চীনের বাওটি গ্রুপের কথা
  2018-12-10 14:03:03  cri

বন্ধুরা, টাইটেনিয়াম হচ্ছে এক ধরনের বিরল হালকা ধাতু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে টাইটেনিয়ামের ব্যাপক উত্পাদন শুরু হয়। এর পর মহাকাশ গবেষণায় টাইটেনিয়ামের ব্যবহার বাড়ে। চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি রহস্যময় টাইটেনিয়াম নগর আছে। চীনের প্রথম হাইড্রোজেন বোমা, প্রথম পারমাণবিক সাবমেরিন, প্রথম সফ্ট ল্যান্ডিং উপগ্রহ, শেনচৌ মহাকাশযান ও সি৯১৯ বিমান তৈরিতে টাইটেনিয়াম ব্যবহৃত হয়। নগরটির প্রাণ হল বাওটি গ্রুপ।

বাওটি গ্রুপ শানসি প্রদেশের বাওজি শহরে অবস্থিত। গ্রুপটির আগের নাম 'বাওজি অ-লৌহ ধাতু উত্পাদন কারখানা'। কারখানাটি চীনের অধিকাংশ টাইটেনিয়াম উন্নয়ন, গবেষণা ও উত্পাদনের দায়িত্ব পালন করে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও জাপানের পর চীনের অবস্থান চতুর্থ। এ সম্পর্কে বাওটি গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার লেই রাং ছি বলেন, গ্রুপটির প্রযুক্তি ও উত্পাদিত পণ্যের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উঠে গেছে। গত বছর গ্রুপটি চীনের মনুষ্যবাহী ডুবোজাহাজ এবং চীনের নিজস্ব সি৯১৯ বিমানসহ বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, 'বিমান, জাহাজসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উত্পাদনে টাইটেনিয়াম ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে আমাদের ব্যবস্থা সুসম্পূর্ণ। আমাদের গ্রুপের পণ্যের মান চীনে প্রথম এবং বিশ্বে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে।'

লেই রাং ছি বলেন, তালিকাভুক্ত সংস্থায় পরিণত হওয়া একটি স্থায়ী প্রক্রিয়া। আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠার পাশাপাশি, বাজারের গবেষণা ও উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির নবায়ন ও উদ্ভাবন হল বাওটি গ্রুপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। গ্রুপটি প্রতিবছরের আয়ের ৫ শতাংশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় ব্যয় করে। এ ছাড়াও, গ্রুপটি দেশি ও বিদেশি উৎপাদন-সরঞ্জামা প্রতিনিয়ত আপডেট করে থাকে। গ্রুপটির একজন পুরাতন শ্রমিক লি লিন হু ১৯৮৪ সালে এখানে কাজ শুরু করেন। তিনি হলেন ম্যানুয়াল উত্পাদন-প্রক্রিয়া থেকে পূর্ণ যান্ত্রিকীকরণে পরিবর্তন-প্রক্রিয়ার সাক্ষী। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আগে আমাদের উত্পাদনপদ্ধতি ছিল ম্যানুয়াল। তখন কোন বড় যন্ত্রপাতি ছিল না এবং মাসিক উত্পাদনের পরিমাণও ছিল কম। তখন প্রতিমাসে উত্পাদিত হতো মাত্র ১০ টন। এ ছাড়া, আমাদের পরিশ্রমও করতে হতো বেশি। কারখানায় প্রচণ্ড গরম। আর এখন আমাদের উত্পদান-প্রক্রিয়ার প্রায় সবকিছু যন্ত্রই করে থাকে।"

লি লিন হু বলেন, শ্রমিকদের আর আগের মতো কায়িক শ্রম দিতে হয় না। তাদের কাজের পরিবেশও উন্নত হয়েছে। পাশাপাশি অনেক বেড়েছে উত্পদানের হার। বর্তমানে কারখানায় মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টন পণ্য উত্পন্ন হয়। প্রথম কারখানার পরিচালক সুন স্যিয়াও ইয়ং ২০০৭ সালে গ্রুপে যোগ দেন। তাঁর মনে হয়, প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম অবস্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শ্রমিকদের ভূমিকা আরো গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমাদের আগের পরিচালক আমাদেরকে পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কারখানার পরিচালককে সবার আগে দায়িত্বশীল হতে হয়। শ্রমিকরা দায়িত্বশীল পরিচালককে সম্মান করেন।"

সুন স্যিয়াও ইয়ং সি'আন স্থাপত্য ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্পাদান বিভাগ থেকে ডিগ্রি নেওয়ার পর বাওটি গ্রুপে কাজ করছেন ১১ বছর ধরে। তিনি দশ বছরে কারখানা পরিচালনা পর্যায়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি পুরাতন শ্রমিক ও কর্মীদের কাছ থেকে অনেককিছু শিখেছেন। তিনি বলেন, "প্রতিবছর আমার স্ত্রী তাঁর বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে যান। কিন্তু দশ বছরে আমি কখনও কোথাও যেতে পারিনি। আমার বাইরে যাওয়ার সময় নেই। আমার কারখানার শ্রমিকের সংখ্যা ১৫০ জনেরও বেশি। আমি কারখানাটির উত্পাদন, সরঞ্জাম, মানদন্ড ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করি। আমিও একটি লম্বা ছুটি নিতে চাই। কিন্তু আমার অনেক কাজ। আমি যেতে পারি না।"

পরিশ্রমের মাধ্যমে বাওটি গ্রুপ বিশ্ব পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। লি লিন হু হলেন গ্রুপটির একজন শ্রমিক। আগামী বছরে তিনি অবসর গ্রহণ করবেন। তিনি বলেন, অবসর গ্রহণ করার পর তিনি ভ্রমণে বের হবেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমি বাওটি গ্রুপে কাজ শুরুর পর থেকেইা ভীষণ ব্যস্ত। এই দীর্ঘ সময়ে আমি শুধু ছিংদাও ও বেইজিং যেতে পেরেছি। আমি অবসর গ্রহণ করার পর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সারা চীন ভ্রমণ করব।"

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাওটি গ্রুপ ৯ জন বিজ্ঞানী, নয়টি বিশিষ্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিকল্পনা, এবং ১০ জন মৌলিক পর্যায়ের প্রযুক্তিবিদকে পুরস্কার প্রদান করে। এ জন্য গ্রুপ ব্যয় করে ১৭.১ লাখ ইউয়ান। জেনারেল ম্যানেজার লেই রাং ছি বলেন, গ্রুপটি বরাবরই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে নব্যতাপ্রবর্তন ও প্রতিভাবান ব্যক্তিরদের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে থাকে।

গ্রুপটির পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ই ইউ), জাপান, রাশিয়া ও ভারতে রফতানি হয়। এ সম্পর্কে মিস্টার লেই বলেন, "বহু বছরের পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা বোয়িং ও এয়ারবাস কোম্পানির সরবরাহকারীতে পরিণত হয়েছি। আমাদের পণ্য মানে প্রশ্নে দু'টি কোম্পানির সার্টিফিকেট পেয়েছে। আমাদের রফতানির পরিমাণ চীনের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ।"

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040