রোববারের আলাপন -১৮১০২৮
  2018-11-01 15:46:54  cri


আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের নতুন সাপ্তাহিক আয়োজন 'রোববারের আলাপন'। আপনাদের সঙ্গে আছি এনামুল হক টুটুল এবং শিয়েনান আকাশ।
আকাশ: বন্ধুরা, আমরা এ কয়েকদিন খেলাধুলার খবর আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, কেমন?
টুটুল :২০১৮ বিশ্ব নারী ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপে চীনা-দলের তৃতীয় স্থান অর্জন
অক্টোবর ২০: জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিত ২০১৮ নারী ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপে চীনাদল ৩-০ ব্যবধানে হল্যান্ডকে পরাজিত করে তৃতীয় স্থান লাভ করেছে। খেলা শেষে চীনা দলটির কোচ লাং পিং বলেন, খেলায় জয়-পরাজয় খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। অন্যান্য শক্তিশালী দলের সাথে ব্যবধান থাকা খারাপ ব্যাপার নয়। অধ্যবসায় থাকলে ভবিষ্যতে অবশ্যই সুযোগ আসবে।
খেলা শেষ দ্বিতীয় দিন সকালে চীনের নারী ভলিবলদল বিমান যোগে বেইজিং ফিরে আসেন।
খেলা শেষে দলটির খেলোয়াড় ইয়ুয়ান শিন ইউয়ে জানান, কয়েক মাসের প্রচেষ্টা, বিশ দিনের বেশি খেলা, আশা করি ভবিষ্যতে আরো ভালভাবে খেলতে পারবো। অধ্যবসায় থাকলে এগিয়ে যাওয়া যাবে। আরেকজন খেলোয়াড় হু মিং ইয়ুয়ান বলেন, প্রথম নারী ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পেরে আমি অনেক ভাগ্যবতী। এ দলের একজন সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত। প্রথম মনের স্বপ্ন কখনোই ভোলা যাবে না। বিশ্বাস করি পরিশ্রম করলে ভালো ফল পাবো। সবাই খুবই চমতকার!
চীনের নারী ভলিবল দলের অনেক ভক্ত হোটেলের দরজার সামনে গিয়ে তাঁদেরকে বিদায় জানান।
ওসাকাতে বাসা করা একজন মা এবং তার মেয়ে সাংবাদিকদের দেখান যে, তাঁদের পোশাকের উপর চীনা দলের খেলোয়াড়দের সিগনেচার। আনন্দের মধ্যে ছোট মেয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি জু থিংকে খুবই পছন্দ করি, অনেকে বলেন আমি তাঁর ছোট বোনের মত।
চীনের নারী ভলিবলদলের ভক্তদের মধ্যেই অনেকেই প্রবাসী চীনা। তারা ছুটিতে সিঙ্গাপুর, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিমান করে জাপানে গিয়ে চীনের খেলা সমর্থন করেন। তারা চীনের নারী ভলিবলদলের প্রতি গভীর ভালবাসা প্রকাশ করেন।
অন্য দিকে, বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভক্তরা ফুল নিয়ে দলটির জন্য অপেক্ষা করেন। তারা বের হওয়ার সময় ভক্তরা চিত্কার করে বলতে থাকেন, তোমরা ভালো করেছো, তোমাদেরকে স্বাগতম, কোচ ম্যাডাম লাং পিংকে স্বাগতম।
এখন বিশ্ব নারী ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ। চীনের দলটি টোকিও
অলিম্পিক গেমসের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছেন।
আকাশ: ভাই, আমি জানি তুমিও চীনের নারী ভলিবলদল এবং তাদের কোচ লাং পিংয়ের একজন ভক্ত। তাদের প্রতি তোমার অনুভূতি আমাদের শেয়ার করতো পারো?
