১৯৭৮ সালের শেষ দিকে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতির বাস্তবায়নকাজ শুরু হয়। উ শু ছিং তখন প্রথম হংকং থেকে মূল ভূভাগে আসেন। ১৯৭৯ সালে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। দু'দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তখন থেকে তাঁর হংকং ও মূল ভূভাগের মধ্যে আসা-যাওয়ার জীবন শুরু হয়। এ সম্পর্কে উ শু ছিং বলেন,
"তখনকার চীনের সর্বোচ্চ নেতা তেং সিয়াও পিং ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফর করার পর দু'দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। সেজন্য ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে আমি প্রথম বেইজিংয়ে গিয়ে সিভিল এভিয়েশন ব্যুরোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করি। আমরা বিমানে খাবার সরবরাহের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে তখন বহুবার বেইজিংয়ে গিয়েছি।"
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলাচলকারী বিমানে খাদ্য সরবরাহ করার জন্য উ শু ছিং বাবার পক্ষ থেকে ঘনিষ্ঠভাবে হংকং ও মূল ভূভাগের মধ্যে আসা-যাওয়া করতেন। তখন হংকং ও মূল ভূভাগের ধারণা, ভাষা ও ব্যবস্থার অনেক পার্থক্য ছিল। সেজন্য মূল ভূভাগে বিনিয়োগের প্রাথমিক পর্যায়ে উ শু ছিংকে অনেক কঠিন পরিস্থিতিতির সম্মুখীন হতে হয়। ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে উ চান দে ৫০ লাখ হংকং ডলার বিনিয়োগ করেন। এ সম্পর্কে উ শু ছিং বলেন, "তখন আমার বাবা বলেছিলেন, আমরা চীনা মানুষ, আমরা তেং সিয়াও পিংকে সম্মান করি। সেজন্য আমার বাবা চিন্তা না-করে সিএএসির অনুরোধে সম্মত হন।"
মেক্সি গোষ্ঠীর মূল ভূভাগে বিনিয়োগে হংকং বাসিন্দাদের দেশপ্রেম এবং সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতির প্রতি তাদের দৃঢ় আস্থার বহিঃপ্রকাশ। উ শু ছিং বলেন, যদিও তখন অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তবুও সবাই পরিশ্রম করে সে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়। ১৯৮০ সালে তাঁদের বেইজিং এয়ার ক্যাটারিং কোম্পানি লিমিটেড আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি হল চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের প্রক্রিয়ায় একটি মাইলফলকা ঘটনা। এ সম্পর্কে উ শু ছিং বলেন, "আমরা হংকংয়ের মানুষ হিসেবে প্রথম মূল ভূভাগে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। আমরা চীনা মানুষ হিসেবে গর্ব করি। আমরা স্বদেশের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণনীতি বাস্তবায়নে অবদান রেখেছি। আমরা সিএএসি'র সঙ্গে সহযোগিতা করেছি।"
বেইজিং এয়ার ক্যাটারিং কোম্পানি লিমিটেড তখন বিশাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। এরপর হংকংয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চীনা মূল ভূভাগে বিনিয়োগ করে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মূল ভূভাগে বিনিয়োগকারী হংকংয়ের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৪.১ লাখ। এ সম্পর্কে উ শু ছিংয় বলেন, "আসলে তখন হংকং থেকে অর্থ সংগ্রহ, প্রযুক্তি আমদানি ইত্যাদি সুবিধাজনক ছিল। মূল ভূভাগের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা ছিল না। যদিও আমরা ক্যান্টোনিজ বলি ও বেইজিংয়ের মানুষ ম্যান্ডারিন বলেন, তবুও আমরা সবাই চীনা মানুষ।"
আরও সুন্দর ও সমৃদ্ধ চীন গড়ে তোলার জন্য সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের প্রক্রিয়ায় উ শু ছিং শুধু যে ব্যবসা করেছেন তা নয়, বরং শিক্ষা ও মানবপ্রীতির ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। তিনি অনেক শিক্ষাতহবিল গড়ে তুলেছেন। তিনি তরুণ-তরুণীদেরকে দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি জানার সুযোগ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া, তিনি দরিদ্র অঞ্চলে বিনিয়োগ ও দান করেছেন এবং সেখানে প্রযুক্তি ও সম্পদ এনে দিয়েছেন। তিনি হলেন বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রীয় সমিতির পরিচালক বোর্ডের প্রথম এশীয় নারী সদস্য। উ শু ছিংয়ের দৃষ্টিতে বর্তমান বিশ্বে হংকং নতুন ভূমিকা পালন করছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "হংকংয়ের অর্থনীতি বর্তমানে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগুচ্ছে। আমাদের উচিত আরও আধুনিক ধারণা ও পদ্ধতি শিক্ষা করা। আমরা অন্য মানুষের সঙ্গে আরও ভালভাবে যোগাযোগ করার পদ্ধদি শিখছি। হংকং সারা বিশ্ব থেকে অগ্রণী প্রযুক্তি, ধারণা ও পদ্ধতি নিয়ে মূল ভূভাগে সরবরাহ করেছে।"
উ শু ছিং গণমাধ্যমের আমন্ত্রণে সংস্কার ও উন্মক্তকরণের প্রক্রিয়ায় মূল ভূভাগে ব্যবসা উন্নয়নের অনুভূতি দিয়ে 'সংস্কার ও উন্মুক্ত কথোপকথন' নামের বই লিখেছেন। বইতে তিনি লিখেছেন, চীনা জনগণের কয়েক শতাব্দীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। বর্তমান চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতির সাফল্য অর্জিত হয়েছে। উ শু ছিং বলেন, ইতিহাসের নতুন পর্যায়ে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়াকে কখনও বন্ধ হতে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, "চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হয়েছে মাত্র ৪০ বছর আগে। আমাদের উচিত অব্যাহতভাবে উন্মুক্তকরণ ও সংস্কার প্রক্রিয়া জোরদার করা। আমরা আরো বেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে চীনে বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানাই। আবার চীনা তরুণ-তরুণীদেরকে বিদেশে গিয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতেও উত্সাহ দেই।"