বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণ
  2019-01-18 15:57:58  cri

দেশের উন্নয়নে যে কোনো সরকারই ঋণ গ্রহণ করে থাকে। তা দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণের জন্যই। কিন্তু ঋণ পরিশোধের সামর্থ্যও থাকা চাই। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণ ৮০ হাজার ৯৬০ টাকা। আর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ঋণগ্রস্ত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রিয় শ্রোতা, দেশের ঋণ গ্রহণ পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

গত রোববার বাংলাদেশ সরকার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মধ্যে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় বাস্তবায়িতব্য 'রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রোজেক্ট'-এর অনুকূলে এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এডিবি প্রদেয় এ ঋণ ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছর পরিশোধযোগ্য। আর এভাবেই কিন্তু বাড়ছে বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণ।

বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে গত বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৮৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ ৮ লাখ ৬২ হাজার ২২৪ কোটি এবং সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত মিলিয়ে ৯৩ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া এ পরিমাণ ঋণ জিডিপির প্রায় ৩৯ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ। এ হিসাবে প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণ ৬০ হাজার টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৫১ হাজার ৭৫৫ টাকা। এ হিসাবে এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার টাকা। এরপর চলতি অর্থবছর আরও ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা জানায় সরকার। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে যে ঋণ নেয়া হয়, তার বিপরীতে সরকারকে বছরে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনতে হচ্ছে। এ কারণে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। যা দুটি পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের সমান। এ ক্ষেত্রে ঋণ কমলে এ টাকা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা যেত।

এখন আমরা দেখব- বাংলাদেশের ঋণ বলতে আসলে কী বোঝায়। এজন্য ঋণের ধরন ও প্রকরণ একটু জানা দরকার। প্রথমত, পাবলিক ডেট/সভরিন ডেট বলতে বোঝায় সরকার বাইরে কত পরিমাণ ঋণী। গভর্নমেন্ট ডেট বলতে বোঝায় সরকার ভেতর ও বাইরের কাছে কত পরিমাণ ঋণী। এক্সটর্নাল ডেট বলতে বোঝায় সরকার ও দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বাইরের কাছে কত পরিমাণ ঋণী। ন্যাশনাল ডেট বলতে বোঝায় সরকার ও জনগণ দেশের ভেতরে ও বাইরে কী পরিমাণ ঋণী। এ ব্যাখ্যা অনুযায়ী ২০১৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশ সরকারের পাবলিক ডেট/সভরিন ডেট ছিল ২৮ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার, গভর্নমেন্ট ডেট ছিল ৬৪ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। তাহলে সরকারের দেশীয় ঋণ ছিল ৩৬ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। এভাবে বাংলাদেশের জনগণের দেশের ভেতরে ও বাইরে সাকল্যে ন্যাশনাল ডেট ছিল ৮৬ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। ১৬২ মিলিয়ন জনসংখ্যা ধরে এ হিসাবে গত বছরের ডিসেম্বর নাগাদ মাথাপিছু ন্যাশনাল ডেট ছিল ৪০ হাজার ৭০ টাকা।

এদিকে, countrymeters.info –এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডেট দেখানো হয়েছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার। জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭২ হাজার। এ অনুযায়ী বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণ ৮০ হাজার ৯৬০ টাকা

অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী ঋণ উভয়ই অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে। ঋণনির্ভর পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে পৃথিবী বিপুল ঋণের ভারে ক্রমে ন্যুব্জ হয়ে পড়ছে। সেই ভারের তুলনায় আমাদের ভার অনেক কম হলেও এর লাগামহীনতার ব্যাপারে আমাদের অর্থনীতিও পিছিয়ে নেই। ডেট ক্লকগুলোর সতর্কবার্তায় পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মানুষ এখন যথেষ্ট উদ্বিগ্ন এবং নানা সংস্কার ব্যবস্থা নিয়ে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040