মিয়ানমার থেকে এবার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৭ লাখ রোহিঙ্গাসহ মোট ১১ লাখ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গত বছরের ২৩ নভেম্বর নেপিদোতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সে মোতাবেক চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসন কাজা শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু মিয়ানমারের নানা টালবাহানা ও আন্তর্জাতিক মহলের এখনই প্রত্যাবাসন শুরুর বিরোধিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। সবশেষ ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসন শুরুর নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইনে এখনো রোহিঙ্গাদের ফিরে যাবার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি উল্লেখ করে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এখনই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানায়। মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তর জানায়, শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর আগে সেখানকার পরিস্থিতি বোঝার জন্য মিয়ানমারে পূর্ণ প্রবেশাধিকার দরকার। বিবৃতিতে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক আইন মেনে ফিরে যাওয়াকে স্বেচ্ছামূলক, নিপরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ করার কথা বলা হয়। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান, চলাফেরার স্বাধীনতা, জীবিকার অধিকারসহ আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ১১ নভেম্বর কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক উপ-সহাকারী মন্ত্রী রিচার্ড অলব্রাইট জানান বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের এখনো ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত নয় মিয়ানমার।
১৪ নভেম্বর জেনেভা থেকে এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের এখনই ফেরত না পাঠাতে আহ্বান জানান জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেট। তিনি বিবৃতিতে বলেন, রোহিঙ্গাদের এখনই ফেরত পাঠানো হলে তাদের জীবন ফের হুমকিতে পড়বে।
বাংলাদেশের অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর পক্ষে মত দেন। তবে শরণার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে এ উদ্যোগ টেকসই হবে না বলে তিনি সতর্ক করে দেন তিনি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিতের জন্য বিভিন্ন মহলের আহ্বানের মধ্যেই প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নেয় বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটা স্পষ্ট করে দেয়া হয় যে, জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হবে না। উখিয়ার জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ ড. মোহাম্মদ শফিক উদ্দিন জানান, প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে গিয়ে বোঝানো হয়। ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ১৫ নভেম্বর সকালেও ফের স্পষ্ট করেন যারা স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক তাদেরই শুধু ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
তবে শেষ পর্যন্ত ১৫ নভেম্বর বহু প্রত্যাশিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবসান কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। মিয়ানমারে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করাসহ নানা দাবিদাওয়া তুলে কোনো রোহিঙ্গাই ফেরত যেতে রাজি হয়নি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনো জোর করা হয়নি। ওই দিন বিকালে ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ পুনরায় সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গারা এখনো মিয়ানমারকে নিজেদের জন্য নিরাপদ মনে করছে না। তাই তাদের জোর করে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না।
একই দিন ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ। তবে কোনোভাবেই তাদের ওপর জোরাজুরি করা হবে না। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দূর করতে জাপানের প্রস্তাব অনুযায়ী রোহিঙ্গা নেতাদের মিয়ানমার সফরের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর পরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন কাযক্রম শুরু করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।