২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ৮ নভেম্বর এ তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কে এম নুরুল হুদা। বেতার-টিভিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ তফসিল ঘোষণা করেন তিনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন সংস্কার, ভোটার তালিকা তৈরিসহ কমিশনের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরেন সিইসি। দেশের চলমান উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সিইসি তার ভাষণে জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনায় ৭ লাখ নির্বাচনী কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ লাখ সদস্য মাঠে থাকবে। নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে বলেও জানান তিনি। নির্বাচনের মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে উল্লেখ করে সিইসি আশ্বাস দেন সবাই সমান সুযোগসুবিধা পাবেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর একের অন্যের প্রতি সহনশীল মনোভাব ও রাজনৈতিক আচরণ প্রত্যাশা করেন তিনি। ভোট গ্রহণের দিন ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত নির্বাচনী কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্ট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাও তুলে ধরেন তিনি। বিরোধীদের আপত্তি থাকলেও নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি। একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে সবার সহযোগিতা কামনা করেন সিইসি।
তফসিল ঘোষণাকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচন উৎসবমুখর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বিরোধীদল জাতীয় পার্টিও তফসিলকে স্বাগত জানায়। তবে, পেছানোর দাবি অগ্রাহ্য করে তফসিল ঘোষণার সমালোচনা করে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন অভিযোগও করেন, একতরফা নির্বাচন করতে সরকারের ইচ্ছায় তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তফসিল ঘোষণা পেছানোর দাবি গ্রাহ্য করা হয়নি উল্লেখ করে তফসিলে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তফসিল ঘোষণার পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হুসাইন মনে করেন, নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে কমিশন যথসময়ে তফসিল ঘোষণা করেছে। এ ক্ষেত্রে ঐক্যফ্রন্টের তফসিল পেছানোর দাবি অযৌক্তিক। তবে আরেক সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, সংবিধানের মধ্যে থেকেই ডিসেম্বরের বদলে জানুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে।
নির্বাচনের তফসিল নিয়ে এমন বিতর্কের মধ্যেই ১১ নভেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়। রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তবে একই সঙ্গে তারা ভোটের তারিখ একমাস পিছিয়ে পুনরায় তফসিল ঘোষণার দাবি জানান।
ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তারা নির্বাচন করা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ভোটের তারিখ পেছানোর বিষয়ে তারা অনঢ় থাকবেন। একই দিন গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে বিশ দল জানায় তারা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে আসার ঘোষণাকে অত্যন্ত ইতিবাচক দেখা হচ্ছে দেশের সুষ্ঠু রাজনীতির বিকাশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে নির্বাচনে আসার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এতে করে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানা। তিনি বলেন, সব দলের সঙ্গে কথা বলে, নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ পেছালে আওয়ামী লীগের কোনো অসুবিধা নেই।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ও বিরোধীপক্ষ দুদিক থেকেই এমন ছাড়কে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন যেহেতু সংবিধানের মধ্য থেকে নির্বাচন পেছানো সম্ভব তাই বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট্রের এ দাবিটি বিবেচনা করতেই পারে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্য দিয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে এবং তা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।