বাংলাদেশের চামড়া শিল্প; বিশাল সম্ভাবনার ক্ষেত্র
  2018-10-13 17:25:05  cri

চামড়া শিল্প থেকে বাংলাদেশের আয় কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ১৮ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম। যদিও গত বছর এই সময়ে আয় ছিল অনেক বেশি। গেল অর্থবছরের (জুলাই-আগস্টে) এ খাতে আয় ছিল ২৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার। তার মানে এই খাতটির আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে ২৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইপিবির তথ্য অনুসারে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের (জুলাই-আগস্ট) প্রথম দুই মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৬৭ লাখ ডলার।

ইপিবির সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত চামড়া, চামড়ার তৈরি জুতা বা পাদুকা এবং চামড়াজাত পণ্য যেমন- ব্যাগ, জ্যাকেট, হাতমোজা, ওয়ালেট, বেল্ট, মানিব্যাগ ইত্যাদি রফতানি হয়। এ তিন উপখাতের সব কটিতেই আয় কমেছে। এর মধ্যে প্রক্রিয়াজাত চামড়ায় ৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ২ কোটি ৪৯ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭.৪৯ শতাংশ কম। একইসঙ্গে এ আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়েও ৩২.৪২ শতাংশ কম। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আয় ছিল ৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ কোটি ৬৫ লাখ 'পিস' কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়৷ এর মধ্যে ছাগলের চামড়া ১ কোটি, গরু ৫০ লাখ, ভেড়া ও মহিষ মিলে ১৫ লাখ পিস৷ অর্থাৎ সব মিলিয়ে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়৷ আর এই চামড়ার প্রায় অর্ধেকই পাওয়া যায় কোরবানির ঈদের সময়৷

বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন বর্গফুট ফিনিশড লেদার উৎপাদন হয়, যার বেশির ভাগটাই রপ্তানি করা হয়৷ ২০১৪ সালে যেখানে ২৮০ মিলিয়ন বর্গফুট ফিনিশড লেদার উৎপাদিত হয়েছে, সেখানে রপ্তানি হয়েছে ২৬০ মিলিয়ন বর্গফুট৷

চামড়া খাতের রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে এই খাতের কমপ্লায়েন্সের অভাবকেই দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দুই দশক ধরে ক্রমাগত সময় বাড়ানোর পরও ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সরানো হচ্ছিল না। আদালতের নির্দেশে ২০১৭ সালের এপ্রিলে হাজারীবাগের ২২২টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর এক বছরে সাভারের চামড়া পল্লীতে ১১৫টি কারখানা স্থানান্তর করা হলেও সবকটি এখনো পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারেনি।

ট্যানারি মালিকরা বলছেন, ২ বছরেও সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে প্রত্যাশা অনুযায়ী সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেনি বিসিক। সেই সঙ্গে দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ। ফলে বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কায় তারা।

চাহিদা অনুযায়ী চামড়া শিল্পকে আধুনিকায়ন না করলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সমস্যা সমাধানে মালিক ও সরকার- দু'পক্ষকেই সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

মূলধনের ঘাটতি কমাতে সাভারে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণে ঋণের ৬৩৯ কোটি টাকা মওকুফ করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্রের কাছে হেরেই পাট শিল্পের ঐতিহ্য হারায় বাংলাদেশ। লোকসানের মুখে একে একে সব সরকারি পাট কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বৈদেশিক মুদ্রা হারায় বাংলাদেশ। এখনও এই প্রতিকূল পরিবেশ কাটিয়ে ওঠা যায়নি। এখন আবার নতুন করে বিদেশিদে হাতে তুলে দিতে চামড়া শিল্প নিয়ে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। গত পাঁচ বছরেই দেশে চামড়ার দাম কমেছে অর্ধেক। অথচ চামড়া এবং চামড়াজাত সব পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। এই ষড়যন্ত্রের সিন্ডিকেট ভাঙ্গার জন্য সরকারকেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় সচেতন মহল।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040