এবার বিশ্ব ইন্টারনেট সম্মেলন আয়োজনের এক সপ্তাহ আগে, নিইউয়র্কের ম্যানহাটন শহরের একটি পত্রিকা বিক্রির স্টোর 'হট ইস্যুতে' পরিণত হয়। পত্রিকা-বিক্রেতা যে পত্রিকা বিক্রি করেন সেগুলো দেখতে আমাদের পরিচিত পত্রিকার মতোই। কিন্তু যদি আপনি মন দিয়ে দেখেন, এসব পত্রিকার বিষয় সত্য নয়। এটি হল 'কলম্বিয়া জার্নালিজম রিভিউ'-র একটি উদ্যোগ। এই পত্রিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া জাল নিউজগুলো দিয়ে সাজানো। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইন্টারনেটের জাল নিউজ সম্পর্কে মানুষের সচেতনা বাড়ানো।
গত জুন মাস পর্যন্ত বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এখন প্রায় ৪২০ কোটি মানুষ ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছেন। ইন্টারনেট লোকজনের জ্ঞান অর্জন পদ্ধতি, জীবনযাপনের পদ্ধতি, চিন্তাধারার পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
ঠিক এই কারণে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্য আরো গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ইন্টানেটে জাল নিউজ বা তথ্য তুলনামূলকভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ অনেক সময়ই এসব তথ্য বা খবরকে সত্য বলে ধরে নেয়।
ওয়ার্ড ওয়াইড ওয়েবের প্রতিষ্ঠাতা, ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী টিম বের্নার্স লি এ নিয়ে চিন্তিত। ১৯৮৯ সালে তিনি 'মেশ' তথা 'ইন্টারনেট' উদ্ভাবন করেন। ১৯৯০ সালে এর নাম দেওয়া হয় 'ওয়ার্ড ওয়াইড ওয়েব'। তিনি বর্তমানে ইন্টারনেট নিয়ে অনেক হতাশ। তিনি মনে করেন, অল্প কয়েকটি বড় ইন্টারনেট কোম্পানির ক্ষমতা অনেক বেশি এবং ব্যক্তিগত তথ্যের অপপ্রয়োগ বাড়ছে।
তিনি বলেন, "যদি আপনি ভালোবাসার বার্তা টুইটারে দেন, তবে সেটা দ্রুতই আবেদন হারাবে। কিন্তু যদি টুইটারে ঘৃণা প্রকাশ করেন, তবে তা দ্রুত ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়বে।" তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইন্টারনেটে ইতিবাচক বিষয়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষের জন্য ইতিবাচক শক্তি যোগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। তার মতে, ইন্টারনেটে আরো বেশি ইতিবাচক বিষয় এবং ভালোবাসা প্রচার করা উচিত।
এমআইটি'র একটি গবেষণা প্রমাণ করেছে, টিম বের্নার্স লি'র কথাই ঠিক। টুইটারে একটি জাল নিউজ সত্য নিউজের চেয়ে ৭৫ শতাংশ বেশি শেয়ার হয়ে থাকে। জাল নিউজ প্রচারের গতি সত্য নিউজের চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। ১৫০০ জনের কাছে পৌঁছাতে একটি সত্য নিউজকে জাল নিউজের চেয়ে ৬ গুণ বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ইন্টারনেট শিল্পের বর্তমান কাঠামো এবং মুনাফার কাঠামোর ওপর নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে বড় বড় ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো কিভাবে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে এবং তা বিক্রি করে, তা জানতে হবে। বড় ব্যাংক ও আর্থিক সংস্থাগুলো নিজেদের কাজ তত্ত্বাবধান করতে না-পারায়, ২০০৮ সালের বিশ্ব আর্থিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। ইন্টারনেটের অবস্থাও তদ্রুপ। বড় বড় ইন্টারনেট কোম্পানি নিজেদের তত্ত্বাবধান করছে না বা করতে পারছে না। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হাতে হাত রেখে ইন্টারনেট পরিচালনা ব্যবস্থা সুসংহত করা, যাতে একে আরও স্বচ্ছ, ন্যায়সঙ্গত, ও সুশৃঙ্খল করা যায়। এ ব্যাপারে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর কথা উল্লেখ করতে হয়। তিনি বলেন, যদিও ইন্টারনেট অদৃশ্য, তবে যারা তা ব্যবহার করেন তাঁরা অদৃশ্য নন। বিভিন্ন দেশের উচিত যৌথভাবে কল্যাণকর ইন্টারনেট কমিউনিটি গড়ে তোলা। (শুয়েই/আলিম)