রোববারের আলাপন-181118
  2018-11-22 15:24:57  cri

 

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের নতুন সাপ্তাহিক আয়োজন 'রোববারের আলাপন'। আপনাদের সঙ্গে আছি এনামুল হক টুটুল এবং শিয়েনান আকাশ।

টুটুল: আকাশ ভাই, আপনি কোথায় গিয়েছিলেন? কয়েকদিন আপনাকে দেখি নি।

আকাশ: আমি চীনের সান সি প্রদেশে গিয়েছিলাম। সেখানে চীনের ইয়াংলিং কৃষিপ্রযুক্তি মেলা নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছি।

বন্ধুরা, ২৫তম চীনা ইয়াংলিং কৃষিপ্রযুক্তি মেলা ৫ নভেম্বর চীনের সান সি প্রদেশের ইয়াংলিংয়ে আয়োজন করা হয়। চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান উ ওয়েই হুয়া, সান সি প্রদেশের গভর্নর লিউ কুয়ো চোং, জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউকিয়ো হাতোইয়ামা, কানাডা, রাশিয়া, মিশর, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিসহ মোট ৫৯টি দেশ ও অঞ্চলের সরকার, প্রযুক্তি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। ৫দিন ব্যাপী মেলায় কৃষি ক্ষেত্রের নতুন প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে নানা ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। মেলায় ২৩৮৮টি প্রদর্শনী বুথ খোলা হয়।

১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিবছর এ মেলা আয়োজিত হয়ে আসছে। কৃষকদের সেবা ছাড়াও আন্তর্জাতিক কৃষি আদানপ্রদান ও সহযোগিতার জন্যও ইয়াংলিং কৃষিপ্রযুক্তি মেলা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।

টুটুল: ভাই, আপনি সেখানে কি কি চিত্তাকর্ষক মেশিন বা প্রযুক্তি দেখেছেন?

আকাশ: আসলে চীনে অনেক কৃষক আছে। তাদের মধ্যে এখনো অনেকে দরিদ্রতার মধ্যে আছে। এ ছাড়া, আমরা সবাই জানি, খাদ্য সবার জীবনের ১ নম্বর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য এ মেলার ভূমিকা অনেক। বাংলাদেশেও আসলে চীনের মতো অনেক কৃষক আছে, তাইনা?এজন্য এবারের মেলায় আমি যা যা দেখেছি তা আজ আমি বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবো, কেমন?

বন্ধুরা, চীনের বিজ্ঞান একাডেমির গবেষণাকৃত, ডিজাইনকৃত ও উত্পাদিত একটি ইরিগেটর মেশিন আমি দেখেছি। এটা খুবই সস্তা এবং তা পানি সম্পদ রক্ষা করতে পারে। এর মাধ্যমে ইরিগেশনের অটোমেশন এবং ইনটেলিকচুয়ালাইজেশন বাস্তবায়ন করা যাবে।

টুটুল: অটোমেশন এবং ইনটেলিকচুয়ালাইজেশন মানে?

আকাশ: যেমন- যদি জমিতে পানি কম হয়, এটা বেশি ইরিগেশন করবে, যদি পানি বেশি হয়, এটা কম ইরিগেশন করবে; যদি জমিতে পানি অনেক হয়, তাহলে এটা পানি শুষে নেবে।

টুটুল: সত্যি! তাহলে ইরিগেশনে কোনো মানুষ দরকার হবে না, তাইনা?

আকাশ: হ্যাঁ। এজন্য এটাকে বলা হয় অটোমেশন এবং ইনটেলিকচুয়ালাইজেশন।

টুটুল:......

আকাশ: আরেকটি মজার মেশিন আমি দেখেছি। চীনের নর্থওয়েস্ট A&F বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকৃত, ডিজাইনকৃত ও উত্পাদিত সোলার ফার্টিলাইজিং মেশিন। কর্মকর্তারা আমাকে এই মেশিনের পরিচয় সম্পর্কে বলেন যে, যদি রোদ থাকে, তাহলে বিদ্যুত তৈরি করতে পারবে, তারপর ব্যাটারি রিচার্জের মাধ্যমে ফার্টিলাইজিং মেশিন চলতে পারবে।

টুটুল: বাংলাদেশে তো অনেক সময় রোদ বেশি থাকে, তাহলে এ মেশিন অবশ্যই বাংলাদেশে ব্যাবহার করা যাবে, তাইনা? এবং কোনো ফুয়েল দরকার হবে না, খুবই সস্তা এবং ইকোনোমিক, তাইনা"

আকাশ: হ্যাঁ। আসলে ভাই, এবারের মেলার অনেক মেশিন বা প্রযুক্তি বাংলাদেশে আমাদের কৃষকদের জন্য অনেক সুবিধা বয়ে আনবে।

এছাড়া অনেক নতুন গবেষণাকৃত কৃষি বীজও সেখানে দেখেছি। যেমন- বাঁধাকপি বীজ, ভুট্টা বীজ, ধানের বীজ, আপেল গাছের চারা, ইত্যাদি।

টুটুল: ভাই, এ মেলায় আমাদের বাংলাদেশের কিছু বন্ধু বা প্রতিনিধিদলের যাওয়া উচিত। তারা সেখানে কৃষিপ্রযু্ক্তিবিষয়ক আদান-প্রদান করতে পারেন।

আকাশ: আমরা অবশ্যই বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল কৃষক বন্ধুদের স্বাগত জানাই।

টুটুল: ধন্যবাদ ভাই। আপনি সেখানে আর কি কি দেখেছেন, আমাদের শ্রোতাবন্ধুদের জন্য একটু শেয়ার করুন, কেমন?

