ওয়ানআন গ্রামে দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমের সাফল্য
  2018-11-12 12:40:49  cri
পরিকল্পনা অনুযায়ী, চীন ২০২০ সালের মধ্যে সার্বিকভাবে স্বচ্ছল সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় একজন মানুষও যেন অস্বচ্ছল না-থাকে, তা নিশ্চিত করতে চীনের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিগত পাঁচ বছরে ৫ কোটি'র বেশি চীনা দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন। দরিদ্র এলাকাগুলোতে ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে ও ঘটছে। এখন চীনের সরকার ও জনগণের সামনে পরবর্তী করণীয় আরও কঠিন।

দক্ষিণ চীনের লুওসিয়াওশান বিশেষ দরিদ্র এলাকায় অবস্থিত ওয়ানআন জেলা। ২০১৭ সালের শেষ পর্যন্ত জেলার ৬১টি দরিদ্র গ্রামের মধ্যে ৫১টি দারিদ্র্যমুক্ত হয়। গোটা জেলায় দরিদ্র লোকের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২৬১৪ জনে। অন্যভাবে বললে, দরিদ্র লোকের হার নেমে আসে ০.৯৯ শতাংশে।

পরবর্তী ধাপে দারিদ্র্যবিমোচনের কাজ এগিয়ে নিতে জেলার নেতৃবৃন্দ, জেলাটির সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও বিভিন্ন থানার দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ একেকটি গ্রামে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলার ১৩৫টি প্রশাসনিক গ্রামে এ ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়াও জেলার প্রত্যেক নেতা একটি করে পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত গ্রামের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ব্যবস্থা সম্পর্কে ওয়ানআন জেলার দারিদ্র্যবিমোচন ও অভিবাসী কার্যালয়ের প্রধান লুও শাও হুয়া বলেন, "২০১৬ সালে গ্রাম-প্রধানব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার আগেও দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রম চলছিল। তখন প্রতিটি গ্রামে দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য একাধিক দল কাজ করত। জেলার একটি, থানার একটি, গ্রামের নিজের একটি। কিন্তু এই কাজে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না, ছিলা না দলগুলোর কাজের মধ্যে সমন্বয়। এই প্রেক্ষাপটেই জেলার স্থানীয় সরকার 'প্রাম-প্রধানব্যবস্থা' গ্রহণ করে। গ্রাম-প্রধান দারিদ্র্যবিমোচনের দায়িত্ব সামগ্রিকভাবে পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা করে থাকেন।"

লুও শাও হুয়া'র দৃষ্টিতে এই ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার আসল লক্ষ্য হল আরেক ধাপে দারিদ্র্যবিমোচনের দায়িত্ব বাস্তবায়ন করা। এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, "গ্রাম-প্রধানরা নিজ নিজ গ্রামের দারিদ্র্যবিমোচনের কাজ ব্যবস্থাপনা করেন। তাঁরা জেলার স্থানীয় সরকার কর্তৃক আয়োজিত সম্মেলনে অংশ নেন। তারপর তাঁরা নিজ নিজ গ্রামের বাসিন্দাদেরকে জেলার সরকারের নির্দেশ ও ব্যবস্থা সম্পর্কে জানান। এভাবেই গ্রামের দারিদ্র্যবিমোচনের কাজ সামনে এগিয়ে যায়।"

ওয়ানআন জেলার দারিদ্র্যবিমোচন ও অভিবাসী কার্যালয়ের পরিচালক লুও শাও হুয়াও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে গ্রাম-প্রধানের দায়িত্বও পালন করছেন। প্রথমে তাঁর মনে হয় এ কাজে চাপ বেশি। কারণ, নিজের কাজ ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে তাঁর গ্রামে থাকতে হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে লুও শাও হুয়া সাহস ফিরে পান। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "শুধু আমি নই, আমরা সবাই চাপের মধ্যে আছি। আমাদের জেলার নেতারা মনে করেন, গ্রামের দারিদ্র্যবিমোচন একটি খুবই কঠিন দায়িত্ব। আমাদের অর্থ কম। গ্রাম পরিচালনা একটি খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু আমাদের সুবিধা আছে। আমরা গ্রাম উন্নয়নে বিশেষ অর্থ বরাদ্দ করেছি।"

