বাংলাদেশের রফতানিতে সেবা খাতে রফতানি আয় বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন ধরনের সেবা রফতানি করে প্রায় ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা আগের অর্থবছরের (২০১৭-১৮) একই সময়ের চেয়ে ৫৫ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। প্রিয় শ্রোতা 'সেবা খাত' ও সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
সেবা খাত কি?
সেবা খাতকে প্রচলিত অর্থনৈতিক বিন্যাসের তৃতীয় পর্যায়ের খাত বলা হয়। সেবা খাত মূলত সেবা প্রদান করে থাকে; কিন্তু সরাসরি কোনো উৎপাদন কাজের সঙ্গে জড়িত না। খুচরা বিক্রয়, ব্যাংক, বিমা, হোটেল, রিয়েল এস্টেট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক কর্মকাণ্ড, কম্পিউটার সেবা, বিনোদন, প্রচার মাধ্যম, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সরবরাহ ইত্যাদি কাজ সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত।
সেবা খাত দেশীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেমন, অস্ট্রেলিয়াতে সব ধরনের ব্যবসায় সেবাখাতের অর্জন প্রায় ৮৫%। সব ধরনের কর্মজীবীদের মধ্যে প্রায় ৮৬% সেবা খাতে নিয়োজিত রয়েছে। ভারতের সেবা খাতের ব্যবসায় থেকে জিডিপির প্রায় ৫৫% অর্জিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবসায় প্রতিবছর ৩৫% হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলছে।
বাংলাদেশে গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সেবা খাতে আয় হয়েছিল ৯০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সাম্প্রতিক প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন ধরনের সেবা খাতে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২৫ কোটি মার্কিন ডলার। যার বিপরীতে আয় হয়েছে ১৪০ কোটি ৯৪ কোটি ডলার। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে পরিবহন খাতে জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার। যার বিপরীতে আয় হয় ১৯ কোটি এক লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি হয় এক দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাত, প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।
নির্মাণ সেবা খাতে একই সময় রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। আয় হয় ৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার। ভ্রমণ সেবা খাত থেকে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১০ কোটি ৬২ লাখ ডলার।
টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। আয় হয় ১৪ কোটি ৯২ লাখ ডলার। বিভিন্ন ব্যবসা খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২০ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। আয় হয় ২৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্প ও সেবা খাতের অবদান বেড়েই চলেছে। কিন্তু এ শিল্পের প্রকৃত চিত্র জানা নেই। এর সঠিক তথ্য জানা খুবই জরুরি। এ জন্য প্রায় আট বছর পর চলতি বছরের গোড়ার দিকে বিজনেস ডিরেক্টরি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস।
২০০৯ সালে সর্বশেষ বিজনেস রেজিস্টার করা হলেও দীর্ঘদিন পর এবার নাম পরিবর্তন করে বিজনেস ডিরেক্টরি তৈরি করা হচ্ছে। এতে দেশের সব শিল্প কারখানা, প্রতিষ্ঠান এমনকি অর্থনৈতিক ইউনিটের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।
সেবা খাতের প্রতিবন্ধকতা
বাংলাদেশে সেবা খাতের উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে দুর্নীতি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক পরিচালিত 'সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০১৭' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সালে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ৬৬.৫% খানা দুর্নীতির শিকার হয়েছে। ২০১৭ সালে ৪৯.৮% খানাকে ঘুষ দিতে হয়েছে যা ২০১৫ সালের তুলনায় ৮.৩ পয়েন্ট কম। ২০১৭ সালে সেবা খাতে ঘুষের শিকার খানার হার কমলেও ঘুষ আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের সেবা খাতসমূহে দুর্নীতি প্রতিরোধসহ সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুর্নীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যমান আইনের আওতায় আনার দাবি জানায়। পাশাপাশি জনবল, অবকাঠামো ও লজিস্টিকস এর ঘাটতি দূরীকরণে সেবা খাতগুলোতে আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি এদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধে সব পর্যায়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।