ শতাংশ বেশি।

৩. ২০১৮ সালের নভেম্বরে হংকং মোট পণ্য রফতানি করেছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২.৯ শতাংশ কম এবং আমদানিও করেছে ১.৮ শতাংশ কম। হংকংয়ের সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান বিভাগ সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।

বিভাগ জানায়, ২০১৮ সালের প্রথম ১১ মাসে আগের বছরের একই সময়কালে চেয়ে মোট পণ্য রফতানি বাড়ে ৬.২ শতাংশ এবং আমদানি বাড়ে ৭.৪ শতাংশ।

৪. এদিকে, ২০১৮ সালে চীনের চিয়াংছু প্রদেশের মোট আমদানি-রফতানির পরিমাণ ছিল রেকর্ডভঙ্গকারী। নানচিং শুল্ক বিভাগের হিসেব অনুসারে, গত বছর প্রদেশটির মোট আমদানি-রফতানির পরিমাণ ছিল ৪.৩৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ৬৪,৬৬০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৯.৫ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রফতানি বেড়েছে ৮.৪ শতাংশ এবং আমদানি বেড়েছে ১১.৩ শতাংশ।

উল্লেখ্য, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চিয়াংছুর বাণিজ্যিক লেনদেন বরাবরই ভালো। গত বছর চিয়াংছুর সঙ্গে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের ১৬টি দেশের বাণিজ্য বাড়ে ১৪.৩ শতাংশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের সঙ্গে বাড়ে ১২ শতাংশ, এবং পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ে ১০.৪ শতাংশ।

৫. চলতি বছরের মধ্যেই তিব্বতের সকল গ্রাম ও জেলাকে সড়ক যোগাযোগের আওতায় আনা হবে। সম্প্রতি তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পরিবহন বিভাগের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সীমাবদ্ধতার কারণে, তিব্বতে পরিবহন খাতের উন্নয়ন বরাবরই একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। তিব্বতের কৃষি ও পশুপালন শিল্পের সংস্কারের ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব আছে। এখন পর্যন্ত তিব্বতের একটি জেলা ও ১২টি গ্রাম সড়ক যোগাযোগের আওতায় নেই এবং ৯টি জেলা ও ১২২৭টি গ্রামের সড়কপথের অবস্থা নাজুক।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে তিব্বতের গ্রামগুলোতে রাস্তা নির্মাণের জন্য মোট বাজেট ছিল ৩৭২৯ কোটি ইউয়ান, যা দিয়ে ১৩ হাজার কিলোমিটার রাস্তা নির্মিত হয়েছে। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ তিব্বতের গ্রামগুলোতে মোট রাস্তা ছিল ৬৮ হাজার ৮৬৩ কিলোমিটার।

৬. চীনের হুয়াওয়েই কোম্পানি ওমানে প্রথম স্বাধীন দোকান খুলেছে। গত রোববার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় কোম্পানিটি।

ওমানের রাজধানী মাসকাটের সিটি সেন্টার আল কুরুমে চালু হওয়া এই দোকানে কোম্পানির সর্বশেষ প্রযুক্তি ও সেবা পাওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, হুয়াওয়েই গত ১০ বছর ধরে ওমানে নিজস্ব পণ্য বিক্রি করছে। তবে, এবারই প্রথম স্বাধীন দোকান খুলল।

৭. বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ৭ কোটি ২৫ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান দিতে যাচ্ছে চীন, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৬০৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সেতু নির্মাণসহ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। সম্প্রতি ঢাকায় এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে চীন সরকারের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

শেরেবাংলা নগরের সিপিটিইউ ভবনের সম্মেলনকক্ষে চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ইআরডি সচিব বলেন,"চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় ২৭টি প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি প্রকল্পের জন্য চূড়ান্ত ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতের আরও দুটি প্রকল্পের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।"

অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ চীনের অন্যতম প্রধান বন্ধুদেশগুলোর একটি। বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশ নিতে পেরে চীন সরকার গর্ববোধ করে। বাংলাদেশে সবধরনের উন্নয়ন-সহায়তায় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখবে বেইজিং।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইতোমধ্যেই চীনের অনুদানের অর্থে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলনকেন্দ্র ছাড়াও, আটটি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রীসেতু নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া, কৃষি যন্ত্রপাতি, হাইব্রিড রাইস টেকনোলজি সহায়তা, চিকিৎসাযন্ত্রপাতি, ড্রেজার এবং কাস্টমসের জন্য স্ক্যানার সরবরাহ করে থাকে চীন।

বাংলাদেশে চীনা অনুদানে চলমান উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে: পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে বার্ন ইউনিট এবং ফায়ার সার্ভিসের জন্য মোটরসাইকেল সরবরাহ।

৮. চীনের একটি কোম্পানি বাংলাদেশে কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। চুচাউ চিনইউয়ান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি লিমিটেড নামক ওই প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনী নিয়ে গঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে জমি নেওয়ার জন্য চুক্তি করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-র সঙ্গে।

কোম্পানিটি বেজাকে জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে কারখানার নির্মাণকাজ শুরু করবে এবং জুনে উৎপাদনে যাবে। তাদের নেওয়া জমির পরিমাণ ১০ একর। কোম্পানিটির বিনিয়োগের লক্ষ্য ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৩৫ কোটি টাকা। জমি নিতে ইতোমধ্যে বেজাকে ৫০ বছরের ইজারামূল্যবাবদ প্রায় ১২ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে কোম্পানিটি।

চীনা কোম্পানিটি ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। বেজাকে তারা জানিয়েছে, তাদের মূল বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। তারা লেড অক্সাইড, লেড নাইট্রেট, কপার সালফেটসহ বিভিন্ন রাসায়নিক উৎপাদন করে। বাংলাদেশে কারখানা করলে তারা ৫০ শতাংশ স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করবে বলে জানিয়েছে। কোম্পানিটি প্রতি বর্গমিটার জমি ৫০ বছরের জন্য ৩০ ডলারে ইজারা পেয়েছে।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হবে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল। এর আকার হবে ৩০ হাজার একর। সেখানে জমি বরাদ্দের জন্য ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে আবেদন নেওয়া শুরু করে বেজা। ইতোমধ্যে সেখানে বিপুল বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। বেজা ইতোমধ্যে সেখানে কারখানা করার জন্য চার হাজার একরের মতো জমি বরাদ্দ দিয়েছে। মোট প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৫৬টি। এর মধ্যে জমি পেয়েছে ৩৯টি। এসব কোম্পানি প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে।

৯. নতুন বছরের প্রথম ১৮ দিনেই ১০০ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ও সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। গত রোববার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১১০ কোটি মার্কিন ডলার।

উল্লেখ্য, গেল বছর ১৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা, যা ছিল ২০১৭ সালের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থ তথা রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

১০. দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আগামী মাসে সৌদি আরবের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা আসছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সৌদি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রী এবং অর্থনীতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৮৫.২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে সৌদি আরবে এবং দেশটিতে থেকে আমদানি করেছে ৬০৫.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য।

১১. বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারে ছেড়েছে ১১০ সিসির ২টি নতুন মডেল 'লিভো' ও 'ড্রিম নিও' মোটরসাইকেল। গত বছরের নভেম্বরে মুন্সিগঞ্জে উদ্বোধন হয় হোন্ডার নিজস্ব ফ্যাক্টরি। এখানেই তৈরি-হওয়া দুটি মডেল প্রথম বাজারে এল।

১৯ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে হোন্ডার সব ডিলার শোরুমে হোন্ডা ড্রিম নিও ও লিভো ভোটসহ নিম্নোক্ত মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে: ড্রিম নিও ৯৭,০০০ টাকা; লিভো ড্রাম ১,০৭,০০০ টাকা; এবং

লিভো ডিস্ক ১,১৬,০০০ টাকা।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040