২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়: বিচার বিভাগের ইতিহাসে মাইলফলক
  2018-10-14 18:55:42  cri
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে চালানো হয় ভয়বাহ গ্রেনেড হামলা। হামলা থেকে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী। সে সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি-জামাত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে হামলাটি হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। হামলার পরপর মামলা হলেও নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে কয়েক দফা তদন্তের পর দীর্ঘ ১৪ বছরের আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত ১০ অক্টোবর ঘোষিত হয়েছে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়।

রায়ে নৃশংস এ হামলার জন্য তৎকালীন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও উপমন্ত্রী আবুদস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যদণ্ড হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক সংসদসদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ডিউকসহ ১১ জনের কারাদণ্ড হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্যরা হলেন, হুজি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম, শেখ আব্দুস সালাম, আব্দুল মাজেদ, আব্দুল মালেক, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিব উল্লাহ, মাওলানা আবু সাঈদ, আবুল কালাম আজাদ, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ, রফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হানিফ।

রায়ের পর্যবেক্ষণে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১'র বিচার শাহেদ নূর উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ২১ আগস্টের নৃশংস ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। একটি রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা কোনো উপায় হতে পারে না। এর মাধ্যমে ৭৫'র ১৫ আগস্টের মতো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল বলে। এর রায়ের ফলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন বিচারক।

মামলার ৫২ আসামীর মধ্যে জামাত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলমের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ জন কারাবন্দি রয়েছেন। মামলার প্রধান আসামী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পলাতক রয়েছেন ১৮ আসামী। রায়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। পলাতকদের মধ্যে ৯ জন যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। ৭ জনের অবস্থান সম্পর্কে জানে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষণার পর স্বস্তি প্রকাশ করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। একে দেশের বিচারবিভাগের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রধান আসামী তারেক রহমানের সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় তারা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। তারেক রহমানসহ যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তিন জনের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করা হবে বলে জানান আইনমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও একই অভিমত ব্যক্ত করেন।

অন্যদিকে রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তারা মনে করেন এ মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেওয়ার মতো কোনো প্রমাণ রাষ্ট্রপক্ষ উপস্থাপন করতে পারেনি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রায়কে ফরমায়েসি বলে অভিহিত করেন। এ রায়ে দণ্ডিত হলেও তাদের নেতা তারেক রহমান পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নানামুখী পরিবর্তনের সূচনা করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম মনে করেন তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় তাকে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। তবে অন্য আইনজ্ঞ শাহদীন মালিক মনে করেন এতে যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়াও সহজ হতে পারে।

২১ আগস্ট হামলার রায়কে রাজনৈতিক মোড় পরিবর্তন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। রায়ে বিএনপি কিছুটা বেকায়দায় পড়ে গেল বলে মনে করেন তিনি। এতে বিএনপির সামনে এখন বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত না হয়ে কোনো উপায় নেই বলে মনে করেন তিনি। আর এ রায় আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে প্রচারে কিছুটা বাড়তি সুবিধা দেবে।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040