গুয়ান আই লিং ও তাঁর স্বামীর দুটি সন্তান আছে। তাঁদের বাড়ি থেকে কারখানায় হেঁটে আসতে মাত্র ৫ মিনিট লাগে। প্রতিদিন ভোরে সন্তানরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর গুয়ান আই লিং হেঁটে কারখানায় গিয়ে কাজ শুরু করেন। দুপুরে তিনি কারখানায় বিনামূল্যে লাঞ্চ খান। বিকেলে কাজ শেষ করার পর বিদ্যালয়ে গিয়ে সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে ফিরে যান। তিনি বলেন, কারখানা বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় কাজ করার পাশাপাশি সন্তানদের যত্ন নেওয়া সহজতর হয়েছে।
২০১৭ সালের আগে গুয়ান আই লিং বর্তমান বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি অঞ্চলে থাকতেন। সেই বাড়ি যেতে কোনো গণপরিবহনের সুযোগ তাঁর ছিল না; ছিল না পানির সরবরাহও। অবকাঠামোর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এছাড়াও তখন তাঁর সন্তানেরা প্রতিদিন ৫ কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যেতো। তখন তাঁর স্বামীই শুধু সংসারের জন্য আয় করতেন। তিনি আরো বলেন,"তখন আমার স্বামী বাইরে কাজ করতো। আমি একা বাড়িতে সন্তানদের যত্ন নিতাম। তখন আমাদের সার্বিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আমার স্বাস্থ্যও ভালো ছিল না। এ বছর আমি কাজ শুরু করি।"
তবে, স্থানান্তর পদ্ধতির মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন কৌশলের কারণে গুয়ান আই লিংয়ের পরিবারের অবস্থা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৭ সালে তাঁর পরিবার পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বর্তমান দেফুইউয়ান এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। তাঁর পরিবার একটি ১০০ বর্গমিটারের অ্যাপার্টমেন্ট পেয়েছে।
দেফুইউয়ান এলাকায় মোট ২৬০০ জন বাস করেন। গুয়ান আই লিংয়ের মতো স্থানীয় বাসিন্দের সবাই দরিদ্র পাহাড়ি এলাকা থেকে স্থানান্তরিত হন। তাঁরা বিনামূল্যে বর্তমান অ্যাপার্টমেন্ট পেয়েছেন। থানার গর্ভনর গুও লি ওয়েই সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান এলাকার বাসিন্দারা কাছাকাছি ১৪টি দরিদ্র গ্রাম থেকে এখানে স্থানান্তরিত হন। এ সম্পর্কে গুও লি ওয়েই বলেন, "এ এলাকা ২০১৬ সালে গড়ে তোলা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যকে বাসিন্দা ২৫ বর্গমিটার আয়তনের ফ্লাট পেতে পারেন। এ ছাড়াও স্থানীয় সরকার অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। কিন্তু তাঁদের চাষের জমি এখনো আছে।"
গুও লি ওয়েই বলেন, স্থানীয় সরকার ২০১৫ সাল থেকে ১৭ কোটি ইউয়ান আরএমবি বরাদ্দ করে দেফুইউয়ান এলাকা গড়ে তোলার কা শুরু করে। এলাকার আয়তন প্রায় ০.১ বর্গকিলোমিটার। এলাকায় ১৭টি ভবন রয়েছে। এখানে ৭০০টি বাড়ির ২৬০০ জন বাসিন্দা রয়েছেন। স্থানান্তরণের কাজ শেষ হয়েছে। এলাকায় বাসিন্দাদের জন্য সেবাকেন্দ্র, সংস্কৃতিকেন্দ্র, শিশুশালা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও দারিদ্র্যবিমোচন কার্যালয় রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনের ব্যাপকভাবে দারিদ্র্যবিমোচনের কাজ হয়েছে। এ পর্যন্ত মোটামুটি গোটা চীনের দরিদ্র লোকজনের সংখ্যা, তাদের দারিদ্র্যের কারণ, ও দারিদ্র্যবিমোচনের কৌশল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, প্রায় ১ কোটি দরিদ্র মানুষ এখনো খারাপ প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অভাবের সঙ্গে লড়াই করছেন। স্থানান্তর পদ্ধতিতে দারিদ্র্য বিমোচন হল চীনের 'সম্পূর্ণ দারিদ্র্যবিমোচন' পরিকল্পনার একটি অংশ। পাঁচ বছরের মধ্যে অর্থাত্ ২০২০ সালের আগে সামগ্রীকভাবে সকল দরিদ্র বাসিন্দাকে স্থা্নান্তরিত করা হবে। পাশাপাশি তাঁদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করা হবে।
