দরিদ্র পরিবারগুলোকে দারিদ্র্যমুক্ত করা এবং সবাইকে নিয়ে ২০২০ সালে একসঙ্গে স্বচ্ছল সমাজ বাস্তবায়ন করা হল রুইচিন শহরের সাম্প্রতিক কয়েক বছরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। শহরটি এ দায়িত্ব পালনে শিল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে থাকে।
হুয়াংবো থানার লংহু গ্রামের কৃষক দেং দা লং দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য জন্মস্থানে বিভিন্ন ব্যবসায় করার চেষ্টা করেছেন। ২০১২ সালে তিনি সফল হন। ২০১৬ সালে তাঁর চাষকৃত কমলার প্রশংসা করেন চীনা প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং। এ সম্পর্কে দেং দা ছিং বলেন, "১৯৯৮ সালে আমি এখানে ১০ হাজারেরও বেশি সবুজ প্লাম গাছ রোপন করেছিলেন। কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি। ২০০৬ সালে কমলার চাষ করি। ২০১২ সালে আবার কমলার চাষ করি। তখন আমাদের গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা ছিল খুবই গরিব।"
২০১৪ সালে দেং দা ছিংয়ের নেতৃত্বে গ্রামে কমলা চাষীদের সমবায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এ পর্যন্ত সমবায়ের অধীনে কমলা চাষ করা হয়েছে প্রায় ১.৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। এ ছাড়াও, এই সমরায় সমিতি রুইচিন শহরের বৃহত্তর সমবায় সমিতির অংশে পরিণত হয়। এর ফলে কমলা বিক্রয় সহজতর হয়। এ সম্পর্কে হুয়াংবো থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ছেন ফো পাও বলেন, "'সমবায়+উত্পাদন ঘাঁটি+ দরিদ্র পরিবার' কাঠামোয় কার্যকরভাবে কৃষকদের অর্থ, প্রযুক্তি, পণ্য বিক্রি ও ঝুঁকিসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়। একইভাবে, জমি স্থানান্তর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর এবং গ্রামবাসী ও দরিদ্র পরিবারের অবস্থা অনুযায়ী জমি বিন্যাস করা হয়, যাতে প্রত্যক পরিবার কমলা চাষের সাথে সংযুক্ত হতে পারে। সমবায়ের মাধ্যমে বাসিন্দারা কৃষিসামগ্রী কেনেন। সমবায়ের মাধ্যমে কৃষিসামগ্রী তুলনামূলকভাবে সস্তায় কেনা যায়। এতে কৃষকদের উত্পাদন-খরচ কমেছে।"
দেং দা ছিং মনে করেন, পরিশ্রমের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে পানি ও পাহাড় রক্ষা করা এবং 'স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাহাড়' অর্জন করা সম্ভব। সম্পদ একীকরণ ও বিক্রির মাধ্যমে গত বছর দেং দা ছিংয়ের সমবায় সমিতির আয় ছিল ১০ কোটি ইউয়ানেরও বেশি। দেং দা ছিংয়ের নিজের আয় ২ লক্ষাধিক ইউয়ান। এ সম্পর্কে দেং দা ছিং বলেন, "এ বছর উত্পাদনের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে কম হবে। কিন্তু দাম বেশি হবে। আমার প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, এ বছরে আয় গত বছরের সমান হবে।"
রুইচিন শহরে বর্তমান কমলা চাষ হচ্ছে প্রায় ১০৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। কমলা চাষে অংশগ্রহণকারী স্থানীয় পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার এবং বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। কমলা-শিল্পে প্রায় এক লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বিগত তিন বছরে ১২৬২টি পরিবারের ৩৮৫৮ জন দরিদ্র বাসিন্দা দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। হুয়াংবো থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ছেন ফো পাও মনে করেন, বৈশিষ্ট্যময় ভূগোল ও জলবায়ু পরিস্থিতির সুবিধা দিয়ে কমলা চাষের মাধ্যমে সকল থানার নাগরিকরা সমৃদ্ধ হতে পারবেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমাদের কমলা চীনে খুবই জনপ্রিয়। কারণ, আমাদের কমলার মান উচ্চ এবং আমাদের ভাল খ্যাতি আছে। আমরা চোখের মতো যত্ন নিয়ে কমলা চাষ করি। কমলা চাষ হচ্ছে আমাদের সমৃদ্ধির হাতিয়ার। বর্তমানে কমলা বাজারের অবস্থা ভাল। এ বছর কমলার দাম প্রতি কেজি ৭.