টুটুল:জাপানের বিখ্যাত টেবিল টেনিস খেলোয়াড় ফুকুহারা আই'র অবসর
জাপানের বিখ্যাত টেবিল টেনিস অর্থাত্ পিংপং খেলোয়াড় ফুকুহারা আই সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে টেবিল টেনিস থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেন।
টোকিওতে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন যে, তিনি এখন অনেক আনন্দিত। তিনি বলেন, আমি ৩ বছর বয়স থেকে পিংপং শেখা শুরু করি। আমার সারা জীবন আসলে পিংপংয়ের সঙ্গে জড়িত। অনেকে আমার অনেক যত্ন নিয়েছেন, এজন্য পিংপং আসলে আমার সবকিছু। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফুকুহারা সাংবাদিকদের জানান, তিনি এ বছরের মে মাস থেকে
অবসরের কথা চিন্তা করতে থাকেন। ৫ মাস পর অবশেষে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। তিনি চীনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, "চীন, চীনের প্রশিক্ষণ পরিবেশ, চীনের কোচের কারণেই আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। চীন না থাকলে আমি আজ এতদূর আসতে পারতাম না"। একথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। 
ফুকুহারা ছোটবেলা থেকেই চীনে প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। তিনি চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের স্যান্ডার্ড আঞ্চলিক ভাষা বলতে পারেন। তাকে চীন ও জাপানের পিংপং ভক্তরা অনেক পছন্দ করেন। 
২৯ বছর বয়সী ফুকুহারা সাংবাদিক সম্মেলনে আরো বলেন, রিও অলিম্পিক থেকে আমি অবসর নেবো বা আরো পিংপং খেলবো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। এ বছরের মে মাসে অবশেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আবার কাঁদতে শুরু করেন। তিনি বলেন, সবাই বলেন আমি কাঁদতে পছন্দ করি, কিন্তু কিছু কিছু সময় আমি মনে করি আমি আসলে কাঁদতে পছন্দ করি না। তবুও আমি রিও অলিম্পিক গেমসে আবার কাঁদতে শুরু করেছি। সত্যি সবাই ঠিক বলেছেন। তিনি বলেন, "তরুণ পিংপাং খেলওয়াড়রা, আপনারা এগিয়ে যান"!
তার আগের খেলার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন,  প্রথমে জাপানের
জাতীয় খেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া এবং লন্ডন অলিম্পিক গেমস ও রিও
অলিম্পিক গেমসে পদক অর্জন করা হলো সবচেয়ে অবিস্মরণীয়।
রিও অলিম্পিক গেমসে ফুকুহারা নিজের সবচেয়ে ভাল রেকর্ড সৃষ্টি করেন এবং তার নেতৃত্বেই জাপানের নারী পিংপং দলটি ব্রোঞ্জ পদক
জয় করে। এরপর তিনি চীনের তাইওয়ানের পিংপং খেলোয়াড় চিয়াং হোং চিয়েকে বিয়ে করেন। গত বছরের অক্টোবরে তারা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
আসলে ফুকুহারা বিয়ে করার পরেই পিংপং মহলের লোকজন অনুমান
করেন যে, তিনি হয়তো খুব তাড়াতাড়িই অবসর নেবেন। কারণ
জাপানের নতুন পিংপং খেলোয়াড়রা এখন অনেক উন্নতি করেছেন।
তিনি বলেন, আমি সবসময় তাদের পারফর্মেন্সের উপর নজর রেখে
আসছি। তাদের অনেক অগ্রগতি হয়েছে এবং তারা অনেক ভাল ফলাফল অর্জন করেছেন। এজন্য আমি ভেবেছি আমি অবসর নিলেও তেমন সমস্যা নেই।  
জাপানের নারী পিংপং মহলের ১ নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে তিনি তার উত্তরসূরীদের কাছে অনেক প্রত্যাশা করেন। 
ফুকুহারা তার চীনা ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, চীনের সহায়তা ছাড়া আমি কখনোই এতদূর আসতে পারতাম না।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি চীনের পিংপং ভক্তদের ধন্যবাদ জানান। তিনি স্মরণ করে বলেন, আমি প্রথম পিংপং প্রশিক্ষণের জন্য চীন গিয়েছি, তখন আমার বয়স ৫ বছর। তারপর প্রত্যেক গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে আমি চীনে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেই এবং একমাস পর দেশে ফিরে আসি।
ফুকুহারা জানান, প্রতিবার চীনে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় অনেক কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু প্রতিবার প্রশিক্ষণ শেষে তিনি অনেক অগ্রগতি অর্জন
করেন। তিনি বলেন, "আমার ছোট বেলা থেকে চীনের কোচ আমাকে
প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। চীন, চীনের প্রশিক্ষণ পরিবেশ , চীনের কোচ
ছাড়া আজকের আমি নেই। ধন্যবাদ!"
