সংবাদ পর্যালোচনা: বাংলাদেশে ধনকুবের বৃদ্ধি ও বিশ্লেষক মতামত
  2018-12-01 15:38:34  cri

বাংলাদেশে সম্প্রতি 'অতি ধনীর সংখ্যা' বেড়েছে। এই বৃদ্ধির হার অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষে। এমনকি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি চীনেরও আগে রয়েছে বাংলাদেশ। কেন ও কীভাবে বাংলাদেশে 'অতি ধনীর সংখ্যা' বাড়ছে। বিস্তারিত থাকবে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ-এক্স 'ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানায়, ধনকুবের বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও ধনকুবেরের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান তাদের প্রতিবেদনে নাই। বাংলাদেশে এখন শতকরা ১৭ দশমিক ৩ ভাগ হারে অতি ধনীর সংখ্যা বাড়ছে। যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের পরই চীনের অবস্থান। চীনে বাড়ছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। এরপর তালিকায় আছে ভিয়েতনাম, কেনিয়া, ভারত, হংকং ও আয়ারল্যান্ড। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ধনকুবের বাড়ার হার পর্যবেক্ষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

যাদের সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ডলার বা তার চেয়ে বেশি, তাঁদেরকেই অতি ধনী বা ধনকুবের বলছে ওয়েলথ এক্স। বাংলাদেশি মূদ্রায় সম্পদের পরিমাণ আড়াইশ' কোটি টাকার বেশি হলেই তাকে 'অতি ধনী' বলা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে অতি ধনী মানুষ সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে, তারপর জাপান ও চীন। প্রথম দশটি দেশের তালিকায় আছে জার্মানি, ক্যানাডা, ফ্রান্স, হংকং, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড এবং ইটালি।

বাংলাদেশের তথ্য:

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ২০১০ সালের তুলনায় বাংলাদেশে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের আয় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। তাঁদের মাসিক আয় ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকা। একই সময়ে সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে ৫৯ শতাংশ। তাঁদের মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৭৩৩ টাকায়। ২০১০ সালে আয় ছিল ১ হাজার ৭৯১ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত এক বছরের ব্যবধানে দেশের ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৫ হাজার ৮৩৪ জন। বর্তমানে মোট কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৬৭ হাজার ৮৭২ জন। এক বছর আগেও এ সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৩৮ জন।

ধনকুবের বাড়ার নেপথ্যে কী?

ওয়েলথ এক্স শুধু বলছে, ''এটা আশ্চর্যজনক যে ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে চীন বিশ্বের এক নম্বর দেশ নয়, এ অবস্থান এখন বাংলাদেশের।"

অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণ-এর চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এক সাক্ষাতকারে বলেন, ''বাংলাদেশে এখন তিন ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। রাষ্ট্রীয় বা প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট হচ্ছে। ব্যাংক খাতে এবং সরকারি ক্রয়-বিক্রয় খাতে সেটা লক্ষ্যনীয়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পুঁজি পাচার হচ্ছে দেশের বাইরে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশে লুটপাটের সংস্কৃতি বহাল আছে। ফলে বৈষম্য বাড়ছে। একদিকে কিছু লোক সম্পদের পাহাড় গড়ছে, সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে।'' তিনি বলেন, ''এর সাথে অর্থনেতিক উন্নয়নের কোনো সম্পর্ক নেই। এই অর্থ এখানে বিনিয়োগ হয় না, হলে এখানে শিল্প কারখানা হতো, কর্মসংস্থান বাড়ত।''

তাঁর মতে, ''বিচারহীনতা এবং জবাবদিহিতা না থাকায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।''

ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিদেশি গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "বাংলাদেশে অতি ধনী বাড়ছে, এর মানে হলো উন্নয়নের সিংহভাগ একটি অংশের পকেটে চলে যাচ্ছে। জিডিপির হিসাব দিয়ে তো আর উন্নয়নের হিসাব হয় না। যাঁরা এই তালিকায় আছেন, তাঁদের নাম জানা যায়নি। তবে তারা যে ক্ষমতা ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে সম্পদ অর্জন করেছেন, তা বলাই যায়। এটা কোনো উন্নয়নের দৃষ্টান্ত নয়, বৈষম্যমূলক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত।''

এই পরিস্থিতির সঠিক কারণ অনুসন্ধান ও আর্থিক অনিয়মের যথাযথ তদন্ত করার দাবিও জানায় সংস্থাটি।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040