যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমক্র্যাটরা প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়েছে এবং রিপাবলিকানরা সেনেটে তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। এর ফলে কংগ্রেসে যে দ্বিদলীয় বিভাজন হলো, তাতে আগামী দু'বছর, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন কর্মসূচি আইনি বাধার মুখোমুখী হতে যাচ্ছে। বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
মার্কিন কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয় গত মঙ্গলবার। বলা হচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের গত কয়েক দশকের ইতিহাসে এতো উত্তেজনাপূর্ণ প্রচারণা এর আগে আর কখনো চালানো হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নির্বাচনকে তার প্রেসিডেন্সির ওপর গণভোট বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হবার পর মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা ভালো হয়েছে, কিন্তু অভিবাসনের মতো বেশ কিছু বিষয়ে তার নীতি সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করেছে।
গত আট বছরে এই প্রথম, প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে ডেমক্র্যাটরা, ট্রাম্পের আইনি অগ্রাধিকারের উপর নজরদারী ছাড়া আরও অনেক কিছু করতে পারবে। তারা প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে কোনরকম বাড়াবাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তারা গুরুত্বপূর্ণ এমন হাউজ কমিটিগুলোর দায়িত্ব নেবে যাদের কড়া তদন্ত করার ক্ষমতা রয়েছে। কোন কোন ডেমক্র্যাট বলছেন, তারা এ ব্যাপারে তদন্ত করে দেখবেন যে ট্রাম্পের কোন ব্যক্তিগত ও আর্থিক স্বার্থের সংঘাত রয়েছে কিনা। তারা প্রেসিডেন্টের করের কাগজপত্র, আর্থিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনি অভিযানে রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও তদন্ত করে দেখতে পারবেন।
তবে সেনেটের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে, রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের বিচার বিভাগীয় এবং অন্যান্য প্রার্থিদের অনুমোদন দিতে পারবেন। রিপাবলিকান নের্তৃত্বাধীন সেনেট, ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যূত করার কংগ্রেসর উদ্যোগ ঠেকাতে পারবে, যদি ডেমক্রাটদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনে।
কংগ্রেসের ঊর্ধ্বতন কক্ষে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখলেও সেখানে তাদের অবস্থান খুব একটা শক্ত নয়। সিনেটে তাদের আসন ৫১টি আর ডেমোক্র্যাটদের আসন ৪৯টি। যদিও সিনেট নির্বাচনে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল রিপাবলিকানরা। এবারের সিনেট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের লড়াই করতে হয়েছে ২৬টি আসনের জন্য। সেখানে রিপাবলিকানরা লড়াই করেছে মাত্র ৯টি আসনে।
বেশকিছু কারণে এবারের নির্বাচন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়া নারী প্রার্থীদের সংখ্যা অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই জয় পেয়েছেন। মঙ্গলবারের আগে মার্কিন কংগ্রেসে ১০৭জন নারী প্রার্থী ছিলেন এবং তারা সকলেই জয় পেয়েছেন। তবে এই প্রথমবারের মতো দুইজন মুসলিম নারী কংগ্রেসে নির্বাচিত হয়েছেন। মিনেসোটা এবং মিশিগান রাজ্যের দুই ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদ ইলহান ওইমার এবং রাশিদা ত্লাইব মার্কিন কংগ্রেসে প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব গড়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে। এমন পরিস্থিতে এই দুজনের জয় ইতিহাস গড়ল। মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত ৩৬ বছর বয়সী ইলহান ওমর সোমালিয়া থেকে আসা শরণার্থী। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর এখানকার নাগরিকত্ব পান। শিশু বয়সে তিনি চার বছর কেনিয়ার একটি শরণার্থীশিবিরে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এই প্রথম হিজাব পরা সদস্য হতে যাচ্ছেন ওমর। অন্যদিকে, মিশিগানে জয়ী রাশিদা তালিবও ইতিহাস গড়েছেন। ৪২ বছর বয়সী এই সমাজকর্মী ডেট্রয়েটে এক ফিলিস্তিনি অভিবাসীর ঘরে জন্ম নেন। ১৪ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ২০০৮ সালে প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে তিনি মিশিগান আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
প্রথমবারের মতো কংগ্রেসে এসেছেন সবচেয়ে কমবয়সী রাজনীতিবিদ আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কোর্টেজ এবং আদিবাসী আমেরিকান ডেবরা হালান্ড এবং শারিক ডেভিড।
প্রথম কোন সমকামী গভর্নর হিসাবে কলোরাডোয় নির্বাচিত হয়েছেন জ্যারেড পোলিস।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এটিকে মিশ্র ফলাফল বলা যেতে পারে। সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে রিপাবলিকানরা, তবে হাউজে তারা হেরে গেছেন। ট্রাম্পের প্রথম দুই বছর উভয় কক্ষই রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তবে এখন আর সেই সুদিন থাকছে না।