গ্রাম-প্রধানব্যবস্থা গ্রহণের পর আগের চেয়ে সংশ্লিষ্ট কাজ সহজতর হয়েছে। যেমন, বিপজ্জনক বাড়িঘর সংস্কারের কাজ খুবই কঠিন। যেসব ঘর সহজে ভেঙ্গে দেওয়া হয়, তা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। বাকি বিপজ্জনক ঘরগুলো ভেঙ্গে দেওয়ার কাজ চলছে। গ্রামবাসীদের বাড়িঘরের অবস্থা ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। গ্রাম-প্রধানরা এ পরিস্থিতিতে বার বার গবেষণা করেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেক উন্নত হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে সকল জেলায় মোট ৭৪০০টি পুরাতন ও বিপজ্জনক ঘর এবং ২১,৭০০টি বিবিধ স্থাপনা ভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং ৮১৯৫টি ঘর সংস্কার করা হয়।

শিল্প-দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে শিল্পের উন্নয়ন হল দারিদ্র্যবিমোচনের মৌলিক নীতি এবং গ্রামের টেকসই উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। চলতি বছরে ওয়ানআন জেলার বিভিন্ন গ্রামে পৃথক পৃথকভাবে ৬৩টি দারিদ্র্যবিমোচন কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৩৫টি প্রশাসনিক গ্রামে শিল্পঘাঁটি, সমবায় সমিতি, ফোটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশন ও ই-কমার্স দারিদ্র্যবিমোচন স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়, যাতে প্রতিটি গ্রামে দারিদ্র্যবিমোচন শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয় ও প্রতিটি পরিবারের আয় বৃদ্ধি পায়। দারিদ্র্যবিমোচন কারখানায় জেলার স্থানীয় সরকার ভর্তুকি দেয়। এর মধ্যে আছে প্রশিক্ষণ ভর্তুকি ও ব্যবস্থাপনার ভর্তুকি।

৪৩ বছর বয়সী চং ছিউ লিয়ান তরুণ বয়সে কুয়াংতুং প্রদেশে কাজ করতেন। ২০১১ সালে জন্মস্থানে দুই সন্তানকে যত্ন করার জন্য তিনি ওয়ানআন জেলায় ফিরে এসে একটি খেলনা কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "দু'টি সন্তানকে যত্ন করার জন্য আমি নিজের বাড়িতে ফিরে আসি। আমি প্রায় ২০ জন স্থানীয় বাসিন্দাকে আমার কারখানায় নিয়োগ দিয়েছি। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ হলেন নারী। তাঁরা আমার কারখানায় কাজ করার পাশাপাশি, নিজ নিজ সন্তানের যত্ন নিতে পারেন। এখন আরও অনেকেই জন্মস্থানে ফিরে এসে কারখানা খুলতে শুরু করেছেন।"

৪০ বছর বয়সী সং কুয়ান স্যিউ কুয়াংতুং ও ফুচিয়ান প্রদেশে কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি চং ছিউ লিয়ান'র কারখানায় কাজ করছেন। তিনি বলেন, "আমার প্রতি মাসে বেতন ২ হাজারা ইউয়ানের বেশি। আগের চেয়ে বেশি আয় করছি এখন। আমি এখানে কাজ করার পাশাপাশি সন্তানের যত্ন নিতে পারি।"

২০১৭ সালের শেষ দিকে স্থানীয় সরকার চং ছিউ লিয়ান'র খেলনা কারখানার জন্য ৪৬ হাজার ইউয়ান ভর্তুকি দেয়। এ ধরনের 'দারিদ্র্যবিমোচন কারখানা' স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য আরো বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে।

ওয়ানআন জেলার স্থানীয় সরকার গ্রামবাসীদের জন্য দারিদ্র্যবিমোচন বীমা, চিকিত্সাবীমা, কৃষিবীমা ও গৃহবীমার ব্যবস্থা করেছে। এধরনের বীমা জেলার দারিদ্র্যবিমোচনে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040