চীনের আন হুই প্রদেশের ফেং ইয়াং জেলার 'সিয়াও কাং' গ্রামটি দেশের গ্রামীণ ভূমি সংস্কার-কার্যক্রমের প্রতীক। ১৯৭৮ সালের নভেম্বরে 'সিয়াও কাং' গ্রামের ১৮ জন কৃষক নির্দিষ্ট দলিলে লাল কালিতে আঙুলের ছাপ দিয়ে গ্রামীণ জমির সংস্কার-কার্যক্রমের সূচনা করেছিলেন। এভাবেই চীনের কৃষিজমি কৃষকের হাতে ফিরে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১৯৭৮ সালে গোটা চীনে ক্ষুধা ছিল প্রকট। এমনি এক প্রেক্ষাপটে সিয়াও কাং গ্রামের কৃষক ইয়ান হুং ছাংসহ ১৮ জন কৃষক যৌথভাবে নির্ধারিত দলিলে আঙুলের ছাপ দিয়ে কৃষিজমির ওপর নিজেদের অধিকার লাভ করেন। পরে, ১৯৮২ সালে চীনে কৃষিজমিসংক্রান্ত ১ নম্বর দলিল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণীত হয়। এতে কৃষিজমির ওপর কৃষকের অধিকার নিশ্চিত করা হয়। ফলে চীনে শস্যের উত্পাদন বেড়ে যায় এবং 'সিয়াও কাং' গ্রামের মতো বহু গ্রাম থেকে ক্ষুধা চিরতরে বিদায় নেয়।
জমির ওপর কৃষকদের অধিকার আরও সুনিশ্চিত করতে ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার আরেকটি দলিল প্রকাশ করে। দলিলে বলা হয়, ৫ বছরের মধ্যে কৃষকের জমি লিজ নেওয়ার অধিকারসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সমস্যার সমাধান করা হবে। এই নয়া আইনের অধীনেই কৃষক ইয়ান চিন ছাং ও তার পরিবার ২.৩ হেক্টর জমি ব্যবহারের অধিকারসম্বলিত কাগজ হাতে পেয়েছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
"ব্যবহারের অধিকার নিশ্চিত না-হওয়ার আগ পর্যন্ত একজন কৃষককে চিন্তায় থাকতে হয়। জমি হচ্ছে কৃষকের প্রাণ। জমি ছাড়া কৃষক কিভাবে শস্য উত্পাদন করবে? এখন, ব্যবহারের অধিকার সুনিশ্চিত হওয়ার পর, কৃষকরা নিজের জমিতে বিভিন্ন রকমের শস্য চাষ করতে পারছেন। বিশেষ করে, কৃষিজমির দ্বিতীয় দফার লিজের মেয়াদ শেষ হলে, মেয়াদ আরও ৩০ বছর বাড়ানোর কথা চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র ঊনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসে উল্লেখ করা হয়। এটি কৃষকের জন্য অত্যন্ত ভাল খবর।"
'সিয়াও কাং' গ্রামের এক হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৬০ শতাংশ জমি উত্পাদন-বিনিময় চুক্তির আওতায় চাষ হচ্ছে। এই গ্রামের প্রধান লি চিন চু বলেন, গ্রামের মৌলিক শিল্প হচ্ছে আধুনিক কৃষি। তিনি বলেন,
"একদিকে, আধুনিক কৃষিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। অন্যদিকে, যারা কৃষিকাজে যোগ দিতে চান না, তাদেরকে মুক্তি দিতে পারে। তারা অন্য কাজ করতে পারেন। কে কৃষি জমিতে চাষ করতে চান এবং কিভাবে চান—এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া এখন বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। যেমন, পরিবারের অধীনে কতটুকু কৃষিজমি আছে, তা আমি জানি। কিন্তু আমার সন্তানই হয়তো সে খবর রাখে না। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত যারা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের গ্রামাঞ্চলে কৃষিজমিতে চাষ করার সম্ভাবনা খুবই কম। সুতরাং, আমাদের কাজে পেশাদার শক্তি প্রয়োজন।"
তিনি বলেন, গত বছর চীনের আধুনিক কৃষির নেতৃস্থানীয় গোষ্ঠী—হেই লুং চিয়াংয়ের 'পেই তা হুয়াং'-এর সঙ্গে সহযোগিতা চালিয়েছে 'সিয়াও কাং' গ্রাম। এবারের সহযোগিতার মাধ্যমে এক নতুন আধুনিক কৃষি উন্নয়ন-পথ আবিষ্কার করেছে 'সিয়াও কাং' গ্রামটি। এই পথে গ্রামটি আরও উন্নত হবে বলে আশা করা যায়। (ওয়াং হাইমান/আলিম)