বলছিলেন ই উ'র স্থানীয় বাসিন্দা হে হাই মেই। তিনি হলেন হান মেই পোশাক কোম্পানির চেয়ারম্যান। হে হাই মেই ১৯৮৭ সাল থেকে স্কার্ফ বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর কোম্পানি ই উ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্রের স্কার্ফ শিল্পের নেতৃস্থানীয় উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছো। কোম্পানির প্রতিবছরে মুনাফা হয় ৫ কোটি ইউয়ান আরএমবি। প্রতিবছরে কোম্পানি কর দেয় ৪০ লাখ ইউয়ানেরও বেশি।
আসলে ৪০ বছর আগে হে হাই মেই ভাবেননি যে, তাঁর জন্মস্থান চীনের মূল ভূভাগের ছয়টি সবচেয়ে শক্তিশালী জেলার একটিতে পরিণত হবে। বর্তমানে ই উ জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত 'বিশ্বের বৃহত্তম বাজার' হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ সম্পর্কে হে হাই মেই বলেন, "ই উ'র তিন দিকে পাহাড়। এখানে লোকসংখ্যা বেশি, কিন্তু আয়তন কম। আমরা আগে দরিদ্র ছিলাম। আমি ছোটবেলায় বসন্ত উত্সবেও ক্ষুধার্ত থাকতাম এবং আমার কোন ভাল পোষাক ছিল না। তখন ই উ'র পরিবেশও খুবই খারাপ ছিল। কোন ভাল সড়ক ও বাড়িঘর ছিল না। ১৯৭৮ সালে আমার বড় ভাই হাংচৌ থেকে বাড়িতে চলচ্চিত্রের কিছু পোস্টকার্ড নিয়ে আসেন। আমি পোস্টকার্ডগুলো সিনেমার প্রবেশদ্বারে বিক্রি করি। তিন দিনে বিক্রি শেষ হয় এবং আমি ৩০ ইউয়ান আয় করি। তখন ৩০ ইউয়ান রেনমিনপি ছিল আমার স্বামীর এক মাসের বেতন। তখন থেকেই আমি নিজের ব্যবসা শুরুর চিন্তা করি।"
তখন চীনে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ধারণা ছিল না। হে হাই মেই চলচ্চিত্রের পোস্টকার্ড ই উ'র বিভিন্ন গ্রামে বিক্রি করা শুরু করেন। ১৯৮১ সালে হে হাই মে'র আমানত ৫০ হাজার ইউয়ান হয়। আস্তে আস্তে তিনি গ্রাম থেকে শহরে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন।
১৯৮২ সালে হে হাই মেই শিশুদের পোষাকের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি স্থানীয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধানের পদে নিযুক্ত হন। কিন্তু তখন ই উ'র স্থানীয় সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন করেনি। সেজন্য হে হাই মেই তখন ই উ জেলার গর্ভনর সিয়ে গাও হুয়াকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের প্রস্তাব দেন। এ সম্পর্কে হে হাই মেই বলেন, "আমি স্থানীয় সরকারি ভবনের বাইরে গর্ভনর সিয়েকে টেনে ধরে বলি, আমার মোজা শাংহাইয়ে বিক্রি হয়। শাংহাইতে মোজা সহজে বিক্রি করা যায়, অথচ নিজের জন্মস্থানে এ-ব্যবসাকে সমর্থন দেওয়া হয় না!"
১৯৮২ সালের নভেম্বরে ই উ জেলার কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) কমিটি কৃষক ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসম্মেলন আয়োজন করে। হে হাই মেইসহ কয়েক শ ব্যবসায়ী সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। সম্মেলনে সিয়ে গাও হুয়া সকল জেলার নাগরিকদেরকে পরিশ্রম করে স্বচ্ছল সমাজ বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। এ সম্পর্কে হে হাই মেই বলেন, "তখন গর্ভনর সিয়ে বলেন, কৃষকদেরকে শহরে ব্যবসা করার উত্সাহ দেওয়া উচিত।'
১৯৮২ সালে ই উ'র হুছিংমেন বাজার খোলা হয়। হে হাই মেই জেলাটির প্রথম দফা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর একজন প্রতিষ্ঠাতা। অপ্রত্যাশিতভাবে বাজারটি প্রতিষ্ঠিত হবার পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে দোকানের সংখ্যা ৭০০টি হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে বাজারটিতে পণ্য বিক্রি হয় ২ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার ইউয়ান। ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে বাজার হুছিংমেন থেকে সিনমালু এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। বাজারের নতুন নাম হয় 'ই উ পণ্য বাজার'। তখন দোকানের সংখ্যা ছিল ২৮০০।
১৯৮৬ সালে বাজারটি তৃতীয়বারের মতো স্থানান্তরিত হয়। সিনমালু থেকে ছেংচং রোডে স্থানান্তরিত হয় বাজারটি। স্থানীয় সরকার ৪৪ লাখ ইউয়ান বরাদ্দ দেয়। নতুন বাজারের আয়তন ৪৪ হাজার বর্গমিটার। নির্দিষ্ট বুথ ৪০৯৬টি এবং অস্থায়ী বুথ সহস্রাধিক। সে বছরে বাজারের বিক্রি ছিল ১০ কোটি ইউয়ানেরও বেশি। ১৯৯০ সালের শেষ দিকে বাজারটি চীনের বৃহত্তম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে পরিণত হয়।
ই উ'র সাফল্য সম্পর্কে হে হাই মেই মনে করেন, ই উ বাসিন্দাদের পরিশ্রম হল একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমিসহ ই উ'র বাসিন্দারা সত্যিই পরিশ্রমী। আসলে এখন আমি অবসর গ্রহণ করতে পারি। আমি এখন ধনি এবং বয়স্ক। আমাদের বর্তমান পরিবেশ ভাল। স্থানীয় সরকার ও সিপিসি আমাদেরকে সমর্থন দিচ্ছে। কিন্তু আমি কাজ করে যাচ্ছি।"
বহু বছর ধরে ই উ'র ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিশিষ্ট প্রতিনিধি হিসেবে হে হাই মেই আলাদাভাবে ই উ বেসরকারি ব্যবসায়ী সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান, চিনহুয়া শহরের বেসরকারি ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান, চেচিয়াং ব্যবসায়ী সমিতির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বহুবার ই উ শহর, চিনহুয়া শহর ও চেচিয়াং প্রদেশের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব পদে হে হাই মেই ই উ'র উন্নয়ন এবং বাজারের ভবিষ্যৎ ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।
চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়ার পরবর্তী ৪০ বছর হচ্ছে ই উ'র দ্রুত উন্নয়নের ৪০ বছর। ৪০ বছরে হে হাই মেই ও ই উ'র জনগণ পরিশ্রম ও উত্সাহ দিয়ে নিজেদের সুন্দর জীবন গড়ে তুলেছেন। ই উ'র সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সাক্ষী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে হে হাই মেই মনে বলেন, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পথে অবিচল থাকা উচিত। তিনি বলেন, "সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি না-হলে ই উ বর্তমান সাফল্য অর্জন করতে পারতো না। ই উ সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নত হয়েছে। একজন ই উ'র মানুষ হিসেবে আমি গর্ব করি। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতির সুবিধাভোগী হলেন জনগণ। সেজন্য আমরা সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতিতে অবিচল থাকতে চাই।"