আকাশ: আরো আছে চালকবিহীন বায়বীয় বাহন (ইউএভি)।

এর মাধ্যমে মাঠ পর্যবেক্ষণের কাজ করা যায়। এ ছাড়া আরো অনেক অর্গ্যানিক্যালি উতপাদিত সবজি দেখেছি। এগুলো পরিষ্কার করা ছাড়াই সরাসরি খাওয়া যায়।

টুটুল: পরিষ্কার করা ছাড়া সরাসরি খাওয়া যায়? কোনো ক্ষতিকারক জিনিস নেই, যেমন- কীটনাশক?

আকাশ: না, নেই । এটা একেবারে পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত।

বিদেশি অনেক কৃষিপ্রযুক্তিও দেখেছি। তারা চীনের বাজারে আরো বেশি প্রবেশ করতে চায়। এর মধ্যে আমি একজন জার্মান শ্লিপপ্রতিষ্ঠান সংস্থার প্রতিনিধিও দেখেছি, তিনি এখানে এসেছেন চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য।

টুটুল:আচ্ছা।

আকাশ: এবারের মেলায় অনেক কৃষিবিদও এসেছেন। তারা প্রতিদিন কৃষকদের কৃষি ক্ষেত্রের সমস্যা ও প্রশ্নের উত্তর দেন।

টুটুল: আচ্ছা।

আকাশ: মেলায় আমি ডিজিটাল ফার্মও দেখেছি।

টুটুল: এটা মানে?

আকাশ: মানে বীজ থেকে জনগণের টেবিল পর্যন্ত সব ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণ। সবজি বা ফল বড় হওয়ার অগ্রগতি থেকে শুরু করে সবকিছু কৃষিবিদের দ্বারা পর্যবেক্ষিত ও নির্দেশিত।

টুটুল: তাহলে আমরা সবজি বড় হওয়ার প্রক্রিয়া দেখতে পারি , নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এবং নিশ্চিত করতে পারি যে, আমাদের শাকসবজি বা ফল অর্গ্যানিক্যালি বৃদ্ধি, তাইনা?

আকাশ: হ্যাঁ। ভাই, আমি আরো মজার জিনিস দেখেছি।

টুটুল: কি ভাই?

আকাশ: সবজির কারাখানা।

টুটুল: মানে

আকাশ: মানে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে, কারখানার মধ্যে সবজি বা ফল বড় হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান যেমন তাপমাত্রা, আলো, পুষ্টি ইত্যাদি দেওয়া হয়। কোনো মাটির দরকার নেই এবং এতে কোনো ক্ষতিকারক পোকা নেই। যদি বিদ্যুত থাকে তাহলে মরুভূমি বা অত্যন্ত ঠান্ডা অঞ্চলেও সবজি বা ফল জন্মাতে পারে।

টুটুল:এমনকি মহাকাশেও?

আকাশ: আমি তাই মনে করি.

টুটুল: সম্ভবত ভবিষ্যতে সমস্ত কৃষি ওই রকম হবে।

আকাশ: সম্ভবত।

টুটুল:আর কি দেখেছেন?

আকাশ: স্বয়ংক্রিয় গ্রিনহাউস। এটা মানে গ্রিনহাউসের সমস্ত সরঞ্জাম একত্রে যু্ক্ত এবং নিয়ন্ত্রক পদ্ধতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । এতে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা ও রানিং বাস্তবায়ন করা হয়।

যেমন- যদি আমরা ছাব্বিশ ডিগ্রি হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করি, তাহলে গ্রিনহাউস তাপমাত্রার দিক থেকে এই তুলনায় উচ্চতর, তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে কুলিং সিস্টেম খোলা থাকবে; আবার যদি তাপমাত্রা ছাব্বিশ ডিগ্রির চেয়ে কম হয়, তাহলে তাপমাত্রা ছাব্বিশ ডিগ্রি বৃদ্ধি করার জন্য হিটিং সিস্টেম শুরু করা হবে।

টুটুল: ভাই, তাহলে গ্রিনহাউসে মানুষের কোনো প্রয়োজন নেই

আকাশ: অবশ্যই, এর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনও আছে। এটা মানে অনেক দূরে থাকলেও মোবাইলের মাধ্যমে গ্রিনহাউস পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করা যাবে।

টুটুল: বাহ! ভাই, আমি অনেক অবাক হয়েছি, এ মেলায় এত মজার জিনিস আছে।

আকাশ: আমি আশা করি, আমাদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের শ্রোতাবন্ধুরা এ মেলার কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন এবং জীবনেরও কিছু পরিবর্তন করতে পারবেন।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040