শীতকালে সবচেয়ে উষ্ণ একটি প্যাকেট
  2018-11-28 15:59:39  cri

'গরিব হলেও অন্য মানুষের জিনিষ আমরা নিয়ে নিতে পারি না,' বলেছেন নানী লু। সম্প্রতি ৭০ বছর বয়সী এ প্রবীণ নারীর গল্প শুনে অনেকে অভিভূত হয়েছেন। নানী লু হাং চৌ শহরের রাস্তায় ফুল বিক্রয় করেন। একদিন তিনি রাস্তায় একটি প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি প্যাকেকটির মালিককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে থাকেন। অবশেষে তিনি পুলিশের মাধ্যমে অনেক চেস্টার পর তাকে খুঁজে পান। তিনি প্যাকেটটি মালিকের হাতে তুলে দেন।

১০ নভেম্বর ভোর ৩টা। নানী লু হাং চৌ হুয়াং লং স্টেডিয়ামের কাছাকাছি ফুল বিক্রি করেন। যখন তিনি বিক্রি শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন, তখন তিনি রাস্তায় একটি কালো রঙের প্যাকেট আবিষ্কার করেন। তিনি ভাবলেন, এ প্যাকেটের মালিক নিশ্চয় খুব উদ্বিগ্ন! তিনি বাড়ি না-ফিরে প্যাকেটটির সামনে দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকেন। শীতকালের ভোরে বাতাস খুবই ঠান্ডা। তবে নানী লু নিজের জন্য কোনো চিন্তা করেননি। কিন্তু সকাল পর্যন্ত কেউ প্যাকেটের সন্ধানে কেউ আসলেন না। কোনো উপায় না-দেখে, নানী লু প্যাকেট হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। নানীর মেয়ে প্যাকেটটি দেখে এ ব্যাপারে জানতে চাইল। মেয়েটি প্যাকেট খুলে দেখে ভিতরে অনেক টাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ একট চিঠি। তিনি তার মা-কে নিয়ে আবার ফুল বিক্রয়ের ওই রাস্তায় ফিরলেন। তিনি বলেন, 'আমি ভাবছি, প্যাকেটের মালিক নিশ্চয়ই খুব উদ্বিগ্ন! এতোগুলো টাকা! আমরা অল্প অর্থ উপার্জন করি। কিন্তু আমরা অন্যের টাকা নিতে পারি না।"

অপেক্ষায় আরও অর্ধেক দিন চলে গেল। ইতোমধ্যে বৃষ্টি নেমেছে এবং ঠাণ্ডার মাত্রাও বেড়েছে। কিন্তু প্যাকেটের মালিক এলেন না। দুপুরে, মা ও মেয়ে একসাথে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে প্যাকেটটি পুলিশের কাছে স্থানান্তর করেন। পুলিশ আবার প্যাকেটটি চেক করেন। ভিতরে ১০ হাজার ইউয়ান, একটি আইডি কার্ড, ব্যাংক কার্ড, একটি চিঠি। পুলিশের সাহায্যে, দ্রুত প্যাকেটের মালিককে খুঁজে পাওয়া গেল। মালিক পুলিশ স্টেশনে এলেন এবং নিজের প্যাকেট ফিরে পেয়ে নানী লু'কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানালেন।

তবে এ গল্পের এখানে শেষ হয়নি। তথ্যমাধ্যম নানী লু'র গল্প কাভার করেছে এবং অনেক মানুষ এ গল্প শুনে অভিভূত হয়েছেন। ১৩ নভেম্বর এক ব্যক্তি পুলিশকে ফোন করে বলেন, শীতকালে খুব ঠান্ডা, তিনি নানী লুর জন্য একটি ডাউন জ্যাকেট কিনতে চান। কিন্তু তিনি লু'র ঠিকানা জানেন না। নিয়ম অনুযায়ী, পুলিশ নানীর তথ্য অন্যদেরকে জানাতে পারে না। তাই এ ব্যক্তি কাপড় পুলিশস্টেশনে পাঠান এবং আশা করেন, পুলিশ এ কাপড় নানী লু'কে দেবে। ব্যক্তিটি পুলিশ স্টেশনে যে প্যাকেট পাঠালেন তাতে ছিল একটি ডাউন জ্যাকেট ও একটি সোয়েটার। সঙ্গে আছে একটি নোট, নোটে লেখা আছে: শীত পড়ছে; সুস্থু থাকুন।