দেথিং থানার আয়তন ৩২১ বর্গকিলোমিটার। থানায় অধিকাংশ জায়গা পাহাড়ি অঞ্চল। গুও লি ওয়েই বলেন, বর্তমান থানায় দরিদ্র নাগরিক ৯২৪১ জন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় থানায় ১১২৮টি বাড়ির ৪৩২৩ জন বাসিন্দার জন্য নতুন বাড়িঘর নির্মিত হয়েছে। এ বছরে আরো ২১৫টি বাড়ির ৮১৫ জন বাসিন্দার জন্য নতুন বাড়িঘর নির্মিত হবে।
এ সম্পর্কে গুও লি ওয়েই বলেন, "আমাদের বাসিন্দারা নিজেদের ইচ্ছায় পাহাড়ি এলাকা থেকে এ এলাকায় স্থানান্তরিত হয়েছেন। আমরা তাঁদেরকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সরবরাহ করি।"
দেফুইউয়ান এলাকা হল দেথিং থানার আটটি সুপরিবেশ এলাকার একটি। স্থানান্তর একটি পদ্ধতি, দারিদ্র্যবিমোচন হল লক্ষ্য। স্থানীয় সরকার বাসিন্দাদেরকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বহু ধরণের শিল্প উন্নয়ন করে। এ সম্পর্কে গুও লি ওয়েই বলেন, "আমরা ১৩১টি বাড়ি নিয়ে পারিবারিক হোটেলের ব্যবসা উন্নয়ন করি। স্থানীয় পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে বাসিন্দাদের পারিবারিক হোটেলের ব্যবসা উন্নত হবে। আমরা দারিদ্র্যবিমোচন কারখানা নির্মাণ করার জন্য উত্সাহ দেই। বর্তমানে ৫৭টি বাড়ির বাসিন্দারা কারখানাটিতে কাজ করছেন। এ ছাড়াও বাসিন্দাদেরকে বসবাস এলাকায় জনসেবা কাজের সুযোগ দেই আমরা। এ ছাড়াও আমরা ফোটোভোলটাইক শক্তি বিদ্যুতকেন্দ্র ও চীনা ঔষধ উত্পাদনের কারখানা নির্মাণ করেছি।"
গুয়ান আই লিংয়ের পোষাকের কারখানায় ৫০ জনেরও বেশি কর্মী রয়েছেন। তাঁরা সবাই কাছাকাছি গ্রামের বাসিন্দা। গুয়ান আই লিং বলেন, কারখানাটিতে কাজ করার আগে তাঁদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার সময় তিনি প্রতিদিন ৩০ ইউয়ান ভর্তুকি পেয়েছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "গত বছরের শীতকালে আমি ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলাম। বর্তমানে আমি প্রতিদিন ১০ ঘন্টা করে কাজ করি এবং প্রতিমাসে আমার বেতন এক হাজার ইউয়ানেরও বেশি।'
গুয়ান আই লিং আরও বলেন, "আমার কর্মীদের চেয়ে আমার বেতন বেশি না। আমার কারখানায় যে যত বেশি করে, সে তত বেশি বেতন পায়। আমি যখন ভালভাবে কাজ করতে পারি, তখন আমার বেতন বেশি হয়। তখন আমার বেতন ৩ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত হয়।"
তিনি বর্তমান জীবন নিয়ে খুব সন্তুষ্ট। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আগে আমার কোন বেতন ছিল না। আমাদের পরিবারের আয়ই ছিল স্বামীর বেতন। কিন্তু এখন আমরা দু'জনেই আয় করি। এখন আমাদের বাড়ির পরিবেশও অনেক উন্নত হয়েছে।"
জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন গত মার্চ মাসে 'সুপরিবেশ এলাকায় স্থানান্তরের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন নীতি' নামের শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সারা চীনে ৫৮.৯ লাখ মানুষ এই নীতি থেকে উপকৃত গয়। ২০১৮ সালে ২৮ লাখ মানুষ দরিদ্র এলাকা থেকে সুপরিবেশ এলাকায় স্থানান্তরিত হন। ২০২০ সালের আগে সকল দরিদ্র নাগরিক দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হবেন, এমন আশা করা যায়।