সুরের ধারায়--চীনের শহর সি আন
  2018-12-27 14:17:32  cri



সবাই জানেন, চীনের ইতিহাস দীর্ঘকালের। এ দীর্ঘ ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত শহর ছিলো। অনেক শহর এখনও রয়েছে। সি'আন সেসব শহরের মধ্যে একটি। বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে চীনের বিখ্যাত ও প্রাচীন নগর সি'আন সম্পর্কে আপনাদের জানাবো এবং ঐতিহাসিক এ শহর সম্পর্কে কয়েকটি সুন্দর গান শোনাবো।

সি'আন চীনের শানসি প্রদেশের রাজধানী, চীনের মধ্যাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর। এর আয়তন প্রায় ১০০০০ বর্গ কিলোমিটার আর জনসংখ্যা প্রায় ৯ লাখ ৬০ হাজার । সি'আন খুব পুরানো একটি শহর এবং চীনা সংস্কৃতির অন্যতম উত্স। ইতিহাসে চৌ, ছিন, হান, থাংসহ ১৩টি রাজবংশের রাজধানী ছিল এই শহর। 'সি'আন, বেইজিং, নানচিং, লুওইয়াং' একসঙ্গে চীনের চারটি প্রাচীন রাজধানী হিসেবে পরিচিত। ১৯৮১ সালে জাতিসংঘের ইউনেস্কো সি'আনকে 'বিশ্ববিখ্যাত প্রাচীন শহরের' মর্যাদা দেয়। সি'আনও প্রাচীনকালের রেশম পথের সূচনাস্থল। এখান থেকে চীনের চা রেশমপথ দিয়ে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে প্রবেশ করে; আর বিশ্বের অন্যান্য শহরের পণ্য চীনে বয়ে নিয়ে আসে। বর্তমান সি'আন 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মানবজাতির হাজার হাজার বছরের উন্নয়ন এই শহরে দেখা যায়। এ শহরের অনেক আকর্ষণও রয়েছে।

সি'আনের ইতিহাস অনাদিকাল থেকে শুরু! ১০ লাখ বছর আগে লান থিয়ান মানুষ সেখানে বসতি গড়ে তোলে। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ বছর আগে সেখানে ইয়াং শাও সংস্কৃতি উন্নত হয় এবং শহরের আদিরূপ গঠিত হয়। সেখানে আবিষ্কৃত নিওলিথিক যুগের (Neolithic Age) একটি শহরের ধ্বংসাবশেষ হলো এখন পর্যন্ত চীনে আবিষ্কৃত সবচেয়ে পুরানো শহরের ধ্বংসাবশেষ। বর্তমানে সেখানকার লোকদের প্রাচীন সংস্কৃতি, কৃষি, ঘর, যন্ত্রপাতির ধ্বংসাবশেষ ও গবেষণা সি'আনের জাদুঘরে দেখা যায়। 

প্রাচীনকালে সি'আন ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। মধ্য চীনের সমভূমিতে অবস্থিত, উর্বর জমি ও সমৃদ্ধ নদীর কারণে ১৩টি রাজবংশ সে অঞ্চলটি রাজধানীর জন্য বেছে নেয়। থাং রাজবংশের সময় শহরটি ছিলো সবচেয়ে সমৃদ্ধ। তখন সি'আনকে বলা হতো ছাং আন, মানে 'দীর্ঘ দিনের শান্তি ও স্থিতিশীলতা'। তখনকার বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ হিসেবে, তার রাজধানী ছাং আনও অনেক বিখ্যাত ছিলো। বিশ্বের লোক, বাণিজ্য, সংস্কৃতি সব সেখানে মিলে। বর্তমান ছাং আন নাম উল্লেখ করলে থাং রাজবংশের সমৃদ্ধ দৃশ্য চীনাদের মনে ভেসে উঠবে।

বর্তমানের মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না- হাজার বছর আগে ছাং আন কত সমৃদ্ধশালী একটি শহর ছিল। ঐতিহাসিক রেকর্ড অনুযায়ী, ছাং আনের সাধারণ রাস্তার প্রস্থ ১৫০ মিটার, সবচেয়ে চওড়া একটি রাস্তা ১.৫ কিলোমিটার! আর তার রাজপ্রাসাদ- তামিং প্রাসাদ বেইজিংয়ের নিষিদ্ধনগরের ৪.৭গুণ বড়! শহরের বিন্যাস, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বেশ উন্নত ছিল। জাপানের কিওটো একদম ছাং আনের আদলে তৈরি করা হয়। বর্তমান সি'আন অনেক পরিবর্তন হলেও উঁচু ও প্রাচীন শহরের প্রাচীরে দেখা যায় ছাং আনের ছায়া।

উল্লেখ্য যে, ছাং আন ছিল প্রাচীনকালের রেশম পথের উত্স। পশ্চিম হান রাজবংশ থেকে থাং রাজবংশের সময় পর্যন্ত রেশমপথ চীন ও বিশ্বের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, বর্তমান সি'আন 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ শহর। যোগাযোগের কেন্দ্র হওয়ায় বিভিন্ন সংস্কৃতি, বিভিন্ন ধর্ম ছাং আনে প্রবেশ করে এবং উন্নত হয়। বর্তমান সি'আনের কেন্দ্রে ঘড়ি টাওয়ারের পাশে রয়েছে মসজিদ। সেখানকার মুসলিম এলাকা শহরের সবচেয়ে সমৃদ্ধ স্থান এবং মজাদার সব খাবারের জন্য দেশি-বিদেশি পর্যটক ছুটে যান সেখানে।

বর্তমান সি'আন তার ইতিহাস ও পর্যটনস্থলের জন্য বিখ্যাত। এসব স্থান অনেক পর্যটক আকর্ষণ করে। শহরে রয়েছে থাং রাজবংশের রাজপ্রাসাদ তামিং ও হুছিং প্রাসাদ, ছিন রাজবংশের প্রথম রাজা ছিন শি হুয়াংয়ের সমাধি ও তার বিপুল সেনা ও ঘোড়ার টেরাকোটা, আর ছি এন মন্দির, ভারত থেকে হিউয়েন সাংয়ের আনা বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ সেখানে রাখা আছে। এমন চমত্কার পর্যটনস্থান আরও অনেক আছে সেখানে।

সি'আনের কথা এক অনুষ্ঠানে বলে শেষ করা যাবে না। এই প্রাচীন শহরের সৌন্দর্য শুধু মুখের কথায় প্রকাশ করা যাবে না, শহরে গিয়ে নিজে তা অনুভব করতে হবে। অনুষ্ঠানের শেষে আরও একটি সুন্দর গান 'শুভ রাত্রি সি আন' শুনবো। আশা করি আজের অনুষ্ঠান শুনে চীনের প্রাচীন শহর সি'আন সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারবেন এবং শহরটি পছন্দ করবেন।

(তুহিনা/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040