'২০১৯ সালে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য স্থিতিশীল থাকবে' (অর্থ-কড়ি; ২২ ডিসেম্বর ২০১৮)
  2018-12-22 15:38:18  cri


১. ২০১৯ সালে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য স্থিতিশীল থাকবে। সম্প্রতি দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তির দৃঢ়তা, নীতি-সহায়তা, ও উন্মুক্তকরণ চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির মূল কারণ হবে। অভ্যন্তরীণ ভোগ বৃদ্ধির ফলে আমদানিও বাড়বে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভোগের অবদান ছিল ৭৮ শতাংশ। মধ্যম-আয় গ্রুপের ৪০ কোটি চীনার মধ্যে উচ্চমানের বিদেশি পণ্য ও সেবার চাহিদা বাড়ছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে চীনের পণ্যবাণিজ্য আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে ১১.১ শতাংশ। এই ১১ মাসে দেশটির পণ্যবাণিজ্যের মোট অর্থমূল্য ছিল প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

২. এদিকে, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে বিদেশে চীনের ওডিআই (অ-আর্থিক সরাসরি বিনিয়োগ) স্থিতিশীল ছিল। সম্প্রতি দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।

মন্ত্রণালয় জানায়, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১৫৭টি দেশ ও অঞ্চলের ৫২১৩টি প্রতিষ্ঠানে চীনা বিনিয়োগকারীদের ওডিআই-এর পরিমাণ ছিল ১০৪.৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে ওডিআই বেড়েছে ৪.৮ শতাংশ।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, চলতি বছরের নভেম্বরের শেষ নাগাদ পর্যন্ত চীন ৪৬টি দেশে ১১৩টি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা এলাকা গড়ে তুলেছে এবং এসব এলাকায় ৪২.১‌৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এসব এলাকা ৪৭০০টির বেশি কোম্পানিকে আকর্ষণ করেছে।

৩. চীনে ২০১৮ সালেও শস্যের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানায়, চলতি বছর দেশে ৬৫৭.৮৯ মিলিয়ন টন শস্য উত্পাদিত হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ০.৬ শতাংশ কম।

বিবৃতিতে বলা হয়, আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়াতে চলতি বছর শস্যের ফলন খানিকটা কম হয়েছে। তবে, এবার হেক্টরপ্রতি ফলন আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। ২০১৮ সালে হেক্টরপ্রতি শস্য উত্পাদিত হয়েছে ৬১২০ কেজি করে, যা আগের বছরের চেয়ে ০.৩ শতাংশ বেশি।

৪. চীনে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। চায়না ডেইলি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, আগামী পাঁচ বছরে পনিরের চাহিদা বাড়বে বার্ষিক ২০ শতাংশের বেশি হারে। পাশাপাশি, গুড়া দুধের চাহিদাও বাড়বে।

প্রতিবেদনের বলা হয়, পশ্চিমা স্টাইলের পিজ্জা ও হ্যামবার্গারে পনিরের ব্যবহার বেশি। আর চীনে এই দুটি খাবারের চাহিদা বাড়ছে।

পত্রিকায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আগামী ৫ বছরে চীনে দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা বছরে ৩ শতাংশের বেশি হারে এবং দই ও অর্গানিক দুধের বিক্রি বার্ষিক ১০ শতাংশ হারে বাড়বে।

৫. চীনের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে ফ্ল্যাট-বাড়ির দাম চলতি বছরের নভেম্বরে মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। এই মাসে বেইজিং, শাংহাই, শেনচেন ও কুয়াংচৌয়ে ফ্ল্যাট-বাড়ির দাম বেড়েছে মাত্র ০.৩ শতাংশ। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।

ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুসারে, অক্টোবরে যেখানে পুরাতন ফ্ল্যাট-বাড়ির দাম কমেছিল ০.২ শতাংশ হারে, সেখানে নভেম্বরে তা কমেছে ০.৪ শতাংশ হারে।

৬. চলতি বছর চীনের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আগের বছরের চেয়ে ৭.১ শতাংশ বেশি মুনাফা করবে। ব্যাংক অব কমিউনিকেশান্স সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেয়।

প্রতিবেদন অনুসারে, ব্যাংকগুলোর সার্বিকভাবে ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি মুনাফা করতে পারে। ২০১৯ সালেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করবে বলে প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়।

৭. চীনের হোংছি কোম্পানি চলতি বছর ৩০ হাজারের বেশি গাড়ি বিক্রি করেছে, যা একটি রেকর্ড। হোংছি চীনের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি-নির্মাতা গ্রুপ এফএডাব্লিউ'র একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি এক বিবৃতিতে হোংছি জানায়, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি ২০,৮২৫টি এইচ৭ মডেল বিক্রি করেছে।