২০০৫ সালে, ফুকুহারা অল চায়না টেবিল টেনিস সুপার লিগে অংশ নেন। তিনি চীনের বিখ্যাত খেলোয়াড় ওয়াং নানের সাথে একসাথে পিংপং খেলেন। তিনি বলেন, আমি ১৬, ১৭ বছর বয়সে চীনের টেবিল টেনিস সুপার লিগে পিংপং খেলতাম। তখন আমি চীনের লিয়াওনিং ও কুয়াংতং প্রদেশের দলের পক্ষ থেকে পিংপং খেলতাম। ওয়াং নান এবং অন্যান্য চীনা খেলোয়াড় আমার অনেক যত্ন নিয়েছেন। আমি তাদের কাছ থেকে অনেক শিখেছি। সবাই আমাকে অনেক সমর্থন করেছেন। অনেক ধন্যবাদ!
 
চীন-জাপান জনগণের বন্ধুত্বের একজন বিশেষ দূত হিসেবে, ফুকুহারার
অবসর সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া ছুন ইং  
বলেন, ফুকুহারা আই হচ্ছেন জাপানের জনগণের খুব পছন্দের একজন পিংপং খেলোয়াড়। অনেক চীনা মানুষও তাকে ভীষণ পছন্দ করেন। হুয়া ছুন ইং আরো বলেন, তিনি খুবই বুদ্ধিমতী, পিংপংয়ের ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ অবদান রেখেছেন। আমরা আশা করি চীন ও জাপানের আরো বেশি মানুষ দু'দেশের বন্ধুত্ব ও আদান-প্রদান ও সহযোগিতায় আরো অবদান রাখবেন।
ভবিষ্যত নিয়ে ফুকুহারা জানান, তিনি অব্যাহতভাবে পিংপং ক্ষেত্রে
উন্নয়নের জন্য অবদান রাখতে ইচ্ছুক। তিনি বলেন, আমি সারা জীবন পিংপংয়ের জন্য কাজ করে যেতে চাই। সবাই আমাকে যত শক্তি দিয়েছেন, আমি পিংপং মহল ও খেলাধুলার ক্ষেত্রের তার প্রতিদান দিতে চাই।
তিনি আরো বলেন, আমি কখনোই পিংপাং মানুষকে শিখাই নি, আমি সুষ্ঠুভাবে শিখবো, ভবিষ্যতে দরকার হলে আমি একজন কোচ হতে চাই।
আকাশ: ভাই, আপনি আগেই ফুকুহারা আই'র কথা বলেছেন। আসলে আমরা সবাই তাকে খুব পছন্দ করি। আমরা তাকে পছন্দ করি শুধু যে তিনি সাবলীলভাবে চীনের আঞ্চলিক ভাষা বলতে পারেন, এজন্য নয়, তার অধ্যবসায়, তার চরিত্রের কারণে সবাই তাকে পছন্দ করেন।
ভাই, আমি বাংলাদেশে থাকার সময় পিংপং অনেক পছন্দ করতাম, আমাদের কনফুসিয়াস ক্লাসরুমে একটা পিংপংয়ের টেবিল আছে। কাজ শেষে সময় থাকলে আমরা তখন পিংপং খেলা শুরু করতাম। তুমি পিংপং পছন্দ করো?
আকাশ: বন্ধুরা, এখন আমরা মহান ফুটবলার ম্যারাডোনার জীবন সম্পর্কে জানবো, কেমন?
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040