বাংলাদেশে আশা-নিরাশার সংলাপ
  2018-11-04 19:26:25  cri
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সংলাপ-জ্বরে আক্রান্ত গোটা দেশ। ১ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনে নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২ নভেম্বর সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত সংলাপ হয়েছে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের। ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ নভেম্বর সংলাপ হবে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের সঙ্গে।

একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য অনেকে এ সংলাপকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। আবার অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন- সংলাপ থেকে আদৌ কিছু অর্জিত হবে না। অনেকে সংলাপ শুরু হওয়াকেই একটা অর্জন বলে মনে করছেন।

১ নভেম্বর অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সংলাপ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। আর ১৪ দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

আলোচনায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের ৭ দফা দাবি পড়ে শোনান। এর আলোকে পরে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো হয়রানিমূলক মামলা হবে না, বাধা দেওয়া হবে না সভা-সমাবেশে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে প্রধানমন্ত্রী ফ্রন্ট নেতাদের আশ্বস্ত করেন। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আইনি বিষয় এবং এতে সরকারের কিছু করার নেই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে। তবে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক বিএনপি নেতারা আলোচনায় সন্তুষ্ট নন বলে জানান। তারা বলেন, সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া ও বিএনপি নেত্রীর মুক্তির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি বলে তারা হতাশা ব্যক্ত করেন। তাই আলোচনাকে ফলপ্রসু মানতে নারাজ তারা।

সংলাপ শেষে মির্জা ফখরুল, আ স ম আব্দুর রব, ড. জাফরুল্লাহসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৈঠক করেন। পরে গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় ড. কামাল জানান সংলাপে বিশেষ কোনো অগ্রগতি হয়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সেখানেও জানান যে তিনি সংলাপে সন্তুষ্ট নন। ঐক্যফ্রন্ট নেতারা আরো সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

২ নভেম্বর সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে দ্বিতীয় সংলাপ হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের। এখানেও নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকার, সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, ইভিএম ব্যবহার না করাসহ ৭টি প্রস্তাব তুলে ধরে যুক্তফ্রন্ট। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সরকারে প্রধানমন্ত্রী থাকছেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিসহ কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সংলাপকে যথারীতি ফলপ্রসু বলে অভিহিত করেন। সংলাপের শুরুটা ভালো হয়েছে এবং প্রয়োজনে ছোট পরিসরে আরো সংলাপ হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে, তফসিল ঘোষণার বিষয়টি আসন্ন বলে ৭ নভেম্বরের পর আর সংলাপ চালানো যাবে না বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

সংলাপ শেষে তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তফ্রন্ট নেতারা জানান, বৈঠক ভালো হয়েছে এবং তারা নির্বাচনে যাবেন। রাতেই আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরী জানান, তাদের সব দাবি মানা হয়নি, কিছু দাবি মানা হয়েছে। তাই তারা এ বিষয়ে আরো আলোচনা করতে চান। আর দু'একদিনের মধ্যে নিশ্চিত করবেন নির্বাচনে যাবেন কি যাবেন না।

এরই মধ্যে পুনরায় সংলাপের জন্য রোববার সরকারকে চিঠি দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। এর জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ছোট আকারে আবারো সংলাপ হতে পারে। এমনকি সংলাপে বিএনপি চাইলে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয় নিয়েও আলোচনা করতে পারে।

আওয়ামী লীগের তরফে এই ইতিবাচক মনোভাবকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ বলেন, সংলাপের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক হবে বলেই মনে করেন তিনি। গোটা জাতির প্রত্যাশাও তাই

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040