দেশব্যাপীর হোংছি'র ৯০টি ডিলার আছে, ২০২০ সালের মধ্যে যা বেড়ে ১৭০-এ দাঁড়াবে। ২০২০, ২০২৫, ও ২০৩৫ সালে কোম্পানি যথাক্রমে এক লাখ, তিন লাখ ও পাঁচ লাখ গাড়ি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সালে চীনের ছাংছুন শহরে এফএডাব্লিউ কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি চীনের প্রথম গাড়ি-নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। 'হোংছি' ছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানের 'চিয়েফাং' 'বেস্টার্ন' ইত্যাদি ব্রান্ডের গাড়ি রয়েছে।

৮. চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে চীনে চিলির ফল রফতানি রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। চীনে চেরি, আঙুর ইত্যাদি ফলের চাহিদা বৃদ্ধিই এর মূল কারণ।

চিলির রফতানি উন্নয়ন সংস্থা প্রোচিলি জানায়, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২০টিরও বেশি পণ্যের রফতানি আগের বছরের চেয়ে বেশি ছিল। এসব পণ্যের আছে আপেল, কিইউই, ভুট্টার বীজ, শুকনা ফল, দুগ্ধজাত পণ্য, ও শুকরের মাংস।

উল্লেখ্য, চিলির রফতানিপণ্যের মধ্যে ফল শীর্ষে। দেশটির রফতানি-আয়ের ৮৮ শতাংশই আসে ফলমূলের খাত থেকে।

৯. ২০১৯-২০ অর্থবছরে মিসরের বাজেট-ঘাটতি জিডিপি'র ৬.৪ শতাংশে দাঁড়াবে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা মিনা জানিয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মিসরের বাজেট-ঘাটতি ছিল ৯.৪ শতাংশ।

বার্তাসংস্থা জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট-ঘাটতি হতে পারে জিডিপি'র ৭.৮ শতাংশ। তবে, অর্থনৈতিক সংস্কার ও অন্যান্য ইতিবাচক উপাদানের কারণে ভবিষ্যতে ঘাটতি ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।

১০. বাংলাদেশে যত কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন, তাঁদের অর্ধেক এবার বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেননি। চলতি অর্থবছরে নির্ধারিত সময় (২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ১৬ লাখ ৯১ হাজার ৬১০ জন টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দিয়েছেন। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ৩৭ লাখ টিআইএনধারী আছেন। বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডরন (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআরের সূত্রে এও জানা গেছে যে, এবার মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১০৫ জন টিআইএনধারী আবেদন করে দুই মাস পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছেন। তাঁরা সবাই রিটার্ন জমা দিলে, রিটার্ন জমাদানকারীর মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ২০ লাখ ৬ হাজার ৭১৫টিতে।

এদিকে, সার্বিকভাবে এবার রিটার্ন জমা যেমন বেড়েছে, তেমনি কর আদায়ও বেড়েছে। এবার নির্ধারিত সময়ে ১৬ লাখ ৯১ হাজার ৬১০ জন টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দিয়ে ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা কর দিয়েছেন। গত অর্থবছরে নির্ধারিত সময়ে ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩৪ জন রিটার্ন দিয়ে ৪ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা কর দিয়েছিলেন। এবার সোয়া দুই লাখের মতো বেশি রিটার্ন জমা পড়েছে এবং ২৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।

এবার রিটার্ন জমার সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে, বেসরকারি চাকরিজীবীদের রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করাকে।

১১. বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে 'কর্মসংস্থান কর্মসূচিভিত্তিক নীতি-কৌশল ঋণ সহায়তা' হিসেবে আগামী তিন বছর মেয়াদে ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ-সহায়তা দেবে। এই ঋণ সহায়তার আওতায় প্রখম বছরের (২০১৯) অংশ হিসেবে দেয়া হবে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার। গত ১২ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে এই ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানিয়ে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংক থেকে প্রাপ্ত ঋণের মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ একক ঋণ। বাংলাদেশ সরকার বাজেট সহায়তা হিসাবে প্রাপ্ত এ অর্থ যেকোনো উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় করতে পারবে।

১২. বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংকগুলোতে এখন খেলাপি ঋণের সংকট চরমে পৌঁছেছে। গত ৬ বছরে নতুন ৯ ব্যাংকের ৪ হাজার ২৭০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। আর গত দুই বছরে নতুন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। এর মধ্যে সংকটে থাকা ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণই ৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা।

২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা নতুন ব্যাংকগুলো হলো ফারমার্স, মেঘনা, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, মিডল্যান্ড, ইউনিয়ন, মধুমতি, এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল ও এনআরবি গ্লোবাল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর শেষে নতুন ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৫৬০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয় ৯৬০ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৭০ কোটি টাকা।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040