২ ইউয়ান। আমাদের কমলা চাষের জমি এক্ষেত্রে বিশ্বের মোট জমির ১৭.২ শতাংশ এবং উত্পাদিত কমলার পরিমাণ বিশ্বের মোট উত্পাদনের ১১.৩ শতাংশ, প্রায় ১০.৮ লাখ টন। আমাদের কমলার মান বিশ্বের প্রথম পর্যায়ের। ২০১৭ সালে আমাদের উত্পাদিত কমলার মূল্য ছিল ১১.৮ লাখ ইউয়ান। এর মাধ্যমে ৭ লাখ কৃষক দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। তাদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ২৪ হাজার ইউয়ান। আমাদের লক্ষ্য, ২০২০ সালে বার্ষিক উত্পাদন ২০ লাখ টনে উন্নীত করা।"
কমলা ছাড়াও রুইচিন শহরে অন্যান্য সফলও চাষ করা হয়, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের দারিদ্য বিমোচনে ভূমিকা রেখেছে। এ পর্যন্ত শহরটিতে শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের ঘাঁটির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২৯টিতে। গ্রামবাসীদের মধ্যে সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৭৪৩টি। পরিবারিক খামার ৩৩৭টি। গোটা শহরে শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের হার ৬২.৬ শতাংশ।
শিল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন ছাড়াও, রুইচিন শহর 'প্রযুক্তি+কর্মসংস্থান' কাঠামোয় দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা করে। স্থানীয় সরকার গাড়িচালনা প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে আগ্রহী স্থানীয় দরিদ্র বাসিন্দাদের বিনামূল্যে গাড়িচালনা প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়। এ ছাড়াও কেন্দ্রে বিনামূল্যে বাসস্থান ও খাবার সরবরাহ করা হয়। প্রশিক্ষণের পর কেন্দ্রই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। এ সম্পর্কে রুইচিন শহরের কমিউনিস্ট পার্টির কমিটির উপসম্পাদক চেং ফিং বলেন, "রুইচিন গাড়িচালনা প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ওপর নির্ভর করে আমরা প্রতিবছর এক হাজারেরও বেশি স্থানীয় দরিদ্র বাসিন্দাকে বিনামূল্যে শ্রশিক্ষণ দেই। তাঁরা বড় ট্রাক ও বাসের লাইসেন্স পাওয়ার পর, কেন্দ্র তাঁদেরকে চীনের উন্নত এলাকার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়। তাঁদের প্রতিমাসের বেতন ৫ হাজার ইউয়ানের বেশি।"
কেন্দ্রে দরিদ্র বাসিন্দাদের স্ত্রীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয় ও সন্তানদেরকে লেখাপড়ার সুযোগ দেয়।
দারিদ্র্যবিমোচন একটি স্থায়ী কাজ। গত বছর রুইচিন শহরে ইন্টারনেট ও টেলিফোনের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামত সংগ্রহ করা ও জবাব দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়। এ সম্পর্কে চেং ফিং বলেন, "এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা সময়মতো বিভিন্ন কাজ করতে পারি। এটি হল স্থানীয় সরকারের সঙ্গে দরিদ্র বাসিন্দাদের যোগাযোগের সেতু।"
ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেয়ার পর, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রুইচিন শহরের দারিদ্রবিমোচন কার্যক্রম ফলপ্রসূ হয়। ২০১৫ সাল থেকে শহরে মোট ১৮,৬৩৯টি পরিবারের ৭৬,৯৩৫ জন বাসিন্দা দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। দরিদ্র লোকের সংখ্যা ২০১৪ সালের ১৪.৩ থেকে ০.৯১ শতাংশে নেমে এসেছে। পাশাপাশি, ৪৯টি দরিদ্র গ্রাম দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। গ্রামবাসীদের মাথাপিছু আয় ২০১৫ সালের ৮,২৫১ থেকে ২০১৭ সালে ১০,৩০১ ইউয়ানে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিন বছরে বৃদ্ধির হার ১২.৯ শতাংশ।