২০তম চীনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য মেলা
  2018-10-20 19:24:28  cri

বন্ধুরা, গত ৮ অক্টোবর ২০তম চীনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য মেলা ফুচিয়ান প্রদেশের সিয়ামেন শহরে আয়োজিত হয়। ১১০টি দেশ ও অঞ্চলের সহস্রাধিক শিল্প ও বাণিজ্য সংস্থা এবং প্রায় ৫ হাজার প্রতিষ্ঠানের ১.২ লাখেরও বেশি প্রতিনিধি এবারের মেলায় অংশ নেন। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান। চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) কমিটির সম্পাদক ইউ ওয়েই কুও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সি'র বার্তা পড়ে শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, "২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চীনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য মেলা পারস্পরিক বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করা, প্রামাণিক তথ্য প্রকাশ, ও বিনিয়োগের প্রবণতা আলোচনার প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার চেষ্টা করে আসছে। বর্তমান মেলাটি হল বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ মেলাগুলোর একটি এবং চীনের সংস্কার ও সমাজতান্ত্রিক আধুনিকায়নের জন্য ইতিবাচক। চলতি বছর চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়ার ৪০তম বার্ষিকী। বিদেশিদের জন্য চীনের দরজা আরও উন্মুক্ত করা হবে। আমরা আশা করি, মেলাটি পারস্পরিক বিনিয়োগের নীতিতে আন্তর্জাতিকায়ন, পেশাদারিত্ব সৃষ্টি, ও বিশিষ্ট ব্রান্ড তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। আমরা নতুন দফায় উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়াকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এর লক্ষ্য, উন্মুক্ত বিশ্বের অর্থনীতি উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা।"

চীনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য মেলার পূর্বসুরি ছিল 'দক্ষিণ ফুচিয়ান ত্রিভুজ এলাকা বিদেশি ব্যবসায়ী বিনিয়োগ ও বাণিজ্য মেলা'। এটি ছিল ফুচিয়ান প্রদেশে বিনিয়োগ সংগ্রহ এবং উন্মুক্তকরণ ও উন্নয়নের একটি প্ল্যাটফর্ম। চলতি বছরের মেলার প্রতিপাদ্য হল: "উন্নয়নের নতুন ধারণা বাস্তবায়ন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে সংযুক্ত হওয়া এবং পারস্পরিক বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করা"। 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের পটভূমিতে, সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দেশ ও অঞ্চলের পারস্পরিক সহযোগিতা বাস্তবায়ন করা, অর্থনীতির বিশ্বায়ন-প্রক্রিয়ায় ভারসাম্য আনা, এবং আরও ন্যায্য ও যোগ্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা গড়ে তোলা এই মেলার লক্ষ্য। ফুচিয়ান প্রদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কমিটির সম্পাদক ইউ ওয়েই কুও বলেন, 'একুশ শতকের সামুদ্রিক রেশমপথের কেন্দ্রীয় এলাকা হিসেবে, ফুচিয়ান অব্যাহতভাবে সংশ্লিষ্ট দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করতে থাককে এবং 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের জন্য ইতিবাচক অবদান রাখার চেষ্টা করে যাবে।"

ইউ ওয়েই কুও বলেন, সিয়ামেনে আয়োজিত মেলাটির জানালা হিসেবে ফুচিয়ান প্রদেশ আরো উচ্চপর্যায়ের উন্মুক্ত অর্থনীতি উন্নয়ন এবং বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ নীতির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করবে।

মেলাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল, পারস্পরিক বিনিয়োগ বাড়ানো। মেলাটি আয়োজনের সময়ে ২০১৮ সালের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ফোরাম আয়োজিত হয়। চীনা উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আলোচনার উপপ্রতিনিধি ওয়াং শৌ ওয়েন বলেন, চীনের বিনিয়োগ খাতের উন্নয়ন শুধু যে চীনের অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর, তা নয়; বরং বিশ্বের অর্থনীতি উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "বর্তমানে বিশ্বে একপক্ষবাদ এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সংরক্ষণবাদ প্রচারিত হচ্ছে। এটি বিশ্বের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। চীন অর্থনীতির বিশ্বায়ন এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্য উদারীকরণের দৃঢ় প্রবক্তা ও অনুশীলনকারী। 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দিয়ে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশে বিনিয়োগ করার এবং পারস্পরিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে উত্সাহ দেওয়া উচিত।"

পারস্পরিক বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কার্যকর যোগাযোগ। আফ্রিকায় চীনের শান্তি, ঐক্য ও ত্বরান্বিত পরিষদের চেয়ারম্যান শেন স্যিয়ং শেং বরারবই প্রবাসী চীনাদের জন্য সেতুর ভূমিকা পালন করে থাকে। শে স্যিয়ং শেন মনে করেন, বর্তমান আফ্রিকায় ১০ লাখেরও বেশি চীনা প্রবাসী রয়েছে। তাঁদের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সম্পর্ক ও বাজারে অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আফ্রিকার বিশেষ পরিবেশ ও প্রকৃতি রয়েছে। আফ্রিকায় চীনা প্রবাসীদেরকে স্থানীয় বিনিয়োগ করতে উত্সাহ দেওয়া উচিত।

চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি গ্রহণের শুরুর দিকে বিদেশে চীনা প্রবাসীরা বিনিয়োগ শুরু করেন। সিয়ামেন হল সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতিতে প্রথম দফা বিশেষ উন্মুক্ত শহর ও সামুদ্রিক রেশমপথের গুরুত্বপূর্ণ শহর। অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও সহযোগিতায় সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে এখানে। 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণের জন্য এতে আরও বেশি কল্যাণ সৃষ্টি হবে।

ফিলিপিন্সে সিয়ানমেন প্রবাসী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান চৌ জং দিয়ান জানান, তাঁরা আর্থ-বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ও পর্যটনের ক্ষেত্রে ফিলিপিন্সের বিভিন্ন শহর ও সিয়ামেনের শহরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ জোরদার করার চেষ্টা করছেন। এ সম্পর্কে চৌ জং দিয়ান বলেন, "সিয়ামেনের ছেন সিয়া কেং তহবিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের চীনে এসে চীনা ভাষা শেখার ক্ষেত্রে সহায়তা করে আসছে। তহবিলটি সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়, প্রবাসী চীনা বিশ্ববিদ্যালয় ও জিমেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচারসভার আয়োজন করে থাকে। শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সেতু গড়ে তোলার কাজ করছে এই তহবিল।"

চৌ জং দিয়ান বলেন, চীনা প্রবাসীরা সেতুর ভূমিকা পালন করছে। চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালুর আগে চীনা প্রবাসীরা বিশ্বের কাছে চীনের পরিচয় তুলে ধরতেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন ভালো ভালো ধারণা ও জিনিস চীনে নিয়ে আসতেন। বর্তমানেও তাঁরা চীনের বিভিন্ন ধারণা ও জিনিসের সঙ্গে বিশ্বের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন।

উল্লেখ্য, আসিয়ানের দশটি সদস্যরাষ্ট্রসহ 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট ২০টিরও বেশি দেশ এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040