1223
|
বন্ধুরা, সম্প্রতি আমরা চীনের বিখ্যাত পিংপং (টেবিল টেনিস) খেলোয়াড় তেং ইয়া পিংয়ের লেখাপড়া গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আজ আমরা তার ধারাবাহিক কল্পের শেষ অংশ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, কেমন?
টুটুল: ১৯৯৭ সালে তেং ইয়া পিং ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ইতোমধ্যে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি খোলাখুলিভাবে বলেন, একজন খেলোয়াড় থেকে একজন ছাত্রী হয়েছেন, বিশেষ করে বিদেশে লেখাপড়া করার সময় তিনি প্রথমে ইংরেজি বলতে পারতেন না। তিনি বলেন, "আমি প্রথমে ইংরেজি কিছুই জানতাম না, এখন আমি ইংরেজি ভাষায় শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। প্রথমে ব্রিটেনে আমার একজন বন্ধুও ছিলোনা এবং আমি কাউকে চিনতামও না, কিন্তু এখন অনেক বন্ধু আছে। প্রথমে অনেক কনফিউজড, তারপর অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করি। প্রতিটি মুহূর্তে অনেক কষ্ট পেয়েছি, কিন্তু বিদেশে লেখাপড়ার জীবন আমার জন্য একটি জানালা খুলে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমি সত্যিকার বিশ্বকে জানার সুযোগ পেয়েছি। "
তেং ইয়া পিং বেইজিং অলিম্পিক গেমসের বিডিং দলের একজন সদস্য হিসেবে মস্কো যান। বেইজিং ২০০৮ অলিম্পিক গেমসের বিডিংয়ের জন্য তিনি কাজ করেন।
২০০১ সালের ১৩ জুলাই তেং ইয়া পিং ইংরেজিতে অন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সদস্যদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "দয়া করে চীনের খেলোয়াড়দেরকে একটি সুযোগ দেবেন। আমাদের একবার অলিম্পিক গেমস আয়োজন করতে দিন"।
জ্ঞানের সাগরের কোনো সীমানা বা শেষ নেই। ২০০২ সালে তেই ইয়া পিং একজন ম্যারাথন খেলোয়াড়ের মত আবার স্টার্টিং লাইনে প্রস্তুত থাকেন। তিনি ক্যামব্রিজে পিএইচডি শুরু করেন। তার গবেষণার বিষয় হল "চীনের উপর ২০০৮ অলিম্পিক গেমসের প্রভাব।" তেং ইয়া পিংয়ের চীন-সম্পর্কিত গবেষণা অব্যাহতভাবে চলতে থাকে।
২০০৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ক্যামব্রিজে লেখাপড়ার সময় তেং ইয়া পিং বেইজিং অলিম্পিকের সাংগঠনিক কাজের জন্য ফিরে আসেন। তিনি বলেন, আমার শিক্ষক চীনের অর্থনীতি নিয়ে ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা করেছেন। তিনি জানেন ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক গেমস চীনের অর্থনীতির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এজন্য এ গবেষণার অনেক অর্থ আছে। এজন্য তিনি আমাকে ফিরে আসার অনুমতি দেন। কাজ করতে করতে গবেষণাও করি। ভবিষ্যতের কাজের দায়িত্ব অনেক, কিন্তু এটা হচ্ছে একটা ভালো সুযোগ।"
২০০৪ সালের বসন্ত উতসবের সময় তেং ইয়া পিং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাপত্র লেখা নিয়ে অনেক ব্যস্ত। এজন্য তিনি পরিবারের সাথে সাক্ষাত্ করতে পারেন না। তিনি অনেক ফ্রজেন ডাম্পলিং কেনেন। খাবার রান্নার সময় বাঁচিয়ে তিনি গবেষণাপত্র লিখতে থাকেন।
"অনেকে মনে করেন, আমি নিজেকে কষ্ট দেই, কেউ কেউ বলেন , আপনার ইতোমধ্যে অনেক সুনাম ও পুরস্কার আছে। আপনার ভবিষ্যত জীবনে মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি না থাকলেও অনেক ভালো জীবন উপভোগ করতে পারবেন। তাছাড়া, আপনি চাইলে আপনাকে মাস্টার্স এবং পিএইচডির জন্য এত কষ্ট করতে হবেনা, কারণ আপনি খুঁজলে দেখবেন অনেকেই আপনাকে গবেষণাপত্র লিখে দেবেন। তিনি এর উত্তরে বলেন, "আমি 'গিল্ডিংয়ের' জন্য লেখাপড়া করিনা, লেখাপড়া নিয়ে আমার স্বপ্ন আছে, এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমি লেখাপড়া করি"।
তিনি বলেন, বিদেশি বন্ধুদের সাথে আদানপ্রদানের সময় আমি অনুভব করি যে, আমার জ্ঞানের অভাব রয়েছে এবং যোগাযোগেরও সমস্যা আছে। আমার ভিত্তি খুব দুর্বল, এটা হলেও আমি শর্টকাট চলতে চাই না।
তেং ইয়া পিংয়ের লেখাপড়া ও পিংপংয়ের উজ্জ্বল সাফল্য তিনি মেধার দ্বারা অর্জন করেন নি। কোনো কিছুই তার অনুকূলে ছিলো না। অধ্যবসায় এবং ইতিবাচক মনোভাব দিয়ে তিনি একটার পর একটা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জীবনের পথে অব্যাহতভাবে নতুন স্বর্ণপদক জয় করে আসছেন।
