সংবাদ পর্যালোচনা প্রসঙ্গ: সন্ত্রাসদমন ও শিনচিয়াংয়ে বিদেশি সাংবাদিকদের সফর
  2019-01-17 15:52:17  cri

সম্প্রতি চীনের কেন্দ্রীয় বেতার ও টেলিভিশন সদর দফতরের উদ্যোগে বাংলাদেশ, তুরস্ক, মিসর, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার ৬ জন সিনিয়র সাংবাদিক শিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কাশি সফর করেন। সেখানে তাঁরা কাশির পেশাগত প্রশিক্ষণকেন্দ্রের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ করেন। এই সফর হচ্ছে এ ধরনের সপ্তম সফর।

দেশ-বিদেশের সন্ত্রাসদমনের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, চরমবাদের ফলে সন্ত্রাসী তত্পরতা দেখা দেয়। সন্ত্রাস দমন করতে চাইলে চরম চিন্তাভাবনা নির্মূল করতে হবে।

শিনচিয়াংয়ের স্থানীয় সরকার 'একদিকে আঘাত করা, অন্যদিকে প্রতিরোধ করা'র নীতি অনুসরণ করে আসছে। সন্ত্রাসদমনের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক অধিকার রক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আর এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো পেশাগত প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করা। এ কেন্দ্রে চরমপন্থি ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত কম শাস্তিপ্রাপ্ত লোকজনকে পেশাগত প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে সমাজের মূল ধারায় ফিরে আসার নতুন সুযোগ দেওয়া হয়।

কাশি পেশাগত প্রশিক্ষণকেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের চীনে প্রচলিত ভাষা ও আইনকানুন শেখানো হয়; পেশাগত দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা হয়; এবং সর্বোপরি তাদের চরম চিন্তা নির্মূল করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এখানকার শিক্ষার্থীদের বিনামুল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে এবং এখান থেকে গ্র্যাজুয়েট হবার পর তাদের চাকরির ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়।

তুরস্কের ইজমির সাংবাদিক সমিতির চেয়ারম্যান মিস্কেত দিকম্যান বলেন, এবার শিনচিয়াং সফর তার কাছে খুব ফলপ্রসূ মনে হয়েছে। তিনি বলেন,

"প্রশিক্ষণকেন্দ্র নিয়ে অনেক গুজব আছে। যেমন বলা হয়, এখানে সংখ্যালঘুদের মগজ ধোলাই করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে এটি একটি ভাল স্কুল। ছাত্রছাত্রীদের চিন্তাভাবনা এখানে পরিশোধিত হচ্ছে। তারা নিজেদের ইচ্ছায় আইনি শাস্তি ভোগ করার পরিবর্তে এখানে এসেছে। তারা শিক্ষাগ্রহণ করছে এবং পেশাগত দক্ষতা আয়ত্ত করছে। আমি যার যার সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সবাই নিজ নিজ অবস্থা নিয়ে খুব সন্তুষ্ট।"

আফগানিস্তানের কান্দাহার অর্বেন্ড সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আব্দুল মাতিন আমিরি বলেন,

"এর আগে অন্য সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছি, চীন সরকার বল প্রয়োগের মাধ্যমে অনেক মানুষকে এখানে বন্দি হিসেবে আটক রেখেছে। চীনা পুলিশ তাদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে বাধ্য করে এবং পরে কারাগারে পাঠায়। কিন্তু আমি নিজের চোখে পুরোপুরি অন্য জিনিস দেখলাম। এখানে কোনো চাপাচাপি নেই। এটা একটা স্কুল। এখানকার ছাত্রছাত্রীরা খুব খুশি এবং প্রশিক্ষণ থেকে তারা অনেক জ্ঞান ও দক্ষতা আয়ত্ত করতে পারছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, তাদের মন থেকে চরমপন্থি চিন্তাভাবনা দূর হয়েছে; সমস্যার সমাধান হয়েছে।"

তুরস্কের এটিভির সাংবাদদাতা এরদাল কুরুকায় বলেন,

"আমরা আগে শুধু পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম থেকে চীনসংক্রান্ত খবর পেতাম। সেসব খবরে পরিবেশিত তথ্য অনেকসময় ভুল হয়। প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা অপরাধ করেছে এবং চরম চিন্তাভাবনায় প্রভাবিত হয়েছে। প্রশিক্ষণকেন্দ্র একটি শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে তারা বিভিন্ন কোর্স গ্রহণ করে নিজেদের দক্ষতা বাড়ায়। এটাকে চিকিত্সাকেন্দ্রও বলা যায়। মানুষ এখানে শিক্ষাগ্রহণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায়। মানুষ ভুল করতে পারে। তারপর ভুল শুধরে নিতে পারে।"

পাকিস্তানের এফএম৯৮ বেতারের উপস্থাপক তাসাওয়ার জামান বাবর বলেন, "প্রশিক্ষণকেন্দ্র দেখার পর চীন সরকারের চরমবাদ নির্মূল করার প্রচেষ্টার জন্য হাততালি দিতে চাই।"

বাংলাদেশের দ্য ডেইলি সান পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শিহাবুর রহমান বলেন, "এখানে শিক্ষার্থীরা আইনগত জ্ঞান ছাড়া, কোনটা ঠিক কোনটা ভুল, সেগুলোও শিখতে পারে। তা ছাড়া, নতুন দক্ষতা শিখে তারা মূল সমাজে ফিরে যেতে পারে। এর মাধ্যমে তারা জীবন ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আস্থাশীল হতে পারে এবং সঠিক পথে ফিরে আসতে পারে।"

আফগানিস্তানের কান্দাহার অর্বেন্ড সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আব্দুল মাতিন আমিরি বলেন, "আফগানিস্তানে অনেক সন্ত্রাসী-তত্পরতা আছে। চীনের এ অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখতে পারি। এমন প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করে অনেক মানুষের চরম চিন্তাভাবনা বদলে দেওয়া যায়। আমি মনে করি, এ ধরনের কেন্দ্র স্থাপিত হলে আফগানিস্তানের অবস্থা অনেক পরিবর্তন হবে।"

(স্বর্ণা/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040