বিশ্বের দক্ষিণ গোলার্ধের সাংস্কৃতিক ট্যুর
  2018-11-06 10:57:57  cri

বন্ধুরা, সম্প্রতি আমি অস্ট্রেলিয়া বেড়াতে গিয়েছিলাম। তাই আজকের অনুষ্ঠানে বিশ্বের দক্ষিণ গোলার্ধের দেশটির সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরব।

গত ২১ অক্টোবর আমি বেইজিং থেকে ব্রিসবেন যাই। ব্রিসবেন অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর, দেশের বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর, কুইন্সল্যান্ডের রাজধানী এবং একটি প্রধান শিল্প ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখানে ব্রিসবেনের নাগরিকরা তাদের শহরকে বু-গ্রাম নামে ডাকতে পছন্দ করে। শহরটি বেইজিং ও শাংহাইয়ের মতো না, সেখানে কোনো ভিড় নেই; তা ছাড়া সিডনি বা মেলবোর্নের মতোও না, সেখানে কোন উঁচু ভবন নেই। তবে এটির দ্বিতীয় এবং তৃতীয়-স্তরের শহরগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। জীবন যেন বেশ ধীর গতির। প্রাত্যহিক জীবনে যেন অনেক চাপ কম।

ব্রিসবেন কুইন্সল্যান্ডের রাজধানী এবং কুইন্সল্যান্ড "সানশাইন স্টেট" হিসাবে পরিচিত, তাই এটি সত্যিই রৌদ্রোজ্জ্বল। এমনকি দক্ষিণ গোলার্ধের শীতেও, বৃষ্টি না-হওয়া পর্যন্ত রোদ হয়। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত, আমার মনে হয় ব্রিসবেনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার পর, ভূমিতে স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রাকৃতিক নীল-বেগুনি কার্পেট তৈরি হয়, যা সত্যিই চমত্কার! 'সাংস্কৃতিক কেন্দ্র' ব্রিসবেনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জন্য একটি নাম প্রস্তাব করে। সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অনেক প্যাভিলিয়ন রয়েছে। যেমন একটি হলো বিজ্ঞান জাদুঘর; এতে ডাইনোসর হাড় দেখা যায়।

অস্ট্রেলিয়া সত্যিই একটি 'প্রাণীর স্বর্গ'। সুতরাং এখানে আপনি বিভিন্ন ধরণের প্রাণী দেখতে পাবেন। সাধারণত অন্যখানে যা অসম্ভব। তাই বিভিন্ন ধরনের প্রাণী দেখতে এখানে আসুন।

কুইন্সল্যান্ড স্টেট লাইব্রেরি ব্রিসবেন নদীর দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। নদীর উত্তরে রয়েছে ক্যাসিনো। বিপরীত দিকে ব্রিসবেন সিটি লাইব্রেরি। ব্রিসবেনে অনেক লাইব্রেরি আছে। শহরতলিতে বিভিন্ন শপিং মল রয়েছে।

মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট ভবনে মোট তিনটি স্তর রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রদর্শনী হয়। বেশিরভাগ প্রদর্শনীই হয় বিনামূল্যে। তৃতীয় তলায় নদী দেখার জন্য ছাদের জানালার পাশে ব্যবস্থা রয়েছে। যখন আপনি লাইব্রেরি ছেড়ে যাবেন, তখন আপনি সরাসরি নদী পার্শ্ববর্তী সরল রাস্তায় নামতে পারবেন। রাস্তার দুটি অংশ অর্ধেক পথচারী চলার জন্য এবং অন্য অর্ধেক সাইকেল লেন। গোর্জ মহাচত্বরের সবচেয়ে দৃশ্যমান ভবন হলো ব্রিসবেন সিটি হল। আপনি সিটি হলে লিফট নিতে এবং সারা শহরের ডাউনটাউন ব্লক উপভোগ করতে পারেন। রাস্তার কেন্দ্রীয় এলাকায়, মায়ার মলের বিপরীতে খোলা জায়গায় কখনো কখনো বিভিন্ন কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়।

