এডেন উপসাগরের পূর্ব থেকে পশ্চিমে ৫৯০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে, গেল ১০ বছরে, চীনের নৌবাহিনীর ৩১টি এসকর্ট-জাহাজ আসা-যাওয়া করেছে এবং ৬৬০০টিরও বেশি দেশি-বিদেশি জাহাজকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছে। এর মধ্যে ৭০টি জাহাজকে উদ্ধার করা হয় খুবই খারাপ অবস্থা থেকে। এতদঞ্চলে চীনা নৌবাহিনীকে 'বিশ্বাসযোগ্য ছাতা' বলে ডাকে সংশ্লিষ্টরা।
এডেন উপসাগর ভারত মহাসাগর এবং লাল সাগর তথা রেড সি'র মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি চ্যানেল এবং প্রতিবছর এডেন উপসাগরের উপর দিয়ে আসা-যাওয়া করে বিভিন্ন দেশের দশ সহস্রাধিক বাণিজ্যিক জাহাজ। এখানে জলদস্যুদের অপতত্পরতা বেশি। তাই এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সমুদ্রাঞ্চল হিসেবেও গণ্য। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব অনুযায়ী, গেল ১০ বছরে এতদঞ্চলে চীন টানা ৩১ বার জাহাজবহর ও ১০০ বার ফ্রিগেট পাঠিয়েছে। এসব অভিযানে সংশ্লিষ্ট ছিল ৬৭টি হেলিকপটার ও ২৬ হাজার সৈনিক। চীনা নৌবাহিনীর টহলের কারণে এই ৫৯০ নটিক্যাল মাইল অঞ্চল এডেন উপসাগরে সবচেয়ে নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে সুপরিচিত।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে, তুলুওয়া দেশের ওএস৩৫ নামক একটি পণ্যবাহী জাহাজ ছিনতাই করা হয়। চীনা নৌবাহিনীর ২৫তম এসকর্ট দলের ইউন লিন জাহাজ তখন ওই পণ্যবাহী জাহাজকে উদ্ধার করতে রওয়ানা হয়। ১৯ জন নাবিকসহ জাহাজটি উদ্ধারে সক্ষমও হয় চীনা নৌবাহিনী। ওএস৩৫ জাহাজের নাবিক জানান, তখন তাদের উদ্ধারে ৫টি জাহাজ পাঠানো হয় এবং চীনা নৌবাহিনীর জাহাজ সবার আগে নাবিকদের উদ্ধার করে।
বিগত ১০ বছরে চীনা নৌবাহিনী ৬৬০০টি দেশি-বিদেশি জাহাজকে এসকর্ট-সেবা দিয়েছে। এখন এডেন উপসাগরে ক্রমবর্ধমান হারে বাণিজ্যিক জাহাজগুলো চীনা বাহিনীর সাহায্য চাচ্ছে। চীনা নৌবাহিনীর ৩০তম এসকর্ট দলের কাছ থেকে এসকর্টসেবা পেয়েছে যে ১১৯৪তম জাহাজটি, সেটি ভারতের একটি বাণিজ্যিক জাহাজ। উ হু নামের একটি চীনা জাহাজ এ ভারতীয় জাহাজকে এসকর্টসেবা দেয়। উ হু জাহাজের ক্যাপটেন ইয়াং খাই বলেন, "অনেক বিদেশি জাহাজ আমাদের সাহায্য পাওয়ার পর ইন্টারনেট বা রেডিওর মাধ্যমে আমাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। চীনা নৌবাহিনী বাস্তব কাজের মাধ্যমে আরও বেশি দেশের আস্থা অর্জন করেছে এবং এডেন উপসাগরে চীনা নৌবাহিনীর দায়িত্ববোধ ও ভাবমূর্তি প্রদর্শিত হয়েছে।"
বাণিজ্যিক জাহাজকে প্রতিরক্ষাসেবা দেওয়া ছাড়া, চীনা নৌবাহিনী অন্য কর্তব্যও পালন করে থাকে এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বার বার নিজের ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মালদ্বীপের মালে শহরে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব প্রকট আকার ধারণ করে। তখন চীনা নৌবাহিনীর জাহাজ ছাং সিং তাও নির্দিষ্ট দিক পরিবর্তন করে মালে শহরে গিয়ে ৬০০ টন বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করে। চীনের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন, তারা নিজেদের সংরক্ষিত পানি মালদ্বীপের মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছেন। এটা বন্ধুর প্রতি বন্ধুর কর্তব্যবোধ থেকেই তারা করেছেন।
গেল ১০ বছরে চীনা নৌবাহিনী ৩৪০০টি বিদেশি জাহাজকে এসকর্টসেবা দিয়েছে। চীনা নৌবাহিনীর জাহাজ কর্তৃক বিভিন্ন বিপদ থেকে উদ্ধারপ্রাপ্ত জাহাজগুলোর অর্ধেকই বিদেশি। চীনা এসকর্ট জাহাজদল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্য ভাগাভাগি করে থাকে এবং নিয়মিত সংশ্লিষ্ট কমান্ডারদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি, চীনা জাহাজগুলো রাশিয়াসহ ২০টি দেশের জাহাজের সঙ্গে যৌথ এসকর্ট অপারেশন চালিয়ে আসছে এবং জলদস্যু দমন ও আন্তর্জাতিক মানবিক উদ্ধারকাজের মহড়া চালিয়েছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞ ছাং জুন তু বলেন, চিনা নৌবাহিনী গেল ১০ বছরে যা করেছে, তা বিশ্বের সামনে চীনকে দায়িত্বশীল বড় দেশ হিসেবে তুলে ধরেছে। এ সময়কালে, চীনা এসকর্ট জাহাজদল অনেক মানবিক উদ্ধারকাজেও অংশ নিয়েছে। ফলে চীনা বাহিনীর উন্নয়ন বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক বলেও প্রমাণিত হয়েছে। (শিশির/আলিম)