বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশা
  2018-12-02 19:34:58  cri
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর দেশজুড়ে এখন নির্বাচনী আমেজ। রাজধানীসহ সারাদেশে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ৩ হাজার ৬৫টি। ২ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত হবে এবারের জাতীয় নির্বাচনে কতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে গড়ে ১০ জন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। ঢাকা ১৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে সর্বোচ্চ ২৭টি। আর সবচেয়ে কম মনোনয়ন জমা পড়েছে মাগুরা ২ আসনে মাত্র ৪টি।

বিভাগওয়ারি তথ্য অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে পড়েছে সবচেয়ে বেশি ৭০৮টি মনোনয়নপত্র। এরপরই চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৮৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া রংপুর বিভাগে ৩৬১ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৫৩ জন, খুলনায় ৩৫১ জন, ময়মনসিংহে ২৩৬ জন, বরিশালে ১৮২ জন এবং সিলেট বিভাগে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১৭৭ জন।

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ২ হাজার ৫৬৭টি। আর স্বতন্ত্র ৪৯৮টি। আওয়ামী লীগের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে বিএনপির। ২৬৪ আসনে আওয়ামী লীগের ২৮১টি মনোনয়নপত্রের বিপরীতে ২৯৫ আসনে বিএনপির মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ৬৯৬টি। ৩৬ আসনে আওয়ামী লীগের আর ৫ আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই।

তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, গত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১২টি দল অংশ নিয়েছিল। তখন মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল ১ হাজার ১০৭টি। বাছাইয়ের পর টিকেছিল ৮৭৭টি। সেবার ১৫৩ আসনে একজন করে প্রার্থী থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এর আগে নিবন্ধন চালু হওয়ার পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ২৮টি দল। সেবার প্রার্থী ছিল ১ হাজার ৫৬৭ জন। নিবন্ধন চালুর আগে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৫টি দলের ১ হাজার ৯৩৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তারও আগে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ৮১টি দলের ২ হাজার ৫২ জন। আর পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ৭৫টি দলের ২ হাজার ৭৮৭ জন প্রার্থী। এ হিসেবে এবার রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নির্বাচনে।

এদিকে ২৯ নভেম্বর নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ১০ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি কে এম নুরুল হুদা। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, সব দলের মনোনয়নপত্র দাখিলের উৎসব প্রমাণ করে নির্বাচনী ব্যবস্থায় সবার আস্থা তৈরি হয়েছে। এবার তাই অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সিইসি। কোনোভাবেই যেন আস্থার পরিবেশ নষ্ট না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন সিইসি। দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য সমান সুযোগ রেখে সবাইকে আইন মেনে নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলেন তিনি।

এদিকে নির্বাচন কমিশন এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলা হলেও বিরোধী দল বিএনপি বলছে, নির্বাচন কমিশন সরকারের নির্ধারিত পথে চলছে। এরই মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের রায়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না কারারুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারস খালেদা জিয়াসহ প্রায় এক ডজন হেভিওয়েট নেতা। সবশেষ ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ এক রায়ে বলেছে, ২ বছরের বেশি কারদণ্ডে দণ্ডিত কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এরই মধ্যে বাতিল হয়ে গেছে বগুড়া ও ফেনীতে ৩ আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র। বিএনপি এর আগে বারবার বলে এসেছে দলীয় চেয়ারপারসনকে ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি এখন কি সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখার বিষয়।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকাস্থ আবাসিক প্রতিনিধি রেনজে টেরিংকের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। তাদের দুজন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকলেও তারা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না বলে জানিয়েছেন। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি দলে ২ জন করে ১২টি দল নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পাঠাবে। সার্ক অঞ্চলসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০ হাজার পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।

গবেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো যে আচরণ করছে তাতে আশা করা যায় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে। আর তা হলে তা দেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040