ব্রিসবেন ছেড়ে আমরা কুইন্সল্যান্ডের মর্টন দ্বীপে গিয়েছিলাম। ডলফিন আইল্যান্ড নামে পরিচিত মর্টন দ্বীপটি অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বালি দ্বীপ। ব্রিসবেন ট্রানজিট সেন্টারে ফেরি নিতে হয়। মর্টন দ্বীপে পৌঁছাতে এক ঘণ্টা বেশি সময় লেগেছিল। দ্বীপের একমাত্র থাকার জায়গা "টিয়াঞ্জ লুমা"। পুরো নাম টাঙ্গালুম দ্বীপ রিসর্ট। মর্টন দ্বীপের নীল জল এবং সুদৃশ্য সবুজ গাছপালা আছে। দ্বীপটির প্রাকৃতিক পরিবেশ চমৎকার। মর্টন আইল্যান্ডের মানুষদের সঙ্গে ডলফিনের সত্যিকার গল্প রয়েছে। ১৯৯২ সালে, দ্বীপের এক মানুষ 'সুন্দর' নামে একটি ডলফিনকে খাওয়ায়। এরপর খাবারের লোভে 'সুন্দর' প্রায়শই সেখানে ফিরে যায় এবং দ্বীপবাসীর ছোট মাছ খায়। এ ছাড়াও ডলফিন তার সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে আসে। পরে, আরো ছোট ছোট ডলফিন আসে। এখনও ১০টি লোভী ডলফিন সেখানে খাবার খেতে যায়! মর্টন দ্বীপে সারা বছর ধরে একটি হালকা ধরনের জলবায়ু বিরাজ করে। সেখানে কখনও কখনও ডলফিন আসে। আপনি যদি ডলফিন খাওয়াতে চান, শুধুমাত্র সন্ধ্যায় তা করতে পারেন। ডলফিন খাওয়ানোর সময়, কোচ আপনাকে জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে হাত ধোয়াবে এবং তারপর ছোট মাছ খাওয়াতে দেবে।

বালি বোর্ডিং মর্টন দ্বীপের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বালি বোর্ডিংয়ের গতি ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। মরুভূমিতে প্রবেশের আগে একটি রেইনফরেস্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বনে অনেক ধরনের প্রাণী রয়েছে। প্রায় ২০০ ধরনের সাপও আছে!

ব্রিসবেনে ভ্রমণের আরেকটি জায়গা হলো লংবাই কোয়ালা চিড়িয়াখানা। লংবাই কোয়ালা চিড়িয়াখানা বিশ্বের শীর্ষ দশটি চিড়িয়াখানার মধ্যে একটি এবং প্রথম পেশাদার কোয়ালা সংরক্ষণ এলাকা। সেখানে সবদিকে কোয়ালা চোখে পড়ে। মনোহর কোয়ালা ছাড়া, অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য প্রাণী যেমন ক্যাঙ্গারু, ডিংগো এবং পেঁচা দেখা যায়।

ব্রিসবেনে একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সেটি হলো কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি, বিশ্বের শীর্ষ ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি। এর ১০০ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাস রয়েছে। এটি অনেকের কাছে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। এটি কুইন্সল্যান্ডের প্রথম সর্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম এবং সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নোবেলজয়ী মানুষ আছে। পিটার সি ডোহার্টি, ১৯৯৬ সালে পদার্থবিদ্যা ও মেডিসিনের নোবেল পুরস্কার জয় করেন। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০ টিরও বেশি কোর্স রয়েছে। অক্টোবর-নভেম্বর মাস এই ক্যাম্পাসের সেরা ঋতু। অনেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিয়ের ছবি তুলতে আসেন।

ব্রিসবেন ছেড়ে এবার কেয়ার্নস আসি। কেয়ার্নসে দুটি জিনিস করতেই হয়। স্কাইডাইভিং এবং হেলিকপ্টারে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ দেখা! প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি, কেন এত মানুষ অস্ট্রেলিয়া বেড়াতে গেছে! এখানে আসার পর, আমি দেখলাম জীবনের গতি খুব ধীর, এবং শহর বেশ ফাঁকা। অস্ট্রেলিয়া সত্যিই শান্ত, বিশেষত কেয়ার্নস। দোকানগুলো সন্ধ্যা ৮টায় বন্ধ হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ান কফি বেশ ভালো। তাই স্টারবাক্স অস্ট্রেলিয়ার বাজারে প্রবেশ করতে পারেনি। কারণ স্থানীয় কফি বেশি জনপ্রিয়। স্কাইডাইভিং টপিকে ফিরে আসি। স্কাইডাইভিংয়ের দু'টি পছন্দ রয়েছে, ৭ হাজার ফুট উচ্চতা বা ১৫ হাজার ফুট উঁচু থেকে স্কাইডাইভিং করা। তা ছাড়া শহরের দৃশ্য বা সমুদ্রের দৃশ্য পছন্দ করতে পারে। সবচেয়ে বিখ্যাত স্কাইডাইভিং সাইট হলো সুন্দর সৈকত। ভয় পাবেন না, স্কাইডাইভিংয়ের জন্য আপনার সঙ্গে পেশাদার কোচ থাকবে।

দ্য গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল শিলা এবং অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে প্রা

কৃতিক ভূদৃশ্য। ডাইভিং বা হেলিকপ্টারে দ্য গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ উপভোগ করতে পারে। ডাইভিং করে সাগরের বিভিন্ন মাছও দেখতে পারে। অনেক সুন্দর। দ্য গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ৪০০ টিরও বেশি রঙিন কোরাল তৈরি করেছে। তাই উঁচু থেকে একে নীল সমুদ্রের একটি ফিরোজা পাতার মতো দেখা যায়।

প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com

চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান। (জিনিয়া/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040