নাম-প্রকাশে অনিচ্ছুক এ ব্যক্তি আরও লিখেছেন, "আমি মনে করি, দয়ালু ব্যক্তির আরও বেশি ভালবাসা পাওয়া উচিত। নিয়ম অনুযায়ী, পুলিশ আপনার ঠিকানা আমাকে জানতে দেয়নি। তাই আমি এই প্যাকেটটি পুলিশের কাছে পাঠিয়েছি। কাপড়ের দাম বেশি না। আপানি গ্রহণ করুন। আপনার ব্যবসার সাফল্য কামনা করি। আপনার বিশ্বাস আমি বুঝতে পারি। আপনাকে ভালবাসি।"

ফোনের মাধ্যমে নানী লু'র সঙ্গে যোগাযোগ করতে না-পেরে রাতে পুলিশ পাই ওয়েন ইউ ও তার সহকর্মী কাপড় নিয়ে রাস্তার যেখানে নানী লু ফুল বিক্রয় করেন, সেখানে যান। তারা কাপড় নানী লু'কে দিলেন। কিছুক্ষণ পর পাই ওয়েন ইউর সহকর্মী ছাং চিন পো'র অন্য একটি জায়গায় নানী লু'র সঙ্গে দেখা হয়। তিনি দেখলেন, বাইরে এতো ঠাণ্ডার মধ্যেও নানী লু নতুন কাপড়টি পরেননি। তিনি তাকে কাপড় না-পরার কারণ জিজ্ঞাস করেন। নানী বলেন, বৃষ্টি হচ্ছে, নতুন কাপড় পরলে ভিজে যাবে। ছাং বসে নানীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। আড্ডার এক পর্যায়ে নানী লু তাকে জানালেন, সকালে তিনি বাজারে ফুল কিনেন এবং রাতে বিক্রয় করেন। রাতে ফুল বিক্রি করে তিনি সকালে বাড়ি ফেরেন। ফুল বিক্রয় করার মাধ্যমে নিজের জীবিকা অর্জন করতে পেরে তিনি খুশি।

ছাং চিন পো বলেন, তিনি একজন পুলিশ এবং শক্ত একজন পুরুষ; তবে নানী লু যেন রোদের মতো তার মনে উষ্ণতা এনে দিয়েছেন। যখন নানী লু'র কথা মনে পড়ে তখন তিনি উষ্ণতা বোধ করেন।

পুলিশ নানী লু'কে নিয়ে একটি ছোট ভিডিও তৈরি করে। নানী ভিডিওর মাধ্যমে যারা তাকে উপহার দিয়েছেন, তাদেরকে জানান ধন্যবাদ। নানী লু'র মেয়ে বলেন, 'আমরা তাদের চেহারা চিনি না। তবে তাদেরকে আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।"

উষ্ণতার এ গল্প অব্যাহতভাবে চলছে। কিছুদিন পর, পুলিশ স্টেশনে দেখা গেল আরও অনেকে নানী লু'র জন্য উপহার পাঠিয়েছেন। এসব উপহারের মধ্যে আছে গ্লাভস, টুপি ইত্যাদি। তারা প্যাকেজে নিজেদের নাম লেখেননি।

ইন্টারনেট-ব্যবহারকারীরাও নিজেদের মনোভাব প্রকাশ করেছেন। একজন লিখেছেন, 'এ বিশ্বে যে-কোন জায়গায় উষ্ণতার সন্ধান পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেন, ভালবাসা প্রত্যেক মানুষের মনে থাকে।' নেটিজেনদের কেউ কেউ অন্যদের সাহায্য করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন; আবার কেউ কেউ নানী লু'র কাছ থেকে ফুল কিনতে চেয়েছেন। নানী লু'র গল্প চলছে। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040