তেং ইয়া পিং বলেন, "আমি এখন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির খেলোয়াড় কমিটি, ক্রীড়া ও পরিবেশ কমিটি এবং সংস্কার কমিটির সদস্য। বিশেষ করে খেলোয়াড় কমিটির সদস্যরা সবাই বিখ্যাত অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। দীর্ঘ সময় ধরে আমি এশিয়ার একমাত্র সদস্য হিসেবে সেখানে আছি। এজন্য আমি শুধু চীনের প্রতিনিধি নই, আমি এশিয়ার প্রতিনিধি। আমি মনে করি এশিয়া ও তৃতীয় বিশ্বের দেশের খেলোয়াড়দের অধিকার এবং স্বার্থ খোঁজা ও রক্ষা করার দায়িত্ব আমার।
তেং ইয়া পিংয়ের প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিকে খেলোয়াড় কমিটি একটি প্রস্তাব দেয়, তাতে বলা হয় অলিম্পিক কমিটির সদস্য নির্বাচনের সময় ৮জন সদস্যের মধ্যে একজন এশিয়ার সদস্য থাকতে হবে।
তার ক্যামব্রিজে পিএইচডি এখন চলছে। লেখাপড়া সম্পর্কে তিনি বলেন, "সত্যি অনেক কঠিন, আমার অনেক চাপ আছে, দিন রাত, সবসময় টেনশনে থাকি, এজন্য অনেক কষ্ট পাই। কিন্তু লেখাপড়ার এ সময়টাকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ এর মাধ্যমে আমি অন্যান্য একটি বিশ্ব দেখেছি এবং নিজের নতুন মূল্য খুঁজে পেয়েছি"।
তিনি বলেন, যদি এশিয়া গেমস, বিশ্ব টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ, এবং অলিম্পিক গেমস চ্যাম্পিয়ন আমার একটি স্বপ্ন হয়, তাহলে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর ডিগ্রি, নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি হচ্ছে আমার আরেকটি স্বপ্ন।
তেং ইয়া পিং বলেন, একজন খেলোয়াড় বা ছাত্রী যাইহোক না কেন অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন সবার মধ্যে অধ্যবসায়, অধ্যবসায় এবং অধ্যবসায় থাকতে হবে। তিনি সবসময় নিষ্ঠুরভাবে নিজেকে অনুরোধ করতে থাকেন, "আমাকে এটা ভালোভাবে করতে হবে। এটা ভালোভাবে সম্পন্ন করতে আমি কোনো এক্সকিউজ দিতে চাইনা"।
আকাশ: বন্ধুরা, আপনারা ধারাবাহিকভাবে আমাদের অনুষ্ঠানে তেং ইয়া পিংয়ের গল্প শুনেছেন। আমরা ভাবছি আপনারা নিশ্চয়ই তার কণ্ঠ শুনতে চান, তাইনা? এখন আমরা তার কণ্ঠে একটি গল্প শুনবো, কেমন?
টুটুল: আমদেরকে ছোটবেলা থেকে অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়। সেটা ছোট বা বড় আকারের প্রতিযোগিতা যাইহোক না কেন। প্রতিটি প্রতিযোগিতায় জয় বা পরাজয় থাকবেই। পরাজয় নিয়ে কোনো অনুশোচনা করা যাবে না। নিজের ভুলগুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে, ভুলগুলো সংশোধন করতে হবে এবং ধীরে ধীরে নিজের উন্নতি করতে হবে।
আমি অনেক সৌভাগ্যবান, ১৩ বছর বয়সে আমি পিংপং জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হই। তখন অনেক কোচ, এমনকি জাতীয় দলের কোচও আমার পক্ষে ছিলেন না, তারা মনে করেন, আমার কপাল ভালো, তাই আমি এ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন অর্জন করেছি। আমি নিজেও জানি যদি আমি এই এক নম্বর অবস্থান ধরে রাখতে চাই, তাহলে আমার অনেক শক্তি থাকতে হবে। এই শক্তি কোথা থেকে আসে? এই শক্তি আসে আমাদের পিংপিংয়ের প্রতি সমঝোতা থেকে, আমাদের মনোভাব থেকে, আমাদের দক্ষতা ও পিংপংয়ের কৌশল থেকে।
আমার উচ্চতা খুব কম, সেজন্য আমি হে নান প্রদেশের দল এবং জাতীয় দলে প্রবেশ করতে পারতাম না, তখন আমার বাবা এবং অন্যান্য কোচ আমাকে অনেক নির্দেশনা দেন। তারা আমাকে বলেন, আমাকে অন্য খেলোয়াড়দের চেয়ে আরো দ্রুত খেলতে হবে, শক্তি দিয়ে খেলতে হবে এবং আমার পিংপং দক্ষতাও অন্যদের চেয়ে ভিন্ন হতে হবে।
আকাশ: বন্ধুরা, তেং ইয়া পিংয়ের ধারাবাহিক গল্প আজ শেষ। সেই সঙ্গে ২০১৮ সালও শেষ হয়ে আসছে। অপেক্ষা করছে নতুন বছর অর্থাত্ ২০১৯ সাল। আশা করি, নতুন বছরের উপহার হিসেবে তেং ইয়া পিংয়ের গল্প আপনাদের উতসাহিত করবে।
জীবন খুব ছোট। সময় খুব দ্রুত চলে যায়, বয়ে যায় নদীর মত। আশা করি নতুন বছরে আপনাদের মনের স্বপ্ন ধাপে ধাপে পূরণ হবে, নিজের পছন্দমতো জীবন কাটাতে পারবেন।